তসলিমা নাসরিনের প্রেমের কবিতা pdf।তসলিমা নাসরিনের রোমান্টিক কবিতা।তসলিমা নাসরিনের বিখ্যাত কবিতা

তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত লেখিকা ও কবি, যিনি তাঁর সাহসী এবং প্রগতিশীল লেখনীর জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। তাঁর কবিতাগুলো সামাজিক অন্যায়, নারীর অধিকার, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং মানবতার পক্ষে উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠে। তিনি শব্দের মাধ্যমে সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি এবং নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।

তসলিমার কবিতাগুলো সরাসরি, তীক্ষ্ণ এবং আবেগময়। প্রেম, বিরহ, স্বাধীনতা ও নারীর আত্মপরিচয় তাঁর লেখায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়। তাঁর কবিতায় নারীর দুঃখ-কষ্ট, আশা এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তসলিমা নাসরিনের কবিতা অনেক সময় বিদ্রোহের ভাষা হয়ে উঠে, যা পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে।

তিনি বিশ্বাস করেন, সাহিত্যের দায়িত্ব হলো সত্য প্রকাশ করা এবং সমাজকে এগিয়ে নেওয়া। তাঁর কবিতাগুলোতে নিপীড়িত মানুষের পক্ষে জোরালো কণ্ঠ শোনা যায়, যা তাঁকে সাহসী এবং ব্যতিক্রমী কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তসলিমা নাসরিনের কবিতা কেবল সাহিত্য নয়, বরং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ। আজকে আমরা তার সেরা কবিতা পড়বো।

পারো তো ধর্ষণ করো

আর ধর্ষিতা হয়ো না, আর না
আর যেন কোনও দুঃসংবাদ কোথাও না শুনি যে তোমাকে ধর্ষণ করেছে
কোনও এক হারামজাদা বা কোনও হারামজাদার দল।
আমি আর দেখতে চাই না একটি ধর্ষিতারও কাতর করুণ মুখ,
আর দেখতে চাই না পুরুষের পত্রিকায় পুরুষ সাংবাদিকের লেখা সংবাদ
পড়তে পড়তে কোনও পুরুষ পাঠকের আরও একবার মনে মনে ধর্ষণ করা ধর্ষিতাকে।
ধর্ষিতা হয়ো না, বরং ধর্ষণ করতে আসা পুরুষের পুরুষাঙ্গ কেটে ধরিয়ে দাও হাতে,
অথবা ঝুলিয়ে দাও গলায়,
খোকারা এখন চুষতে থাক যার যার দিগ্বিজয়ী অঙ্গ, চুষতে থাক নিরূপায় ঝুলে থাকা
অণ্ডকোষ, গিলতে থাক এসবের রস, কষ।
ধর্ষিতা হয়ো না,পারো তো পুরুষকে পদানত করো, পরাভূত করো,
পতিত করো, পয়মাল করো
পারো তো ধর্ষণ করো,
পারো তো ওদের পুরুষত্ব নষ্ট করো।
লোকে বলবে, ছি ছি, বলুক।
লোকে বলবে এমন কী নির্যাতিতা নারীরাও যে তুমি তো মন্দ পুরুষের মতই,
বলুক, বলুক যে এ তো কোনও সমাধান নয়, বলুক যে তুমি তো তবে ভালো নও
বলুক, কিছুতে কান দিও না, তোমার ভালো হওয়ার দরকার নেই,
শত সহস্র বছর তুমি ভালো ছিলে মেয়ে, এবার একটু মন্দ হও।

চলো সবাই মিলে আমরা মন্দ হই,
মন্দ হওয়ার মত ভালো আর কী আছে কোথায়!

