অতিরিক্ত সাদা স্রাব হলে কি হয়।সাদা স্রাব গন্ধ হয় কেন

অতিরিক্ত সাদা স্রাব (ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ) সাধারণত স্বাভাবিক হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি শারীরবৃত্তীয় সমস্যা বা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে।

✅ স্বাভাবিক কারণে অতিরিক্ত সাদা স্রাব:

👉 ডিম্বস্ফোটন (Ovulation) সময়:

  • মাসিক চক্রের মাঝামাঝি (১০-১৬তম দিন) বেশি পরিমাণে সাদা, পাতলা ও পিচ্ছিল স্রাব হতে পারে।
  • এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং গর্ভধারণের জন্য সহায়ক।

👉 যৌন উত্তেজনার কারণে:

  • যৌন উত্তেজনার সময় যোনি থেকে বেশি পরিমাণ স্রাব নিঃসৃত হতে পারে, যা সহবাসকে সহজ করে।

👉 গর্ভধারণের সময়:

  • গর্ভধারণের প্রথম দিক থেকে প্রোজেস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধির কারণে বেশি পরিমাণ সাদা স্রাব হতে পারে।

👉 মানসিক চাপ বা স্ট্রেস:

  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থাকলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে স্রাবের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।

⚠️ যখন এটি সমস্যার লক্ষণ হতে পারে:

১. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Vaginosis - BV):

🔸 স্রাব বেশি পরিমাণে হতে পারে এবং এতে মাছের গন্ধের মতো তীব্র দুর্গন্ধ থাকতে পারে।

🔸 ধূসর বা সাদা রঙের হতে পারে।

২. ইস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection - Candidiasis):

🔸 ঘন, দইয়ের মতো সাদা স্রাব হয়।

🔸 তীব্র চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হতে পারে।

৩. যৌনবাহিত রোগ (STI - Sexually Transmitted Infections):

🔸 যদি স্রাবের রঙ হলুদ, সবুজ বা ফেনাযুক্ত হয়, তবে এটি Trichomoniasis, Gonorrhea বা Chlamydia-র লক্ষণ হতে পারে।

🔸 এতে তীব্র গন্ধ, ব্যথা ও চুলকানি থাকতে পারে।

৪. হরমোনের সমস্যা বা PCOS (Polycystic Ovary Syndrome):

🔸 যদি অনিয়মিত মাসিকের সাথে অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয়, তাহলে এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে।

৫. জরায়ুর সমস্যা (Cervical Issues):

🔸 জরায়ুর ইনফেকশন বা সার্ভিকাইটিস (Cervicitis) হলে অতিরিক্ত সাদা স্রাব হতে পারে।

✅ করণীয়:

✔ যদি স্রাব স্বাভাবিক হয় (গন্ধহীন, স্বচ্ছ বা হালকা সাদা), তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

✔ যদি স্রাব বেশি পরিমাণে হয় এবং গন্ধযুক্ত, চুলকানি বা জ্বালাপোড়া থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

✔ অতিরিক্ত সুগন্ধিযুক্ত সাবান, স্প্রে বা কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন না।

✔ নরম, সুতি অন্তর্বাস পরুন এবং প্রতিদিন বদলান।

✔ পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।

সাদা স্রাব গন্ধ হয় কেন

সাদা স্রাব সাধারণত একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, তবে যদি এতে দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে এটি কোনো সমস্যা বা সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। নিচে সম্ভাব্য কারণগুলো ব্যাখ্যা করা হলো:

✅ স্বাভাবিক ক্ষেত্রে:

👉 হরমোনের পরিবর্তন:

  • মাসিক চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে (বিশেষ করে ডিম্বস্ফোটনের আগে বা পরে) সাদা, হালকা গন্ধযুক্ত স্রাব হতে পারে।
  • এটি সাধারণত পাতলা বা ঘন হতে পারে এবং স্বাভাবিক হলে এতে কোনো তীব্র গন্ধ থাকে না।

👉 যৌন উত্তেজনার কারণে:

  • মিলনের সময় বা উত্তেজিত হলে যোনি থেকে স্বাভাবিক স্রাব নিঃসৃত হয়, এতে হালকা গন্ধ থাকতে পারে।

⚠️ যখন গন্ধ অস্বাভাবিক হয়:

1️⃣ ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ (Bacterial Vaginosis - BV):

  • স্রাব পাতলা, ধূসর বা সাদা হতে পারে।
  • এতে মাছের গন্ধের মতো তীব্র দুর্গন্ধ থাকে, বিশেষ করে সহবাসের পরে বেশি অনুভূত হয়।

2️⃣ ইস্ট ইনফেকশন (Yeast Infection - Candidiasis):

  • ঘন, দইয়ের মতো সাদা স্রাব হয়।
  • সাধারণত তীব্র চুলকানি ও জ্বালাপোড়ার অনুভূতি থাকে, তবে এতে সাধারণত তীব্র দুর্গন্ধ থাকে না।

3️⃣ ট্রাইকোমোনিয়াসিস (Trichomoniasis - STI):

  • এটি একটি যৌনবাহিত সংক্রমণ (STD)।
  • স্রাব হলুদ-সবুজ, ফেনাযুক্ত এবং বাজে গন্ধযুক্ত হতে পারে।
  • এতে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি হতে পারে।

4️⃣ অপরিষ্কার বা ভেজা অন্তর্বাস:

  • প্রতিদিন পরিষ্কার ও শুকনো অন্তর্বাস না পরলে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে, যা স্রাবের গন্ধ বাড়িয়ে দিতে পারে।

5️⃣ অতিরিক্ত সুগন্ধি বা কেমিক্যালযুক্ত সাবান ব্যবহার:

  • যোনির স্বাভাবিক ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট হলে গন্ধযুক্ত স্রাব হতে পারে।

✅ করণীয়:

✔ যোনি সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন।

✔ সুগন্ধিযুক্ত সাবান, স্প্রে বা ডুচ (douche) ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।

✔ নরম ও সুতি অন্তর্বাস ব্যবহার করুন এবং প্রতিদিন বদলান।

✔ যদি স্রাবের গন্ধ খুব বাজে হয় বা সাথে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া থাকে, তাহলে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

Post a Comment