গর্ভাবস্থা নারীর জীবনের এক বিশেষ ও সংবেদনশীল সময়। এ সময় শরীরে নানা হরমোন পরিবর্তন ঘটে, যা মায়ের শারীরিক ও মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে। সঠিক পুষ্টি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ও হালকা ব্যায়াম গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখা মায়ের এবং গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ধূমপান, অ্যালকোহল এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করা উচিত। এই সময় পরিবারের সহায়তা এবং ভালোবাসা মায়ের জন্য অনেক শক্তির উৎস। সচেতন থাকলে গর্ভাবস্থা হতে পারে আনন্দময়।প্রথমে একটা কথা পরিষ্কার করে নিই — গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুবই জরুরি, তবে অতিরিক্ত শুয়ে থাকা বা একেবারে নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন কিছু ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বেশি শোয়া হলে কী হতে পারে?
১. ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে
বেশি শোয়া মানে শরীরের ক্যালরি খরচ কমে যায়। এতে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার অতিরিক্ত ওজন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে (Blood circulation problem)
দীর্ঘক্ষণ একই ভঙ্গিতে শোয়া থাকলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে, পায়ের দিকে রক্ত জমে যেতে পারে এবং এর ফলে deep vein thrombosis (DVT) বা রক্ত জমাট বাধার ঝুঁকি বাড়ে।
৩.পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে (Muscle weakness)
নিয়মিত নড়াচড়া না করলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়। জন্মের সময় প্রসবের সময় পেশি দুর্বলতা জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. পিঠে ও কোমরে ব্যথা
অনেকক্ষণ একভাবে শুয়ে থাকলে পিঠে ও কোমরে ব্যথা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যাদের আগে থেকে এই ধরনের ব্যথা থাকে।
৫. মুড ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
অনেকক্ষণ শুয়ে থাকলে অলসতা ও বিষণ্নতার অনুভূতি আসতে পারে। গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়িয়ে দিতে পারে।
৬. জীবনশৈলীর অসন্তুলন
অত্যধিক শোয়া মানে হয়তো সুষম খাদ্যাভ্যাস, হালকা ব্যায়াম বা সামাজিক সংযোগ থেকেও দূরে থাকা। এগুলো সবই সুস্থ গর্ভাবস্থার জন্য প্রয়োজন।
কখন ডাক্তার বিশ্রামের পরামর্শ দেন?
- এটা ঠিক যে, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ডাক্তার অতিরিক্ত বিশ্রামের পরামর্শ দিতে পারেন, যেমন:
- প্রি-টার্ম লেবার বা সময়ের আগেই প্রসবের ঝুঁকি থাকলে
- প্ল্যাসেন্টা প্রিভিয়া থাকলে
- গর্ভফুল (placenta) থেকে রক্তপাত হলে
- উচ্চ রক্তচাপ বা প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া হলে
এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তার যা বলবেন, তা মানা উচিত।
পরামর্শ
✅ যদি স্বাস্থ্যগত জটিলতা না থাকে, তবে হালকা হাঁটাচলা বা হালকা ব্যায়াম যেমন:
- গর্ভাবস্থার উপযোগী যোগাসন
- হালকা হাঁটা
- বুকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
✅ লম্বা সময় শুয়ে থাকলে মাঝে মাঝে পাশ বদলান এবং হালকা নড়াচড়া করুন, যাতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।
✅ যদি কোনো অস্বস্তি, ফুলে যাওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি, বা পেশীতে টান পড়ার মতো কিছু অনুভব করেন, অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
- বিশেষত কাঁচা বা আধা-পাকা পেপেতে থাকে "ল্যাটেক্স" নামের এক ধরনের পদার্থ, যা জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ায়।
- পাকা পেপে খাওয়া যায়, তবে পরিমাণে সীমিত, আর যাদের গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
- আনারসে ব্রোমেলিন নামের এনজাইম থাকে, যা জরায়ুর মুখ নরম করতে পারে এবং অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে সংকোচন সৃষ্টি হতে পারে।
- যদিও মাঝেমধ্যে পরিমিত খাওয়া গেলে বড় সমস্যা হয় না, তবে গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে একদম এড়িয়ে চলাই ভালো।
- গরম প্রকৃতির ফল। অতিরিক্ত খেলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- লিচুতে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে, যা গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- ডুরিয়ান ফল উচ্চ ক্যালোরি ও শর্করার উৎস। অতিরিক্ত খেলে গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকে।
- এছাড়া, ডুরিয়ান গরম প্রকৃতির হওয়ায় শরীরের উষ্ণতা বাড়াতে পারে।
- আঙুরে থাকে রেসভেরাট্রল, যা অতিরিক্ত খেলে হরমোনের ভারসাম্যে সমস্যা করতে পারে।
- বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস বা হরমোনজনিত সমস্যা আছে, তাদের জন্য বেশি আঙুর খাওয়া ঠিক নয়।
- অধিক পরিমাণে ফল খাওয়া এড়িয়ে চলুন। ফল যতই স্বাস্থ্যকর হোক, অতিরিক্ত খেলে চিনির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
- ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া জরুরি, যেন কীটনাশক বা জীবাণু না থাকে।
- ফলের জুসও সতর্কতার সাথে পান করুন। বাজারের প্যাকেটজাত বা অতিরিক্ত মিষ্টি জুস এড়িয়ে চলাই ভালো।