ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, কিয়ামতের আগে কিছু বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হবে, যা কিয়ামতের আলামত বা চিহ্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। এগুলো দুটি ভাগে বিভক্ত: ছোট আলামত এবং বড় আলামত।
ছোট আলামত:
১. নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমন ও ওফাত।
2. আমানতের খেয়ানত বৃদ্ধি পাবে।
3. অন্যায়, জুলুম ও হত্যা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
4. ধন-সম্পদের আধিক্য থাকবে, কিন্তু মানুষের হৃদয়ে শান্তি থাকবে না।
5. মসজিদগুলো সুসজ্জিত হবে, কিন্তু সেখানকার ধর্মীয় চর্চা কমে যাবে।
6. মা-বাবার অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাবে এবং সন্তানরা কর্তৃত্বশীল হবে।
7. ব্যভিচার, মদপান ও অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে।
8. মিথ্যা, প্রতারণা ও সুদ ব্যবসা সাধারণ হয়ে যাবে।
9. জ্ঞানহীন ও অযোগ্য ব্যক্তিরা নেতৃত্ব দেবে।
10. মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ ও যুদ্ধবিগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
বড় আলামত:
- ইমাম মাহদির আগমন – তিনি পৃথিবীতে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করবেন।
- দাজ্জালের আগমন – এক চক্ষুযুক্ত প্রতারক, যে নিজেকে ঈশ্বর দাবি করবে।
- ঈসা (আ.)-এর পুনরাগমন – তিনি দাজ্জালকে হত্যা করবেন।
- যুজুজ-মাজুজের মুক্তি – এক বিধ্বংসী জাতি, যারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে।
- পূর্ব ও পশ্চিমে ভূমিধস – তিনটি বড় ভূমিকম্প বা ভূমিধস ঘটবে।
- ধোঁয়ার (দুখান) আবির্ভাব – এক বিশাল ধোঁয়া যা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে।
- সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে – এটি তওবা কবুল হওয়ার দরজা বন্ধ করে দেবে।
- একটি জীবের (দাব্বাতুল আরদ) উদ্ভব – এটি মানুষের সাথে কথা বলবে এবং সৎ-অসৎ চিহ্নিত করবে।
- এক বিশাল আগুনের প্রাদুর্ভাব – এটি মানুষকে একত্রিত করবে।
- শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া (ইস্রাফিলের ফুৎকার) – এর মাধ্যমে কিয়ামত শুরু হবে এবং সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
এই আলামতগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হবে এবং একসময় কিয়ামত সংঘটিত হবে, যা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন।
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে হাদিস
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে বহু হাদিস রয়েছে, যেখানে ছোট ও বড় আলামত সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হলো:
১. ছোট আলামত সম্পর্কে হাদিস:
১. নবী (সা.)-এর আগমন কিয়ামতের প্রথম আলামত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"আমাকে কিয়ামতের সাথে একসঙ্গে পাঠানো হয়েছে, যেমন দুটি আঙুল পরস্পরের খুব কাছে থাকে।"
(বুখারি, হাদিস: ৪৯৩৬; মুসলিম, হাদিস: ২৯৫১)
২. জ্ঞান উঠে যাবে এবং মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"কিয়ামতের পূর্বে (ধর্মীয়) জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে, মূর্খতা ছড়িয়ে পড়বে, মদপান বেড়ে যাবে এবং ব্যভিচার ব্যাপকভাবে প্রচলিত হবে।"
(বুখারি, হাদিস: ৮০)*
৩. মা-বাবার অবাধ্যতা বৃদ্ধি পাবে
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যখন কোনো ব্যক্তি তার বন্ধুকে বেশি আপন মনে করবে, কিন্তু তার বাবার সঙ্গে দূরত্ব বাড়বে, তখন বুঝতে হবে কিয়ামতের সময় ঘনিয়ে এসেছে।"
(তিরমিজি, হাদিস: ২২১১)
৪. সুদ ও অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"একসময় আসবে যখন মানুষ সুদকে বৈধ মনে করবে এবং ব্যভিচার, অশ্লীলতা ও মদপান সাধারণ হয়ে যাবে।"
(বুখারি, হাদিস: ৫৭৯৫)
২. বড় আলামত সম্পর্কে হাদিস:
১. দাজ্জালের আগমন
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"কিয়ামতের আগে ৩০ জন মিথ্যাবাদী (দাজ্জাল) আসবে, যারা সবাই নিজেদের নবী বলে দাবি করবে।"
(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৩২০)
২. ঈসা (আ.)-এর আগমন ও দাজ্জালের মৃত্যু
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"শপথ আল্লাহর! ঈসা ইবনে মারইয়াম অবশ্যই পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং তিনি ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন, দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন এবং শূকর হত্যা করবেন।"
(বুখারি, হাদিস: ২২২২; মুসলিম, হাদিস: ১৫৫)
৩. সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে দিন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে, সে দিন থেকে মানুষের তওবা কবুল হবে না।"
(মুসলিম, হাদিস: ১৫৭)
৪. যুজুজ-মাজুজের মুক্তি
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"যুজুজ-মাজুজ এত বেশি হবে যে, তারা প্রতিটি স্থানে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, মানুষ তাদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেবে।"
(বুখারি, হাদিস: ৩৩৪০; মুসলিম, হাদিস: ২৯৩৭)
৫. শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"ইস্রাফিল (আ.) শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেবেন, তখন সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে এবং কিয়ামত শুরু হবে।"
(তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩১; মুসলিম, হাদিস: ২৯৪০)
উপসংহার
কিয়ামতের আলামত সম্পর্কে নবী (সা.) আমাদের সতর্ক করেছেন এবং ইসলামের আলোকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। এসব আলামত দেখে আমাদের আরও বেশি আমল করা উচিত এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা উচিত।