পহেলা বৈশাখ: বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি
পহেলা বৈশাখ
আরিফুল ইসলাম
বছর ঘুরে চলে এলো
পহেলা বৈশাখ,
বাজেরে বাজে দেখো ঐ
ঢোল আর ঢাক।
বৈশাখের আনন্দে ঐ
সাজছে শহর-গ্রাম,
রং তুলি আর হাতের নিপুণ
কারুকাজ আর নাম।
কী সুন্দর নকশা করা
রাস্তা-ঘাটে ঐ,
বৈশাখের ঐ মেলায় যাবো
আয় না চলে সই।
আজকে সবে বৈশাখের ঐ
নতুন জামা পরবো,
বৈশাখের ঐ মেলায় গিয়ে
নাগরদোলায় চড়বো।
পান্তা ইলিশ খাবো কিনে
দারুণ মজা হবে,
আসুক ফিরে বৈশাখ আবার
বছর ঘুরে ভবে।
হেলা বৈশাখ
সৈয়দ ইসমাইল হোসেন জনি
পহেলা বৈশাখ এলো ভাই
নতুন ভোরের বার্তা নিয়ে ,
সকলকে শুভেচ্ছা জানাই
ভালোবাসার আবেগ দিয়ে ।
শুরুর পরে শেষ তো আছে
আবার শেষের পরে শুরু ,
এভাবে বছর যায় আসে
কল্পনায় মন উড়ুউড়ু ।
স্মৃতির পাহাড় জমে থাকে
বছরের সে-ই দোলাচালে ,
জীবনের এ-ই ঘূর্ণিপাকে
বন্দী সবাই স্মৃতির জালে ।
যায়না ভোলা অনেক স্মৃতি
সুখের কিংবা দুঃখের সেটা ,
সৌহার্দ আর সুখের প্রীতি
যার জীবনে ঘটছে যেটা ।
পিছনের স্মৃতি মনে পড়ে
নতুন বছর শুরু হলে ,
মায়া মমতায় পরস্পরে
এমনি ভাবে জীবন চলে ।
অনেক স্মৃতি হারিয়ে থাকে
চলার পথের বারোমাসে ,
জীবন নদীর বাকে বাকে
বছর যায় বছর আসে ।
অশুভ শক্তি দাও হটিয়ে
সবাই ন্যায়ের পথে চলো ,
সুখদুঃখের বহর নিয়ে
নতুন বছর শুরু হলো ।
নিয়তির অমোঘ বিধানে
এভাবে বছর আসে যায় ,
দোলা লাগায় সবার প্রাণে
সাথে অনেক স্বপ্ন হারায় ।
সাজায় সবে জীবনটাকে
শখের বশে আপন মনে ,
এস.আই. জনি স্বপ্ন আঁকে
বৈশাখ মাসের শুভক্ষণে ।
চলার পথে বাধা যাহোক
দোয়া করি সব কেটে যাক ,
সংস্কৃতির ধারক বাহক
বাঙালির পহেলা বৈশাখ ।
পহেলা বৈশাখ
লিটু হালদার
হে বৈশাখ
তুমি অনন্ত কোটি মানুষের অভিলাস
ভোরের আকাশে পাখিদের উল্লাস।
কিশোরীরর মুখের এক খিমচি হাসি
রাখালি সুরে পাগল করা বাঁশি।
দক্ষিণা বাতাসে ভেসে আসা গন্ধ
ধানের দোলায় মিষ্টি ছন্দ
হলুদি রংয়ে ইরি ধানের ক্ষেতে
কৃষকের দল উঠেছে মেতে
কৃষকের বুকে স্বস্তি মাখা নিঃশ্বাস
তুমি বাংলার ঘরে আনন্দের রাস।
তুমি রমনা বটমুলের একমুঠো আনন্দ
মধুর সুরে বেজে উঠা নবীন ছন্দ
তুমি প্রেমিকের চোখে কল্পনার আবেগ
নীলকাশে ছুটে যায় সীমাহীন ভাবাবেগ
তুমি স্নিগ্ধ মেয়ের চোখের কাঁজল
মায়ের শান্তিমাখা স্নেহময়ী শাঁড়ীর আঁচল।
তুমি ভোরের আকাশে সূর্য্যের স্নিগ্ধ হাসি
তুমি বাংলার ঘরে আনন্দ রাশি-রাশি
অতীতের সুখ দুঃখকে ভুলে
নবীনের ছোঁয়া নিয়ে তুমি এলে।
পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা
পহেলা বৈশাখ
আব্দুল্লাহ হক
বৈশাখ এলো মহানন্দে বাংলার ঘরে ঘরে
খুলবে নতুন ভাগ্যখাতা গ্রাম ও শহর জুড়ে,
বিদায় জানায় পুরোনো দিন ভুলতে কষ্ট গাঁথা
