পাতলা পায়খানা বলতে কী বোঝায়:
পাতলা পায়খানা (যাকে ডায়রিয়া বলে) হল যখন কারও পায়খানা সাধারণের তুলনায় বেশি পানির মত, পাতলা বা ঢিলে হয়ে যায় এবং দিনে ৩ বার বা তার বেশি হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নবজাতক ও ৫ বছরের নিচে শিশুদের মধ্যে এটা খুব সাধারণ — তবে গুরুতর হয়ে গেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, যাকে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) বলে।
পাতলা পায়খানার লক্ষণ:
- পায়খানার সাথে অতিরিক্ত পানি বা শ্লেষ্মা থাকা
- পায়খানার গন্ধ বা রং পরিবর্তন হওয়া
- দিনে ৩ বার বা তার বেশি পায়খানা হওয়া
- অনেক সময় বমি বা জ্বরও থাকতে পারে
- শিশুর ক্ষেত্রে: কান্নাকাটি, খাওয়াতে অনীহা, দুর্বলতা
কেন হয়?
- ভাইরাস (যেমন: রোটাভাইরাস)
- ব্যাকটেরিয়া (যেমন: ই-কলাই, স্যালমোনেলা)
- খাবার বা পানির মাধ্যমে জীবাণু ঢুকে পড়া
- অ্যালার্জি বা খাবার হজমে সমস্যা
- অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কেন গুরুত্ব দিতে হয়?
- শরীরের পানি ও লবণ দ্রুত কমে যেতে পারে, পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- শিশুদের ক্ষেত্রে, দ্রুত চিকিৎসা না করলে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৪ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
৪ মাসের শিশু আরও ছোট এবং তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্কতা প্রয়োজন। এই বয়সে শিশুর ডায়রিয়া (পাতলা পায়খানা) হলে করণীয়:
করণীয়:
বুকের দুধ চালিয়ে যান (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ):
- যদি শিশু শুধুমাত্র বুকের দুধ খায় (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিডিং), তবে দুধ বন্ধ করবেন না।
- বেশি করে দুধ খাওয়ান, যাতে শরীরের পানির ঘাটতি না হয়।
ওআরএস (ORS) দেওয়া:
- ৪ মাসের শিশুর ক্ষেত্রে ওআরএস কখন দেবেন, কতটুকু দেবেন — এটা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিতে হবে।
- তবে পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখলে দেরি না করে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান।
পর্যবেক্ষণ করুন পানিশূন্যতার লক্ষণ:
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- চোখের নিচে গর্ত হয়ে যাওয়া
- কান্নার সময় চোখের পানি না থাকা
- শিশুর চামড়া টানলে ধীরে ফিরে আসা
- প্রস্রাব কম হওয়া বা একদম না হওয়া
- শিশু দুর্বল বা অস্বাভাবিক চুপচাপ থাকলে
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন:
- শিশুর খেলার জিনিসপত্র, মায়ের হাত ও কাপড় সব সময় পরিষ্কার রাখুন।
- যদি ফিডার ব্যবহার করেন, ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করুন। তবে এই বয়সে শুধুমাত্র বুকের দুধই যথেষ্ট।
ঘরোয়া ওষুধ বা খাওয়ার কিছু দেবেন না:
- এই বয়সে কোনও ধরনের ঘরোয়া ওষুধ, ভেষজ বা ফার্মেসির ওষুধ নিজের থেকে দেবেন না।
- সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডাক্তারের পরামর্শ:
- শিশু খুব ছোট, তাই পাতলা পায়খানা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- চিকিৎসক দেখিয়ে নিলে প্রয়োজনে পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নিশ্চিত করা যাবে (যেমন: ইনফেকশন, অ্যালার্জি, বা অন্য কিছু)।
মনে রাখবেন:
৪ মাসের শিশুর প্রধান খাবার হচ্ছে শুধুই বুকের দুধ। বুকের দুধই অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তবে যদি শিশুর অবস্থা খারাপের দিকে যায়, জ্বর থাকে, বারবার পায়খানা হয় বা পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা যায়, দেরি না করে ডাক্তার দেখানো জরুরি। 🌸
৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়।
৬ মাসের শিশুর পাতলা পায়খানা হলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে, তবে আতঙ্কিত না হয়ে নিচের পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:
করণীয়:
ওরস্যালাইন এন খাওয়ানো:
- শিশুর পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ঠেকাতে ওআরএস খাওয়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- বুকের দুধ খেলে বারবার খাওয়ান। বুকের দুধই সবচেয়ে ভালো।
- যদি বুকের দুধের পাশাপাশি ফর্মুলা খায়, তবে চালিয়ে যান।
পর্যাপ্ত পানি ও তরল:
- ৬ মাস হলে সাধারণত অল্প পরিমাণে পানি দেওয়া যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিন।
- বুকের দুধই প্রধান পানীয় হওয়া উচিত।
খাবারের ক্ষেত্রে:
- যদি কমপ্লিমেন্টারি খাবার শুরু করে থাকে (৬ মাস হলে শুরু হতে পারে), তবে সহজপাচ্য এবং হালকা খাবার দিন।
- দই, খিচুড়ি, কলা — এগুলো উপকারী হতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দিন)।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
- শিশুর হাত, পায়ে, ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখুন।
- ফিডারের বদলে চামচ বা কাপ ব্যবহার করলে ভালো হয়, কারণ ফিডারে জীবাণু বেশি হয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
যদি শিশুর পাতলা পায়খানার সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণ থাকে, দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
- জ্বর
- বমি
- বারবার পায়খানা (প্রতি ঘন্টায় বারবার)
- শিশুর মুখ শুকিয়ে যাওয়া
- প্রস্রাব কম হওয়া বা একদম না হওয়া
শিশুর অতিরিক্ত ক্লান্ত বা দুর্বল লাগা
মনে রাখবেন:
শিশুর ডিহাইড্রেশন হলে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে পারে। তাই প্রধান লক্ষ্য হবে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।