ডিজিটাল বাংলাদেশ
সূচনা:
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ একটি সময়োপযোগী প্রত্যয় ও স্বপ্ন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একটি বৈপ্লবিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার এই প্রত্যয়ের ভিত্তিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কার্যক্রম শুরু করে। ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একটি তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার অঙ্গীকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব পায়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা:
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রথমবারের মতো ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কথা ঘোষণা করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির স্বপ্ন দেখান। এই উদ্যোগকে সফল করতে বিভিন্ন সম্মেলন ও কর্মসূচি আয়োজন করা হয়।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সংজ্ঞা:
ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজকে বোঝায়। এটি এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে দারিদ্র্য, বৈষম্য, দুর্নীতি দূর হবে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে জনগণের উন্নত জীবনযাত্রার পথে একটি আধুনিক ও টেকসই কাঠামো।
ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রাধিকার:
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে—
দারিদ্র্য দূরীকরণ: ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করে সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন।
অবকাঠামো উন্নয়ন: নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, দেশের প্রতিটি ঘরকে ইন্টারনেট সংযোগে যুক্ত করা, এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুলভ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
সেবা সহজলভ্য করা: জনগণের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচারব্যবস্থা, এবং কৃষি খাতে প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার।
মানবসম্পদ উন্নয়ন: জনগণকে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য:
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—
প্রধান লক্ষ্য: জনগণের জীবনমান উন্নত করা এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটানো।
রাজনৈতিক লক্ষ্য: সরকার ও রাজনীতি পরিচালনায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে জনগণকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার অংশীদার করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি:
- ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গৃহীত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে:
- সরকারি সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর।
- ই-গভর্নেন্স চালু করা।
- ডিজিটাল ভূমি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন।
- ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং প্রসারিত করা।
- তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা।
অগ্রগতি:
ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু থেকেই অনেক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সরকারি কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন, ই-কমার্স ও ই-গভর্নেন্সের প্রসার, এবং মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।
প্রত্যাশা ও সতর্কতা:
গ্রামের জনগণকে প্রযুক্তিতে আগ্রহী করে তোলার মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব। তবে প্রযুক্তি ব্যবহার যেন কেবল ধনী বা ক্ষমতাবানদের সুবিধা না বাড়ায়, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
উপসংহার:
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হলে বাংলাদেশ একটি জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার ও জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা প্রয়োজন। মেধা ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠবে একুশ শতকের বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।