গিন্নি রাঁধে পাটের ডগা গিমা শাকের পাতা,
নতুন শাড়ি কাঁচের চুড়ি কৃষানী বৌ সাজে
আলতা ফিতা রঙিন পোশাক শিশু কিশোর মজে,
নগর জীবন ইলিশ পান্তায় অতীত শেকড় খোঁজে
গরুগাড়ি, ঢুলি, পালকি, লোকো গানে ভজে,
মেলা বসে মিষ্টি রসে ভরে সবার মুখ
দোকান থেকে কিনে আনে দুল ও নাকের নোলক,
হাতি ঘোড়া খেলনা মিটাই বাহারি সব খাবার
গ্রাম বাংলায় তিলের তক্তি খইয়ে চলে আহার,
পুরান হিসাব খাতায় মোড়ে হালখাতা দেয় খুলে
খাজনা আদায় জমিদারের পয়লা বৈশাখ এলে,
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বাংলা মাটির সন্তান
পয়লা বৈশাখ সবার উৎসব বাঙালিত্বের প্রাণ,
এমন দিনে চলো মাতি ঐতিহ্য যা আমার
সোনার বাংলায় তোমার আমার গড়ি সুখের সংসার ।
এলো রে পহেলা বৈশাখ
কনক লতা মন্ডল
এলো রে , এলো রে পহেলা বৈশাখ
খুশিতে মাতোয়ারা মন,
বাজারে, বাজারে ঢাক ও কাসর
বাঙালির ঘরে এলো আপনজন।
ভরেছে ভরেছে প্রাণের আনন্দে
সবাই মিলে করে বর্ষ বরণ,
সেজেছে সেজেছে নতুন পোশাকে
মেলেছে রঙিন পাখা সুজন।
বসেছে বসেছে বৈশাখী মেলা
ডুগডুগি আর নাগরদোলা,
কিনেছে গো কিনেছে হাতের সাজে
রেশমি চুরির বাজে আত্মভোলা।
রঙের খেলায় মাতায় বাঙালি
প্রভাত বেলায় পান্তা-ইলিশ,
গাছের ডালে ফুল আর পাখি
নতুন সুখে দেয় যে বসে শিষ।
সবাই মিলে নাচের তালে গানে
বাঙালি জানায় আমন্ত্রণ,
ফুলে ফুলে সাজায় করছে সবাই
রঙের আলপনায় বর্ষ বরণ।
এলো রে
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান
পহেলা বৈশাখ, ১৪২৭, রাত-১ টা।
বৈশাখ এলো আজ এলো নববর্ষ
চারিদিকে চুপচাপ নেই কোন হর্ষ
বিষাদের সুর বাজে চারিদিক নিঃস্ব
করোনার ভয়ে আজ কাঁপে সারা বিশ্ব।
রমনা বটমূলে আজ কোন মেলা নেই
লাল দিঘী চত্বরে আজ বলি খেলা নেই
পান্তা ইলিশ আর বাউলের গান নেই
রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল নেই।
চারিদিকে হৈচৈ, মোয়া নাড়ু খাওয়া নেই
তালপাতার পাখা আর বাঁশিতে সুর নেই
লাল সাদা জামা পরে মাঠে ছুটোছুটি নেই
চ্যানেলে চ্যানেলে আজ অনুষ্ঠান জুটি নেই।
চারিদিক ফাঁকা আজ নেই কোন উৎসব
ঘরে ঘরে চলছে মৃত্যুর মহোৎসব
তবুও এসেছে আজ বৈশাখ হৃদয়ে
সবকিছু ছাপিয়ে বৈশাখ এলো রে।
ধূসর ধুলায় বৈশাখ
মোঃ আবু তাহের মিয়া
গগন থেকে আসে ছুটে
ধূসর ধুলায় বৈশাখ
তপ্ত তনু ভিজে সিক্ত
ভুবনে দূর হয় হা-হুতাশ।
মৃত মৃত্তিকা হয় সজীব
বৈশাখেই হয় বিশ্বাস
উদাস কণ্ঠে সুরের ধ্বনিতে
কৃষক ফেলে সুখের নিঃশ্বাস।
শস্য শূণ্য মাঠে ঘাটে
প্রাণের উচ্ছ্বাসে আসে বৈশাখ
কৃষক মনে আনন্দের সুর
মনে কিছু পাওয়ার আশ্বাস।
দুঃখীর ঘরে তুফান এসে
ঝরো হাওয়ায় দেয় ধাক্কা
ভবিষ্যতের ভাবনার সুফল
কর্মটা হয় টাটকা।
মিলনমেলা শুরু হয় গ্রামে গঞ্জে