এমন ভেঙ্গে চুরে ভালো কেউ বাসেনি আগে

কী হচ্ছে আমার এসব!
যেন তুমি ছাড়া জগতে কোনও মানুষ নেই, কোনও কবি নেই, কোনও পুরুষ নেই, কোনও
প্রেমিক নেই, কোনও হৃদয় নেই!
আমার বুঝি খুব মন বসছে সংসারকাজে?
বুঝি মন বসছে লেখায় পড়ায়?
আমার বুঝি ইচ্ছে হচ্ছে হাজারটা পড়ে থাকা কাজগুলোর দিকে তাকাতে?
সভা সমিতিতে যেতে?
অনেক হয়েছে ওসব, এবার অন্য কিছু হোক,
অন্য কিছুতে মন পড়ে থাক, অন্য কিছু অমল আনন্দ দিক।
মন নিয়েই যত ঝামেলা আসলে, মন কোনও একটা জায়গায় পড়ে রইলো তো পড়েই রইল।
মনটাকে নিয়ে অন্য কোথাও বসন্তের রঙের মত যে ছিটিয়ে দেব, তা হয় না।
সবারই হয়ত সবকিছু হয় না, আমার যা হয় না তা হয় না।

তুমি কাল জাগালে, গভীর রাত্তিরে ঘুম থেকে তুলে প্রেমের কথা শোনালে,
মনে হয়েছিল যেন স্বপ্ন দেখছি
স্বপ্নই তো, এ তো একরকম স্বপ্নই,
আমাকে কেউ এমন করে ভালোবাসার কথা বলেনি আগে,
ঘুমের মেয়েকে এভাবে জাগিয়ে কেউ চুমু খেতে চায়নি
আমাকে এত আশ্চর্য সুন্দর শব্দগুচ্ছ কেউ শোনায়নি কোনওদিন
এত প্রেম কেউ দেয়নি,
এমন ভেঙে চুরে ভালো কেউ বাসেনি।
তুমি এত প্রেমিক কী করে হলে!
কী করে এত বড় প্রেমিক হলে তুমি? এত প্রেম কেন জানো? শেখালো কে?
যে রকম প্রেম পাওয়ার জন্য সারাজীবন অপেক্ষা করেছি, স্বপ্ন দেখেছি, পাইনি
আর এই শেষ বয়সে এসে যখন এই শরীর খেয়ে নিচ্ছে একশ একটা অসুখ-পোকা
যখন মরে যাবো, যখন মরে যাচ্ছি — তখন যদি থোকা থোকা প্রেম এসে ঘর ভরিয়ে দেয়,
মন ভরিয়ে দেয়, তখন সবকিছুকে স্বপ্নই তো মনে হবে,
স্বপ্নই মনে হয়।
তোমাকে অনেক সময় রক্তমাংসের মানুষ বলে মনে হয় না,
হঠাৎ ঝড়ে উড়ে হৃদয়ের উঠোনে
যেন অনেক প্রত্যাশিত অনেক কালের দেখা স্বপ্ন এসে দাঁড়ালে।
আগে কখনও আমার মনে হয়নি ঘুম থেকে অমন আচমকা জেগে উঠতে আমি আসলে
খুব ভালোবাসি
আগে কখনও আমার মনে হয়নি কিছু উষ্ণ শব্দ আমার শীতলতাকে একেবারে পাহাড়ের
চুড়োয় পাঠিয়ে দিতে পারে
আগে কখনও আমি জানিনি যে কিছু মোহন শব্দের গায়ে চুমু খেতে খেতে আমি রাতকে
ভোর করতে পারি।

এ প্রেম নয়


সারাক্ষণ তোমাকে মনে পড়ে 
তোমাকে সারাক্ষণ মনে পড়ে 
মনে পড়ে সারাক্ষণ।  
তুমি বলবে আমি ভালোবাসি তোমাকে, তাই। 
কিন্তু এর নাম কি ভালোবাসা? 
নিতান্তই ভালোবাসা? যে ভালোবাসা হাটে মাঠে না চাইতেই মেলে! 
ভালো তো আমি বাসিই কত কাউকে, এরকম তো মরে যাই মরে যাই লাগে না! 
এ নিশ্চয় ভালোবাসার চেয়ে বেশি কিছু, বড় কিছু। 
তোমার কথাগুলো, হাসিগুলো আমাকে এত উষ্ণ করে তোলে যেন 
হিমাগারে শুয়ে থাকা আমি চোখ খুলছি, শ্বাস নিচ্ছি। 
বলবে, আমি প্রেমে পড়েছি তোমার। 
কিন্তু প্রেমে তো জীবনে আমি কতই পড়েছি, 
কই কখনও তো মনে হয়নি কারও শুধু কথা শুনেই, হাসি শুনেই 
বাকি জীবন সুখে কাটিয়ে দেব, আর কিছুর দরকার নেই! 
এ নিশ্চয়ই প্রেম নয়, এ প্রেম নয়, এ প্রেমের চেয়ে বড় কিছু, বেশি কিছু।


