পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ।পহেলা বৈশাখ অনুচ্ছেদ for class 6,7,8,9,10

প্রিয় পাঠক আমরা দুটো অনুচ্ছেদ দিলাম যেটা ভালো সেটা ব্যবহার করতে পারেন।

পহেলা বৈশাখ

পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। এটি বাঙালি জাতির একটি প্রধান উৎসব। প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল দিনটি পালন করা হয়। এই দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশে নানা আয়োজন হয়। শহর হোক কিংবা গ্রাম, সর্বত্রই উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পুরোনো বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে নতুন বছরের আশায় সবাই মেতে ওঠে আনন্দ-উৎসবে। এই দিনটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সম্প্রীতির প্রতীক।

পহেলা বৈশাখের বিশেষ আকর্ষণ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত হয়। এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে হাজারো মানুষ। তারা নানা ধরনের মুখোশ পরে, বিশাল আকারের বিভিন্ন প্রতীক বহন করে, আর বর্ণিল পোশাকে সাজে। ইউনেস্কো এই শোভাযাত্রাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আমাদের জন্য বড় গর্বের বিষয়। সকালে রমনার বটমূলে ছায়ানটের শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানের মাধ্যমে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয়।


এই দিনে ব্যবসায়ীরাও বিশেষভাবে হালখাতা পালন করেন। তারা পুরোনো হিসাব শেষ করে নতুন খাতা খোলেন। গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। শহর ও গ্রামে বসে বৈশাখী মেলা। মেলায় নানা পসরা সাজানো থাকে, যেমন—মাটির হাঁড়ি-পাতিল, কাঠের খেলনা, মিষ্টি, পিঠাপুলি ইত্যাদি। এছাড়া নাগরদোলা, পুতুলনাচ, সাপ খেলা, এবং জাদু প্রদর্শনী ছোট-বড় সবার আনন্দের খোরাক হয়।

পহেলা বৈশাখের খাবারের তালিকাও বেশ সমৃদ্ধ। এই দিনে অনেকেই সকালে পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, মরিচ, পেঁয়াজ আর লেবু দিয়ে খেয়ে দিন শুরু করেন। এটি পহেলা বৈশাখের বিশেষ খাবার হিসেবে পরিচিত। সবাই নতুন পোশাক পরে উৎসবে অংশ নেয়। ছেলেরা পরে পাঞ্জাবি-পাজামা আর মেয়েরা পরে শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ। অনেক মেয়ে খোঁপায় ফুল গুঁজে, আর হাতে পরে রঙিন চুড়ি। শিশুরাও নতুন জামা পরে আনন্দে মেতে ওঠে।

পহেলা বৈশাখ আমাদের শিক্ষা দেয় সম্প্রীতি, শান্তি ও আনন্দের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতে। এই দিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়, যা আমাদের সামাজিক ঐক্যের সুন্দর উদাহরণ। পহেলা বৈশাখ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের জাতীয় জীবনের অংশ। এই দিন আমাদের শেকড়ের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় এবং আমাদের ঐতিহ্যকে নতুন করে চিনতে শেখায়। আমরা আশা করি, প্রতিটি পহেলা বৈশাখ আমাদের জীবনে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।

অনুচ্ছেদ-২

পহেলা বৈশাখ

পহেলা বৈশাখ বাঙালি জাতির জীবনে এক গভীর অনুভূতির দিন। এটি বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, যা আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। বৈশাখের প্রথম দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের পাতা বদলানোর দিন নয়, বরং বাঙালির আত্মপরিচয়, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক গৌরবময় প্রকাশ। পহেলা বৈশাখের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালির শত বছরের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অমূল্য সম্পদ। নতুন বছরের প্রথম দিনে মানুষ পুরোনো সব দুঃখ, গ্লানি ও জরা ভুলে ফেলে, নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে আগামীর পথচলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এই দিনে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে মিলিত হয়, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

পহেলা বৈশাখের মূল আকর্ষণ হচ্ছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে বর্ণিল মুখোশ, বিশালাকার পশু-পাখির প্রতীক ও লোকজ শিল্পের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এই শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে, যা হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। এছাড়া সকাল বেলায় রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে নববর্ষের সূচনা ঘটে। ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটির মাধ্যমে বাঙালিরা বৈশাখকে বরণ করে নেয়।

পহেলা বৈশাখের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো হালখাতা। এটি মূলত ব্যবসায়ীদের পুরোনো হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে নতুন খাতা খোলার রীতি। ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদের মিষ্টিমুখ করিয়ে নতুন লেনদেনের সূচনা করেন। এভাবে অর্থনীতিতেও নববর্ষের এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তাছাড়া গ্রামীণ এলাকায় মেলা বসে, যেখানে হস্তশিল্প, খেলনা, খাবারসহ নানা পসরা সাজানো থাকে। নাগরদোলা, পুতুলনাচ, জাদু দেখানো, বায়স্কোপ ইত্যাদি শিশুসহ সব বয়সের মানুষের কাছে ভীষণ আনন্দের।

পহেলা বৈশাখের খাবারের তালিকাও বেশ বৈচিত্র্যময়। পান্তা ভাত, ইলিশ মাছ, লাল শাক, আলুভর্তা, ও নানা ধরনের ভর্তা ও ভাজি দিয়ে বৈশাখের সকাল শুরু হয়। এই দিনে নতুন পোশাক পরার প্রচলনও রয়েছে। ছেলেরা সাধারণত পাঞ্জাবি-পাজামা পরে, আর মেয়েরা পরে শাড়ি, যার সঙ্গে ফুলের মালা, চুড়ি ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী গয়না যুক্ত হয়। অনেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সময় মুখে রঙ মাখিয়ে নেয়, যা বৈশাখের আনন্দকে আরও রঙিন করে তোলে।

পহেলা বৈশাখ কেবল একটি দিন নয়, এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনটি বাঙালিকে তাদের শেকড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, তাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়। বৈশাখের এই আনন্দঘন মুহূর্ত আমাদের জীবনে সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি এবং সাম্যবোধের বার্তা পৌঁছে দেয়। তাই, পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবময় অধ্যায়, যা যুগ যুগ ধরে বাঙালির মনে প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

Post a Comment