কোণায় কোণায় ভরে যায় হাটে
খেলনা,খাবার,মিষ্টির দোকানে
ভরে যায় গ্রামবাংলার ঘাটে ঘাটে।
ইলিশ মাছ পান্তা ভাত
এম এ সাত্তার
বাংলা ১৪৩০ সাল এবার বিদায় হয়ে গেল,
নতুন বছর ১৪৩১ সাল আজ হতে শুরু হলো।
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই সব বন্ধুদের মিলে,
মিলে মিশে সবাই মোরা থাকবো একই দিলে।
পুরাতন বছরটা চলে গেল আমাদের জন্য ভাল,
নতুন বছর সবার জীবনে নতুল আশার আলো।
পহেলা বৈশাখ দিনটি দিয়ে শুরু হলো বছর গননা,
এই ভাবে বছরের ১২ টি মাস সবার আছে জানা।
আবহমান কাল ধরে চলছে দিন মাস গননার পালা,
খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে নববর্ষ বৈশাখ পহেলা।
পহেলা বৈশাখে মহাজনেরা খাতা হাল নাগাদ করত,
উৎসব মুখর পরিবেশে তাদর বাকি টাকা আদায় হতো।
পহেলা বৈশাখ সকাল বেলা ইলিশ মাছ পান্তা ভাত,
সব বাড়ীতে ইলিশ মাছ পান্তা খাইতো বসে এক সাথ।
মাছে ভাতে বাঙালী আজও একথা আছে বাংলাদেশে,
বাঙালীরা সব চেয়ে বেশী কাচা মরিচ পান্তা ভালবাসে।
বৈশাখী এক মনের পাখি
সরদার সাকিব আহমেদ
বৈশাখী এক মনের পাখি
গননা করিয়া চরণ রাখি
যত্নে আদরে রেখেছি ঢাঁকি
এলো আবার এলো বৈশাখী
দিক বে দিকে ছুটে চলি
ক্ষ্যান্ত হয়ে একটু বলি
শান্ত স্বরে দুইটি কলি
শুনাই সোহাগে মুখের বুলি
পুরাতন কে পদেদলি
নতুন বর্ষ বরন করি
জুরাক প্রান নয়নাভিরাম
লন্ডভন্ড তুলকালাম
আসলো নতুন হল প্রমান
পুরাতন সব গত প্রস্থান
হৃদয় দোলে নববর্ষে
শুভ কামনারা আসুক দর্পে
ভাগুক সকল জরা ও জির্নে
ভাসুক সকল আনন্দ হর্সে
আতুর ঘড়ে বঙ্গ নবান
বঙ্গ যে মোর মহাসম্মান
বুলিতে শত শান্তি জড়ান
গুনিয়া এলো নবমেহমান
নব বর্ষ দিল রে জানান
১ লা বৈশাখ হইলো প্রমান
নব উল্লাসে হৃদয় নাচেরে
উম্মোচনে দারুন স্বজোরে
চিৎকার ওঠে প্রানের মোচরে
স্বরন গৌরবে বরণ রচিরে
পার হয়েগেছে দুঃখজ্বালা
বৈশাখী তোর ধরিয়া গলা
সুখ সমৃদ্ধিরে পড়াবো মালা
যম যাতনায় পড়ুক তালা।
"মাছের রাজা ইলিশ"
আমান উদ্দিন
ইলিশ হলো মাছের রাজা
স্বাদে গন্ধে ভরা,
রুপালি ইলিশ মাছ অপূর্ব
দেখতে নয়নহরা।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ
ইলিশ হচ্ছে নাম,
ইলিশের স্বাদ নেওয়া দুষ্কর
খুবই চওড়া দাম।
ইলিশ মাছ খেতে মজা সব
বাঙালিরা জানে,
পহেলা বৈশাখ পালন করতে
পান্তা ইলিশ আনে।
বাঙালি কৃষ্টিতে জড়িয়ে আছে
ইলিশের নাম,
ইলিশকে সুস্বাদু করে সৃষ্টিকর্তা
দিয়েছে ধরাধাম।
ইলিশ মাছ ভাজা খেতে লাগে
খুবই মজা,
যদি হয় পদ্মার ইলিশ টাটকা
আর তাজা।
ইলিশ মাছের ডিম খেলে ভুলা
নাহি যায়,
ইলিশের ডিমের স্বাদ রসনা
বার বার নিতে চায়।
পঁচিশে বৈশাখ
সুজিত শর্মা বিশ্বাস
এখন বোশেখ বাজাবে শাঁখ
কাল পঁচিশের দিনে,
কেমন করে থাকবো ঘরে
তাঁকে স্মরণ বিনে ?