ফিরে এসো


কোনও একদিন ফিরে এসো, যে কোনও একদিন, যেদিন খুশি  
আমি কোনও দিন দিচ্ছি না, কোনও সময় বলে দিচ্ছি না, যে কোনও সময়। 
তুমি ফিরে না এলে এই যে কী করে কাটাচ্ছি দিন 
কী সব কাণ্ড করছি, 
কোথায় গেলাম, কী দেখলাম 
কী ভালো লেগেছে, কী না লেগেছে — কাকে বলবো! 
তুমি ফিরে এলে বলবো বলে আমি সব গল্পগুলো রেখে দিচ্ছি। 
চোখের পুকুরটা সেচে সেচে খালি করে দিচ্ছি, তুমি ফিরে এলে যেন 
এই জগৎসংসারে দুঃখ বলে কিছু না থাকে। 
তুমি ফিরে আসবে বলে বেঁচে আছি, বেঁচে থেকে যেখানেই যা কিছু সুন্দর পাচ্ছি, 
দেখে রাখছি, তুমি এলেই সব যেন তোমাকে দেখাতে পারি। 
যে কোনও একদিন ফিরে এসো, ভর দুপুরে হোক, মধ্যরাত্তিরে হোক — 
তোমার ফিরে আসার চেয়ে সুন্দর এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। 
বিশ্ব ব্রম্মাণ্ডের সমস্ত সুন্দর জড়ো করলেও 
তোমার এক ফিরে আসার সুন্দরের সমান হবে না। 
ফিরে এসো, 
যখন খুশি। 
নাও যদি ইচ্ছে করে ফিরে আসতে, 
তবু একদিন এসো, আমার জন্যই না হয় এসো, 
আমি চাইছি বলে এসো, 
আমি খুব বেশি চাইছি বলে। 
আমি কিছু চাইলে কখনও তো তুমি না দিয়ে থাকোনি !


নষ্ট মেয়ে

ওরা কারো কথায় কান দেয় না, যা ইচ্ছে তাই করে,
কারও আদেশ উপদেশের তোয়াককা করে না,
গলা ফাটিয়ে হাসে, চেঁচায়, যাকে তাকে ধমক দেয়
নীতি রীতির বালাই নেই, সবাই একদিকে যায়, ওরা যায় উল্টোদিকে
একদম পাগল!
কাউকে পছন্দ হচ্ছে তো চুমু খাচ্ছে, পছন্দ হচ্ছে না, লাত্থি দিচ্ছে
লোকে কি বলবে না বলবে তার দিকে মোটেও তাকাচ্ছে না।
ওদের দিকে লোকে থুতু ছোড়ে, পেচ্ছাব করে
ওদের ছায়াও কেউ মাড়ায় না, ভদ্রলোকেরা তো দৌড়ে পালায়।
নষ্ট মেয়েদের মাথায় ঘিলু বলতেই নেই, সমুদ্রে যাচ্ছে, অথচ ঝড় হয় না তুফান হয়
একবারও আকাশটা দেখে নিচ্ছে না।
ওরা এরকমই, কিছুকে পরোয়া করে না
গভীর অরণ্যে ঢুকে যাচ্ছে রাতবিরেতে, চাঁদের দিকেও দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে!

আহ, আমার যে কী ভীষণ ইচ্ছে করে নষ্ট মেয়ে হতে।

(এ কবিতাও ইংরেজি থেকে অনুবাদ)

ব্যক্তিগত ব্যাপার


ভুলে গেছো যাও,
এরকম ভুলে যে কেউ যেতে পারে,
এমন কোনও অসম্ভব কীর্তি তুমি করোনি,
ফিরে আর তাকিও না আমার দিকে, আমার শূন্যতার দিকে।
আমি যেভাবেই আছি, যেভাবেই থাকি এ আমার জীবন, তুমি এই
জীবনের দিকে আর করুণ করুণ চোখে তাকিয়ে না কোনওদিন।
ভুলে গেছো যাও,
বিনিময়ে আমি যদি ভুলে না যাই তোমাকে, যেতে না পারি
সে আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার, তুমি এই ব্যাপারটি নিয়ে ঘেঁটো না,
এ আমার জীবন, কার জন্য কাঁদি, কাকে গোপনে ভালোবাসি
জানতে চেও না।

