ফ্যাসিবাদ (Fascism) হলো একটি রাজনৈতিক মতবাদ এবং শাসনব্যবস্থা, যা চরম জাতীয়তাবাদ, কর্তৃত্ববাদ, এবং স্বৈরতন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ফ্যাসিবাদী শাসনে ব্যক্তি স্বাধীনতা কমে যায় এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে। এটি সাধারণত শক্তিশালী নেতার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়, যেখানে বিরোধীদের দমন করা হয় এবং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ জনগণের জীবনের প্রায় সব দিকেই প্রসারিত হয়।
ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য:
- চরম জাতীয়তাবাদ: দেশকে সবার ওপরে স্থান দেওয়া এবং অন্য জাতিগুলোর প্রতি অবজ্ঞা বা বৈরিতা।
- একনায়কতন্ত্র: একজন নেতার হাতে সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করা।
- সামরিক শক্তির মহিমান্বিতকরণ: সামরিক শক্তিকে রাষ্ট্রের শক্তির মূল ভিত্তি হিসেবে দেখা।
- স্বাধীন মতপ্রকাশের দমন: গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ এবং বিরোধী মত ও রাজনৈতিক দলের উপর নিপীড়ন।
- ব্যক্তিস্বাধীনতার অবমাননা: ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতাকে রাষ্ট্রের স্বার্থে বলি দেওয়া।
- প্রোপাগান্ডা: জনগণকে বিভ্রান্ত করতে রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র ব্যবহার করা।
- সংখ্যালঘু নিপীড়ন: সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর উপর অত্যাচার এবং বৈষম্য।
ইতিহাসে ফ্যাসিবাদ:
- মুসোলিনির ইতালি (১৯২২-১৯৪৩)
- হিটলারের নাৎসি জার্মানি (১৯৩৩-১৯৪৫)
ফ্যাসিবাদ সাধারণত অর্থনৈতিক মন্দা, সামাজিক অস্থিরতা বা রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে।
ফ্যাসিবাদ কি? ফ্যাসিবাদীর বৈশিষ্ট্য ও চেনার তরিকা
[বাংলাদেশ এবং ভারতে ফ্যাসিবাদ নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে আবার নতুন করে। দুই প্রান্তের এক্টিভিস্টরা দুই দেশের বর্তমান সরকার ও তাদের মতাদর্শের লোকদেরকে ফ্যাসিবাদী বলে চিহ্নিত করছেন। এই প্রেক্ষাপটে সংক্ষেপে এই মতবাদ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরী। সেই লক্ষ্যেই এই পোস্ট।]
বাংলাদেশী কবি ও মার্ক্সবাদী বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহার ২০১৫ সালে ফ্যাসিবাদ নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায়। সেখানে তিনি ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞা, ঐতিহাসিক উৎপত্তি ও জাতীয়তাবাদের সাথে এর সম্পর্ক নিয়ে আলাপ করেছেন। ফ্যাসিবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে তিনি লিখেন, ‘’ইতালিয়ান ভাষায় ‘ফ্যাসিজম’ (fascism) শব্দটির উৎপত্তি ‘ফ্যাসিও’ (fascio) থেকে। ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ কথাটার সূত্র এখানে। লাঠিসোঁটা একসঙ্গে জড়ো করে তার সঙ্গে একটা কুঠার শক্তভাবে বেঁধে সহজে বহন করার জন্য যে শৃংখলা বা বোঝা তৈরি হয় তাকে ল্যাটিন ভাষায় বলা হয় ‘ফ্যাসকেস’ (fasces)। লাঠিসোঁটা বা লগিবৈঠা আলাদা আলাদা হলেও তাদের দলা করে শক্ত করে বেঁধে নিতে হবে। এই দলা বা বিচ্ছিন্ন লগি বা লাঠিকে একটি দলে একত্রিত করে শক্তভাবে বেঁধে বিরোধীদের ওপর শুধু সংঘবদ্ধ শক্তি হিসেবে নয়, আধুনিককালে হাজির করা হয়েছিল একইসঙ্গে রাজনৈতিক মতাদর্শ ও বৈধ আইনি কর্তৃত্ব হিসেবে। ক্ষমতার কর্তৃত্ব ও আইনি এখতিয়ারের (fascio littorio) প্রতীক হিসেবে ‘ফ্যাসকিও’র আবেদন গভীর।‘’(১)
ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রফেসর ইমেরিটাস, অ্যানাটমি অব ফ্যাসিজম গ্রন্থের লেখক রবার্ট ও. প্যাক্সটন লিখেন, ‘১৯৩০-এর দশকে ফ্যাসিবাদের জন্মের সময় (প্রথমে ইতালিতে, পরে জার্মানিতে) তা ছিল (তাদের ধারণায়) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে সহিংস প্রতিক্রিয়া। মুসোলিনি ও হিটলার দাবি করেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি তিরস্কার আর জার্মানি পরাজয়ের শিকার হয়েছিল। কারণ গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য দেশ দুটির জাতীয় ঐক্য ও ইচ্ছাশক্তি নিঃশেষ করে দিয়েছিল। তাই এ দুই নেতা তাঁদের অনুসারীদের উর্দি পরালেন এবং তাঁদের কাজ ও চিন্তাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে চেষ্টা করলেন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাঁরা জনগণের জীবনের সব দিকের ওপর চরম কর্তৃত্ব প্রসারিত করতে চাইলেন। এমনকি মুসোলিনির অধীনে খেলার আয়োজন এবং তা তদারক করত ‘ইল দোপোলাভারো’ নামের রাষ্ট্রীয় সংস্থা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে অন্য এক রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্থান ঘটছিল: সাম্যবাদ। ফ্যাসিবাদীরা এর বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিবন্ধক হিসেবে নিজেদের তুলে ধরেছিল (এবং এলিটদের সমর্থন পেয়েছিল)। আন্তর্জাতিকতাবাদী সমাজতন্ত্রের বিপরীতে ফ্যাসিবাদীরা হাজির করেছিল জাতীয় সমাজতন্ত্রের রূপরেখা। যখন তারা ধ্বংস করছিল সমাজতন্ত্রী দলগুলোকে, উঠিয়ে দিচ্ছিল স্বাধীন শ্রমিক ইউনিয়ন, তখন একবারও তারা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামাজিক কল্যাণের দায়বদ্ধতাকে প্রশ্ন করেনি (অবশ্য অভ্যন্তরীণ শত্রু, যেমন ইহুদিরা এর বাইরে ছিল)।‘(২)
ফরহাদ মজহার আরো লিখেন, ''ইটালিতে ‘ফ্যাসি’দের উত্থানের পেছনে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতি ছাড়াও প্রতীকের সংস্কৃতি কাজ করেছে অবশ্যই। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও পরস্পর থেকে আলাদা লগি বা লাঠিকে একত্র করা এবং তাদের ‘এক ও অভিন্ন’ ভাবার জন্য যথেষ্ট কল্পনা শক্তির প্রয়োজন। কারণ একটি সমাজে মানুষ ধর্মে, শ্রেণীতে, লিঙ্গে কিংবা ভিন্ন ভিন্ন ভূগোলে বা ইতিহাসে গড়ে ওঠে বলে পরস্পরের মধ্যে প্রচুর বৈচিত্র্য থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সব পার্থক্য ও বিভিন্নতা অস্বীকার করে সবাইকে একটিমাত্র পরিচয়ে বাঁধতে চায়। একটি শক্ত দড়ি দিয়ে লগি বা লাঠিগুলোকে একত্রে বাঁধা তাদের ভিন্নতা অস্বীকারের প্রতীকী মানেটা দাঁড় করায়। এর সঙ্গে কুঠারের ভূমিকা হচ্ছে লগি বা লাঠির সঙ্গে অন্য কোনো পরিচয় বা সূত্রের সম্পর্ক ছিন্ন করা। মানুষের অন্যসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্বন্ধ ও সূত্র অস্বীকার করে নিজেদের একটি ‘জাতি’ হিসেবে কল্পনা করা ছাড়া ফ্যাসিবাদ দানা বাঁধতে পারে না। যে কারণে জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে আসলে পার্থক্য টানা কঠিন ও দুঃসাধ্য। যে পার্থক্য আমরা দেখি সেটা ঐতিহাসিক।...ফ্যাসিবাদ ইউরোপের ইতিহাসে হঠাৎ কোনো আকস্মিক ঘটনা হিসেবে হাজির হয়নি। তার বীজ ইউরোপেই ছিল। আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস একইসঙ্গে ফ্যাসিবাদেরও ইতিহাস।''
অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক লুনা রুশদী ফ্যাসিবাদ বিষয়ক এক নোটে পাশ্চাত্যের দু’জন তাত্ত্বিকের বক্তব্য উত্থাপন করেছেন।(৩) সেখান থেকে ফ্যাসিবাদকে চেনার তরিকা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। লুনা রুশদী লিখেন, ‘১৯৯১ সালে ব্রিটিশ রাজনীতি-তত্ত্ববিদ রজার গ্রিফিন তাঁর বই ‘দ্যা নেচার অব ফ্যাসিজম’-এ প্রথম পলিনজেনেটিক উগ্র জাতীয়তাবাদ (Palingenetic Ultranationalism) তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। তিনি বলেছেন ফ্যাসিবাদের ধারণা গড়ে উঠেছে একটা মিথ অর্থাৎ প্রবাদ বা কল্পনাকে আশ্রয় করে--যার মূলে রয়েছে উগ্র জাতীয়তাবাদের পুনর্জন্ম বা পুনর্জাগরণ। গ্রিফিন জানিয়েছেন এই ভাবাদর্শের তিনটি উপাদান রয়েছে:
- পুনর্জন্ম বা পুনর্জাগরণের প্রবাদ
- জনপ্রিয় উগ্র-জাতীয়তাবাদ
- নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবঃক্ষয়ের কল্পনা।
লুনা রুশদী এরপর গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি হাজির করেন সেটা হচ্ছে ফ্যাসিবাদী শাসনকে চিহ্নিত করার কিছু বৈশিষ্ট্য। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লরেন্স ব্রিট জার্মানির হিটলার, ইতালির মুসোলিনি, স্পেনের ফ্রাংকো, ইন্দোনেশিয়ার সুহার্তো এবং লাতিন আমেরিকার কিছু ফ্যাসিবাদী শাসনামল নিয়ে গবেষণার পরে ফ্যাসিবাদের চৌদ্দটি লক্ষণ শনাক্ত করেছিলেন। ২০০৩ সালে ‘ফ্রি এনকোয়ারি’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল তাঁর লেখা।(৪) সেই বৈশিষ্ট্যগুলো হল;
১. পরাক্রমশালী ও চলমান জাতীয়তাবাদ – ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে দেশভক্তিমূলক আদর্শ, শ্লোগান, গান, প্রতীক এবং অন্যান্য সাজসজ্জা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় অবিরাম ভাবে। সবর্ত্র জাতীয় পতাকা চোখে পড়ে, পরিধেয় কাপড় এবং বিভিন্ন প্রদর্শনীতেও ধারণ করা হয় পতাকার প্রতীক।
২. মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণার প্রকাশ – শত্রুর ভয়ে এবং নিরাপত্তার প্রয়োজনে ফ্যাসিবাদী সমাজব্যবস্থায় জনসাধারণকে বিশ্বাস করানো সম্ভব হয় যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘প্রয়োজনের’ খাতিরে মানবাধিকার উপেক্ষা করা যায়। এ সময় মানুষের প্রবণতা থাকে দেখেও না দেখা এমন কি অত্যাচার, ফাঁসি, হত্যা, বন্দিদের লম্বা কারাদণ্ড ইত্যাদির প্রতি সমর্থন থাকে তাদের।
৩. শত্রু/বলির পাঁঠা শনাক্ত করা ঐক্যবদ্ধতার একটি কারণ হয়ে ওঠে – কোন এক জাতি বা সম্প্রদায়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, উদারপন্থী, কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী, সন্ত্রাসবাদী ইত্যাদি যে কোন দলকে সার্বজনীন শত্রু অথবা হুমকি স্বরূপ মনে করে তাকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে মানুষকে উন্মত্ত দেশপ্রেমী একতায় উদ্বুদ্ধ করা হয়।
৪. সামরিক আধিপত্য – দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ ও সমস্যা অবহেলা করে হলেও সামরিক বাহিনীকে সরকারী তহবিল থেকে অনুপাতহীন বড় অংশটাই দেয়া হয়। সেনাদল ও সামরিক বাহিনীকে মহিমান্বিত করে উপস্থাপন করা হয়।
৫. উৎকট লিঙ্গবৈষম্য – ফ্যাসিবাদী দেশগুলোতে প্রায় একচেটিয়া ভাবেই সরকার হয় পুরুষ-আধিপত্যাধীন। ফ্যাসিবাদী সমাজ-ব্যবস্থায় নারী-পুরুষের প্রথাগত ভূমিকা আরো অনমনীয়ভাবে পালিত হয়। বিবাহ-বিচ্ছেদ, গর্ভপাত বা সমকামিতা চেপে রাখা হয় আর রাষ্ট্রকে উপস্থাপন করা হয় পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত অভিভাবক হিসাবে।