সারা দেশে মায় বিদেশে
করবে তাঁরে স্মরণ,
নানান গানে ছন্দ তানে
করবে তাঁকে বরণ।
নাইকো দেহে সকল গেহে
আজো আছেন বেঁচে,
বাজালে গান জাগেরে প্রাণ
আনন্দেতে নেচে।
বাঙ্গালীর তাজ করবেরে রাজ
তাঁরই গানে ছড়ায়,
মধুর সুরে বাজবে দূরে
খুশিতে মন হারায়।
লম্বা ঝোলা নয়ন ভোলা
দাড়িওয়ালা কবি,
ধূপ প্রদীপে তাঁর সমীপে
আঁকবো রবির ছবি।
বৈশাখ
জাহানারা মাহবুব
বৈশাখে আম পাকে
জাম পাকে ফাগুনে,
মাঠে ঘাটে মেলা বসে
মন জাগে আগুনে।
রঙ মেখে সঙ সাজে
পরী হয়ে ঘুরে কতজন,
নানা রকম পিঠাপুলি
খেয়ে, ভরে যায় মন।
পান্তা ইলিশ খেতে
নেই মানা আজকের দিনে,
যতপারো খেয়ে যাও
একান্ত খুশি মনে।
বৈশাখের প্রথম দিনে
সবার খুশি খুশি মন,
দেখে যেন মনে হয়
হুর পরী নামলো ভুবন।
থাকতে নেই ধন্ধে
গৌ ত ম ত র ফ দা র
বসন্ত বিদায়ের আগেই যেন গ্রীষ্মের আগাম উঁকি,
ঋতুর চাঞ্চল্য দেখলেও মানুষকে নিতে হবে ঝুঁকি।
বাংলা বছরের বিদায় বনাম বরণের মিঠানি লড়াই,
চলছে-চলবে মানুষের কুকীর্তি বনাম মানুষের বড়াই।
নতুন বছর, নতুন প্রত্যাশা, মাতবে সম্প্রীতির সুগন্ধে,
ঈশ্বর-আল্লার আশীর্বাদে সকল জীবন চলুক ছন্দে,
নতুনের দিনরাত কাটবে ভালো, থাকতে নেই ধন্ধে।
নব বর্ষ
শাশ্বতী রায়।
এলো যে দ্বারে বছর ঘুরে
আহ্লাদী পহেলা বৈশাখ,
নেওগো তারে বরণ করে
পুরাতন গ্লানি ভুলে।
প্রভাত ফেরীতে নামবো মোরা
লাল শাড়ি পড়ে।
ঢোল বাজবে মাদল বাজবে
বটতলা মেলা বসে।
পান্তা ইলিশ খাবো মোরা
মিষ্টি মিঠাই সাথে,
দই খই খা়বো আরো
বিকালে যাবো মেলাতে।
ফুসকা খাবো চটপটি খাবো
ঘুরে দেখবো মেলা,
কিনবো মোরা অনেক কিছু
চরবো নাগর দোলা।
পুতুল নাচ, বাউল গান
কত রকমের অনুষ্ঠান,
বাইরের শিল্পীদের নাচ গান
দেখে ভরে সবার মন।