ওয়াকফ (আরবি: وقف) হলো ইসলামী শরিয়তের একটি দান বা দাতব্য পদ্ধতি, যেখানে কোনো ব্যক্তি তার সম্পদ বা সম্পত্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। এই সম্পদ বা সম্পত্তি আর ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে না; এটি ধর্মীয়, সামাজিক বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য স্থায়ীভাবে নির্ধারিত হয়।
ওয়াকফের মূল বৈশিষ্ট্য হলো:
- স্থায়িত্ব: একবার ওয়াকফ করলে তা চিরস্থায়ী হয়, ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।
- উপকারভোগী নির্ধারণ: সাধারণত গরিব-দুঃখী, এতিম, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল ইত্যাদির জন্য ওয়াকফ করা হয়।
- ধর্মীয় উদ্দেশ্য: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়।
- উৎপাদনশীল সম্পত্তি: অনেক সময় জমি, ভবন, বা ব্যবসা থেকে আয়ের মাধ্যমে জনসেবামূলক কাজে ব্যয় হয়।
উদাহরণ: কেউ যদি একটি জমি মসজিদের জন্য ওয়াকফ করে দেন, তবে সে জমির মালিকানা তার থাকে না, বরং তা মসজিদের কাজে লাগানো হয় এবং তার সুফল সমাজ পায়।
ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রির নিয়ম
ইসলামী শরিয়তে ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রির বিষয়টি বেশ স্পষ্টভাবে নির্ধারিত। সাধারণভাবে বলতে গেলে, ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, কারণ ওয়াকফ হচ্ছে চিরস্থায়ী দান। যখন কোনো সম্পত্তি ওয়াকফ হয়ে যায়, তখন সেটি আল্লাহর মালিকানায় চলে যায় এবং মানুষের মালিকানা থেকে বেরিয়ে যায়।
তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্তে বা বিশেষ ক্ষেত্রে বিক্রির অনুমতি আছে। বিস্তারিতভাবে বলি:
✅ বিক্রি করা যাবে — কোন কোন ক্ষেত্রে:
১. ওয়াকফ সম্পত্তি যদি অকেজো বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায়:
যেমন, কোনো জমি যদি এমন অবস্থায় পৌঁছে যায় যেখানে তার থেকে আর কোনো উপকার পাওয়া যাচ্ছে না, বা সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে, তখন বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে নতুনভাবে ওয়াকফের উদ্দেশ্যে সম্পদ ক্রয় করা যাবে।
২. ওয়াকফ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ অসম্ভব হলে:
যদি সম্পত্তির মেরামত বা সংরক্ষণ এত ব্যয়বহুল হয় যে ওয়াকফের আয় দিয়ে তা সম্ভব না হয়, তখন বিক্রির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
৩. ওয়াকফ সম্পত্তি যদি ওয়াকফের উদ্দেশ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করে:
যেমন, রাস্তা সম্প্রসারণ বা সরকারের জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে ওয়াকফ সম্পত্তি পড়ে গেলে কখনও কখনও বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়, তবে এর জন্য যথাযথ শরঈ এবং আইনগত অনুমতি নিতে হয়।
🚫 সাধারণভাবে বিক্রির অনুমতি নেই:
- ব্যক্তিগত লাভের জন্য
- ওয়াকফ উদ্দেশ্যের বাইরে অন্য কাজে
- কোনো ব্যক্তির উত্তরাধিকার হিসাবে বিক্রি করা যাবে না।
🧾 বাংলাদেশ প্রসঙ্গে (যদি আপনার আগ্রহ থাকে):
বাংলাদেশে "ওয়াকফ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২" অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের জন্য ওয়াকফ প্রশাসকের পূর্বানুমতি প্রয়োজন। অনুমতি ছাড়া বিক্রি করলে তা আইনত অবৈধ বলে গণ্য হয়।