পিরিয়ড (Period) বা মাসিক হলো
নারীদেহে ঘটে
যাওয়া
একটি
প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি
তখন
ঘটে
যখন
গর্ভধারণ না
হলে
জরায়ুর অভ্যন্তরীণ প্রলেপ
(এন্ডোমেট্রিয়াম) রক্ত
ও
টিস্যুর আকারে
জরায়ু
থেকে
বের
হয়ে
যায়।
সাধারণত প্রতি
২১
থেকে
৩৫
দিনের
মধ্যে
এটি
ঘটে
এবং
৩
থেকে
৭
দিন
স্থায়ী হয়।
পিরিয়ডের মূল বিষয়গুলো:
- শুরু
হওয়া:
মেয়েদের সাধারণত ১১ থেকে ১৫ বছর বয়সে প্রথম পিরিয়ড (মেনার্কি) হয়। এটি প্রজননক্ষমতা শুরুর লক্ষণ। - সমাপ্তি:
প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়, যাকে মেনোপজ বলা হয়। - লক্ষণসমূহ:
- তলপেটে ব্যথা
- কোমরে বা পিঠে ব্যথা
- মেজাজের পরিবর্তন
- মাথাব্যথা
- স্তন ফুলে যাওয়া
- কার্যকারিতা:
পিরিয়ড নারীর প্রজননক্ষমতার অংশ। যদি ডিম্বাণু নিষিক্ত না হয়, তবে জরায়ুর পর্দা ঝরে পড়ে এবং তা রক্ত আকারে বের হয়ে যায়। - নিয়মিততা:
নিয়মিত পিরিয়ড সুস্থ শরীরের লক্ষণ, তবে মানসিক চাপ, ওজনের পরিবর্তন বা হরমোনের তারতম্যের কারণে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।
পিরিয়ড চলাকালীন পরিচর্যা:
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
থাকা
- স্যানিটারি
ন্যাপকিন, ট্যাম্পন বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা
- বেশি পানি পান করা
- পুষ্টিকর
খাবার খাওয়া
এটি
নারী
শরীরের
একটি
গুরুত্বপূর্ণ অংশ
যা
সাধারণ
এবং
স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার একটি
স্বাভাবিক দিক।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর সহজ উপায়:
১. গরম সেঁক দিন
- গরম পানির ব্যাগ বা হিটিং প্যাড তলপেটে রাখুন।
- গরম সেঁক রক্তপ্রবাহ
বাড়িয়ে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
২. হালকা ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম
- হালকা হাঁটা, স্ট্রেচিং
বা যোগব্যায়াম করুন।
- যোগব্যায়ামের
কিছু পোজ (যেমন চাইল্ড পোজ বা ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ) ব্যথা কমায়।
৩. পানি ও তরল বেশি খান
- প্রচুর পানি পান করুন এবং তরল খাবার খান।
- ক্যাফেইন
ও
চিনি এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে।
৪. ব্যথানাশক ওষুধ নিন (চিকিৎসকের পরামর্শে)
- প্যারাসিটামল
বা ইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন।
- অতিরিক্ত
ব্যথা হলে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
৫. ম্যাসাজ করুন
- তলপেটে হালকা ম্যাসাজ করুন।
- নারকেল বা ল্যাভেন্ডার
তেল দিয়ে হালকা হাতে মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায়।
৬. ভেষজ চা পান করুন
- আদা চা, পুদিনা চা বা ক্যামোমাইল
চা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৭. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- পর্যাপ্ত
ঘুম এবং বিশ্রাম নিন।
- স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন
বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
৮. পুষ্টিকর খাবার খান
- সবুজ শাকসবজি, কলা, বাদাম ও মাছ খেলে ব্যথা কমে।
- ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার উপকারী।
৯. ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
- এগুলো ব্যথা বাড়াতে পারে এবং হরমোনের ভারসাম্য
নষ্ট করে।
১০. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- ব্যথা যদি নিয়মিত এবং তীব্র হয়, তাহলে গাইনোকোলজিস্টের
শরণাপন্ন হন।
- এটি অ্যান্ডোমেট্রিওসিস
বা অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে।
এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিতভাবে অনুসরণ করলে ব্যথা অনেকটাই কমানো সম্ভব। তবে যদি ব্যথা খুব তীব্র হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
পিরিয়ড না হলে করনীয়
পিরিয়ড না
হলে
বা
পিরিয়ড অনিয়মিত হলে
এটি
সাধারণত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, জীবনযাত্রার পরিবর্তন বা
স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে
হতে
পারে।
পিরিয়ড বন্ধ
থাকাকে
অ্যামেনোরিয়া বলা
হয়।
নিচে
পিরিয়ড না
হলে
কী
করতে
হবে
তার
কিছু
কার্যকর উপায়
দেওয়া
হলো:
১. স্ট্রেস কমান
- মানসিক চাপ
(Stress) পিরিয়ড বন্ধের একটি বড় কারণ হতে পারে।
- মেডিটেশন,
যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- পর্যাপ্ত
ঘুম এবং বিশ্রাম নিলে শরীরের হরমোন ভারসাম্য বজায় থাকে।
৩. সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খান
- পর্যাপ্ত
পুষ্টি ও
ভিটামিনযুক্ত খাবার খান।
- আয়রন, ক্যালসিয়াম
ও
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
- প্রক্রিয়াজাত
ও
ফাস্টফুড পরিহার করুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
- অতিরিক্ত
ওজন বা খুব কম ওজন পিরিয়ড অনিয়মিত করতে পারে।
- নিয়মিত ব্যায়াম
ও
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
৫. গরম পানির সেঁক দিন
- তলপেটে গরম পানির সেঁক দিলে জরায়ুর পেশি শিথিল হয় এবং পিরিয়ড শুরু হতে সাহায্য করে।
৬. আদা ও দারুচিনি চা পান করুন
- আদা ও দারুচিনি হরমোন ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পিরিয়ড শুরু করতে সহায়তা করে।
- প্রতিদিন
এক কাপ আদা বা দারুচিনি চা পান করুন।
৭. ব্যায়াম করুন
- নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
করুন, তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
- হাঁটাহাঁটি,
যোগব্যায়াম এবং সাইক্লিং সহায়ক হতে পারে।
৮. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
- যদি ৩ মাস বা তার বেশি সময় ধরে পিরিয়ড না হয়, তবে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
- চিকিৎসক প্রয়োজন
হলে হরমোন থেরাপি বা অন্যান্য ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন।
৯. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির ব্যবহার বন্ধ করুন (যদি থাকে)
- কিছু জন্মনিয়ন্ত্রণ
বড়ি পিরিয়ড বিলম্বিত করতে পারে।
- বড়ি বন্ধ করার পর পিরিয়ড হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
১০. স্বাস্থ্যগত সমস্যা চিহ্নিত করুন
- পলিসিস্টিক
ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS), থাইরয়েড সমস্যা, প্রোল্যাকটিন হরমোনের বৃদ্ধি বা ডায়াবেটিস পিরিয়ড অনিয়মিত করতে পারে।
- এসব সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের
পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
যদি পিরিয়ড দীর্ঘদিন না হয় এবং এর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণ যেমন ওজন বাড়া, অতিরিক্ত চুল পড়া বা ব্রণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।