বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা প্রতিবেদন

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলা

বাংলা নববর্ষ বাঙালির প্রাণের উৎসব। এই দিনটিকে কেন্দ্র করে দেশের শহর-বন্দর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। আমাদের গ্রামে এই উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল এক বর্ণাঢ্য গ্রামীণ মেলার। মেলা ঘিরে পুরো গ্রাম যেন উৎসবের রঙে রাঙিয়ে উঠেছিল।

মেলার আয়োজন ছিল গ্রামের স্কুল মাঠে। সকাল থেকেই গ্রামজুড়ে ছিল ব্যতিক্রমী উৎসাহ-উদ্দীপনা। খোকা-খুকিদের হাসি, নারীদের রঙিন শাড়ি আর পুরুষদের পাঞ্জাবিতে মাঠ যেন ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছিল। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের দোকান, গ্রামীণ খেলাধুলা, স্থানীয় খাদ্যের পসরা, আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

হস্তশিল্পের দোকানগুলো ছিল নজরকাড়া। বাঁশ, কাঠ, মাটি ও কাপড় দিয়ে তৈরি করা নানান জিনিস যেমন—মাটির হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশের টুকরি, কাঠের খেলনা, নকশি করা পাখা, আর সুন্দর জামদানি কাপড়—সবাইকে আকৃষ্ট করছিল। স্থানীয় কারিগররা যেমন দক্ষতায় এসব তৈরি করেছেন, তেমনি ক্রেতারাও আগ্রহভরে কিনছিলেন।


মেলার আরেকটি বড় আকর্ষণ ছিল গ্রামীণ খেলাধুলা। লাঠি খেলা, দড়ি টানাটানি, হাঁড়িভাঙা আর কাবাডি খেলার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে গ্রামের ছোট-বড় সবাই ভিড় করেছিল। দর্শকদের করতালিতে খেলোয়াড়দের মনোবল যেন আরও বেড়ে যাচ্ছিল। খেলাগুলোর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্যের ছোঁয়া ফিরে এলো।

মেলা মানেই হরেক রকমের খাবার। পিঠাপুলি, মুড়ি-মুড়কী, ঝালভাজা, পাকা আম, তালের পায়েস—এসব মুখরোচক খাবার নিয়ে বসেছিল গ্রামীণ খাদ্যের দোকানগুলো। খুদে বিক্রেতাদের ডাকাডাকিতে চারপাশ মুখরিত হয়ে উঠেছিল। খাওয়া-দাওয়ার আনন্দে ভরপুর ছিল মেলার প্রতিটি প্রান্ত।

দিনের শেষ দিকে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্থানীয় শিল্পীরা লোকসংগীত, পালাগান, ও নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মন মাতিয়ে তুলেছিলেন। শিশুদের দলীয় নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি মেলায় বাড়তি আনন্দের রঙ যোগ করেছিল। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বিরা সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান এবং এই ঐতিহ্যবাহী মেলা আরও বড় পরিসরে আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এই গ্রামীণ মেলা শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বরং আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। গ্রামের মানুষদের মাঝে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি, ঐক্য গড়ে তোলা, এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য তুলে ধরার এটি একটি অসাধারণ মাধ্যম। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত এই মেলা নিঃসন্দেহে সকলের হৃদয়ে আনন্দের স্পন্দন জাগিয়েছে।

Post a Comment