কোটা সংস্কার আন্দোলন অনুচ্ছেদ।কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ রচনা



অনুচ্ছেদ

২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটাভিত্তিক নিয়োগ ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সংঘটিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গণআন্দোলন। এই আন্দোলন দেশের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দেয়।

আন্দোলনের পটভূমি:

২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। এই পরিপত্রের মাধ্যমে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশসহ অন্যান্য কোটা বাতিল করা হয়। পরবর্তীতে, ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট উক্ত পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। 

আন্দোলনের সূত্রপাত:

হাইকোর্টের রায়ের পর, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন'র ব্যানারে শিক্ষার্থীরা 'বাংলা ব্লকেড' নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। 

আন্দোলনের গতি ও সংঘর্ষ:

আন্দোলন চলাকালীন সময়ে, ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের 'রাজাকারের নাতি-পুতি' হিসেবে অভিহিত করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা 'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার' এবং 'চাইতে গেলাম অধিকার; হয়ে গেলাম রাজাকার' স্লোগান দেন। পরের দিন, আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা' নষ্ট করার অভিযোগ আনেন। এ সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশও লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এইসব ঘটনায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আহত এবং ২০৯ জনের অধিক নিহত হন। পুলিশ ৫০০ মামলা করে ৯,০০০-এর অধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করে। 

আন্দোলনের পরিণতি:

আন্দোলনের তীব্রতা ও ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে আন্দোলনকারীরা সংসদে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে চূড়ান্ত সমাধানের দাবি জানান। আন্দোলনের ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় এবং এটি নতুন রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দিয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

উপসংহার:

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও যুবসমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এই আন্দোলন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং ভবিষ্যতে নীতি নির্ধারণে যুবসমাজের অংশগ্রহণের গুরুত্বকে আরও সুস্পষ্ট করেছে।

রচনা:

কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চালু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা এবং পিছিয়ে পড়া জনগণের জন্য। এ ব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে এবং নারী, উপজাতি, ও প্রতিবন্ধী জনগণের মতো পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হয়। তবে, সময়ের সাথে কোটা ব্যবস্থার পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে ৫৬% কোটা সংরক্ষিত, যা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের জন্য মাত্র ৪৪% সুযোগ রেখে দেয়। এ পরিস্থিতি চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তাদের মতে, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়াই ন্যায়সংগত।

আন্দোলনের পটভূমি

কোটা ব্যবস্থার ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী উচ্চ নম্বর পেলেও কোটার আওতাধীন প্রার্থীদের অগ্রাধিকার পাওয়ার কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত হন। অনেক সময় কোটার সুবিধা নিয়ে মেধাহীন প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে যান, যা মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ বৈষম্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়।

আন্দোলনের সূচনা

২০১৮ সালের মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রথম কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। এটি প্রথমে স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও দ্রুত দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনটি এক সময় জাতীয় আন্দোলনের রূপ নেয়। শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলনের বার্তা ছড়িয়ে দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবি

আন্দোলনকারীরা পাঁচটি প্রধান দাবি উত্থাপন করেন:

  • কোটা ব্যবস্থা ৫৬% থেকে ১০% এ নামানো।
  • মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।
  • কোটার মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা।
  • প্রতিবন্ধী ও প্রান্তিক জনগণের জন্য সংরক্ষিত কোটার যথাযথ বাস্তবায়ন।
  • নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো বৈষম্য না রাখা।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

আন্দোলনের প্রথম দিকে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিগুলি গুরুত্ব দেয়নি, ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব এলেও কার্যকর সমাধান আসেনি। পুলিশের লাঠিচার্জ এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর হামলার মুখে আন্দোলনকারীরা আরও সংগঠিত হন।

আন্দোলনের গুরুত্ব

কোটা সংস্কার আন্দোলন তরুণ প্রজন্মকে একত্রিত করে ন্যায়বিচারের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ করে। এটি শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকরির ক্ষেত্রের বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সোচ্চার হতে শেখায়। আন্দোলনটি মেধার মূল্যায়ন এবং ন্যায্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।

মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা

মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই আন্দোলনকে জোরালো করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। টেলিভিশন চ্যানেল এবং ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মাধ্যমে আন্দোলনের খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানায়।

আন্দোলনের ফলাফল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন এবং কোটার পরিমাণ কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। যদিও অনেক আন্দোলনকারী দাবি করেন যে পুরোপুরি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি, তবে এটি একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করে।

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

সরকারি চাকরিতে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, প্রান্তিক জনগণের জন্য সংরক্ষিত কোটার ভারসাম্য রক্ষা করাও গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে সঠিক নীতিমালা গ্রহণের প্রয়োজন।

উপসংহার

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়। এটি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ন্যায়বিচারের প্রতি বিশ্বাস এবং অধিকার আদায়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এ আন্দোলন দেখিয়েছে যে বৈষম্যমূলক কোনো নীতি দীর্ঘকাল স্থায়ী হতে পারে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের আন্দোলন দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করবে।

Post a Comment