৬. নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম – মাঝে মাঝে গণমাধ্যম হয় সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রিত। আবার কখনো পরোক্ষভাবে সরকারী আইন-কানুনের মাধ্যমে অথবা গণমাধ্যমের সরকারপন্থী নির্বাহকদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। বিশেষ করে যুদ্ধের সময়ে সেন্সরশিপ খুব প্রচলিত।
৭. জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে প্রচণ্ড ঔৎসুক্য – জনসাধারণকে ভয় দেখিয়ে আগ্রহী ও উত্তেজিত রাখা হয়।
৮. ধর্ম ও রাষ্ট্র বিজরিত থাকে – ফ্যাসিবাদী দেশগুলোতে সরকার সাধারণত সে দেশের প্রধান ধর্মটিকে ব্যবহার করে মানুষের মতামতের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে ধর্মীয় পরিভাষা ও অলংকরণের বহুল ব্যবহার দেখা যায়, এমনকি যখন ধর্মের মুখ্য মতবাদগুলো সরকারের কর্মকাণ্ডের একদম বিপরীতেই থাকে।
৯. বড় পুঁজির প্রাতিষ্ঠানের প্রতিরক্ষা – ফ্যাসীবাদে দেশে অনেক সময়েই বনেদি শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই সরকারকে ক্ষমতায় আনে। এর ফলে সরকারও এসব প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সুবিধাজনক লেনদেনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
১০. শ্রমিকদের ক্ষমতা রোধ – যেহেতু শ্রমিকদের সাংগঠনিক শক্তি ফ্যাসিবাদী সরকারের জন্য একমাত্র হুমকি স্বরূপ দেখা দিতে পারে, শ্রমিক সঙ্ঘ হয় সম্পূর্নভাবে নির্মূল করা হয় আর না হয় গুরুতরভাবে দমন করা হয়।
১১. বুদ্ধিজীবীতা ও শিল্পের প্রতি অবজ্ঞা – ফ্যাসিবাদী দেশগুলো প্রায় সময়েই উচ্চশিক্ষা ও শিক্ষায়তনের প্রতি খোলাখুলি বৈরীতা সহ্য করে এবং সমর্থন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের গ্রেফতার করা বা তাঁদের বক্তব্য সেন্সর করা খুব বিরল থাকে না। শিল্প ও সাহিত্যাঙ্গনে স্বাধীনভাবে কথা বলতে গেলে সরাসরি আক্রমণ করা হয়।
১২. অপরাধ ও শাস্তির বিষয়ে মাত্রাহীন আগ্রহ – ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় পুলিশকে আইন প্রয়োগের নামে প্রায় সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়। দেশপ্রেমের নামে পুলিশি নির্যাতন দেখেও না দেখা এবং অনেক নাগরিক অধিকার ছেড়ে দিতেও রাজি থাকে জনসাধারণ। ফ্যাসিবাদী দেশে প্রায় সময়েই একটি জাতীয় পুলিশ বাহিনী থাকে যার ক্ষমতা অপরিসীম।
১৩. অবাধ স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি– ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে প্রায় সবসময়েই কর্তৃত্ব করে একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা দল যারা একে অপরকে সরকারের বিভিন্ন প্রভাব ও ক্ষমতাশালী আসনে নিয়োগ দেয় এবং যে কোন দায় বা ঝুঁকি থেকে একে অপরকে রক্ষা করে। ফ্যাসিবাদী দেশে সরকারী নেতা-নেত্রীদের পক্ষে জাতীয় ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা অথবা সরাসরি চুরি করা মোটেই অবাক হবার মত কিছু না।
১৪. নির্বাচনে কারচুপি – মাঝে-মাঝে ফ্যাসিবাদী দেশে নির্বাচন মানেই সম্পূর্ণ ধোঁকাবাজি। আর অন্য সময় ঘটে কারচুপি, বিপক্ষ দলের প্রার্থিদের নামে কুৎসা রটানো এমনকি তাদের হত্যা করার মতন ঘটনা। ভোটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য আইন-প্রণয়ন, রাজনৈতিক বিভাগের/জেলার সীমানা নির্ধারণ এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে তারা। ফ্যাসিবাদী দেশগুলো সাধারণত দেশের বিচারব্যবস্থারও ব্যবহার করে নির্বাচনে সুবিধা আদায়ের জন্য।