ভুলে গেলে তো এই হয়, ছেড়ে চলে গেলে তো এই-ই হয় — যার যার জীবনের মতো
যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপারও যার যার হয়ে ওঠে।
তুমি তো জানোই সব, জেনেও কেন বলো যে মাঝে মাঝে যেন
খবর টবর দিই কেমন আছি!
আমার কেমন থাকায় তোমার কীই বা যায় আসে!
যদি খবর দিই যে ভালো নেই, যদি বলি তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,
যদি বলি তোমার জন্য আমার মন কেমন করছে,
শরীর কেমন করছে!
তুমি তো আর ছুটে আসবে না আমাকে ভালোবাসতে!
তবে কী লাভ জানিয়ে, কী লাভ জানিয়ে যে আমি অবশেষে সন্ন্যাসী হলাম!


অভিমান


কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে, জেনো
দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি।
ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে
তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও।

জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে
নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি।

অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি,
আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর ?

সময়


সময় চলে যাচ্ছে– এই বীভৎস ব্যাপারটি দেখতে ইচ্ছে করে না
তাই অনেককাল ঘড়ির দিকে তাকাইনি,
অনেককাল হাতে আমি ঘড়ি পরি না,
আর যেই না তুমি বলছো সোয়া দশটায় কোথাও দেখা হবে কী দেড়টায় বাড়িতে আসবে
কী সাতটায় থিয়েটারে,
অমনি তড়িঘড়ি ঘড়ি খুঁজে হাতে পরছি, ঘরের সবগুলো টেবিলে দেয়ালে
বাচ্চা-মেয়ের মত রাখছি, টাঙাচ্ছি।
যেন একটি দিনের একটি বেলার একটি মুহূর্ত বেরিয়ে না যায় কোনও ফাঁক দিয়ে,
যেন ভুল করে সময়ের সামান্য এদিক ওদিক করে তোমাকে না হারাই,
না হারাই কোনওদিন।

জীবনের তিনভাগ পার করে এসে যখন একভাগ বাকি,
জানি যে জীবন খুব ভয়ঙ্কর রকম ছোট, খুব বিচ্ছিরি রকম ছোট , 
জানি যে প্রতিটি মুহূর্ত বড় অমূল্য, একটি মুহূর্তকেও
কোথাও তাই একফোঁটা দিতে চাইনি যেতে।
আর এখন, কখনও কোনও রাতে তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা থাকলে
পুরো দিনটুকুকে জীবন থেকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে চাই,
দিন দৌড়ে চলে যাক চাই,
সময়ের আগেই সময় যাক চাই,
রাত আসুক চাই,
তুমি এসো চাই।
কবে যে কখন সময়ের চেয়েও বেশি মূল্যবান হয়ে উঠলে তুমি!
সময় যে যাচ্ছে, সে খেয়ালটি নেই,
জীবন যে ফুরোচ্ছে, সে বোধটি নেই,
মৃত্যু জিনিসটি যে খুব ভয়ঙ্কর, সে ভাবনাটি নেই।
তুমি এসে কি আমার ভালো করলে কিছু!



চরিত্র

তুমি মেয়ে,
তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো
তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে
লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।
তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে
লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।
তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে
লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।
যদি তুমি অপদার্থ হও
তুমি পিছু ফিরবে
আর তা না হলে
যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।

বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি


মানুষের চরিত্রই এমন
বসলে বলবে না, বসো না
দাঁড়ালে, কি ব্যাপার হাঁটো
আর হাঁটলে, ছি: বসো।
শুয়ে পড়লে ও তাড়া – নাও উঠো,
না শুলে ও স্বষ্তি নেই, একটু তো শুবে !
ওঠ বস করে করে নষ্ঠ হচ্ছে দিন
এখনো মরতে গেলে বলে ওঠে – বাঁচো
না জানি কখন ও বাঁচতে দেখলে বলে উঠবে – ছি: মরো
বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি।

কলকাতা তুই তোর হৃদয়


সবখানেই পুঁজিবাদের হাতি হাঁটছে, সবখানেই সাম্রাজ্যবাদ 
মাথায় পাগড়ি পরে বসে আছে
তুমি একবিন্দু পিঁপড়ে কামড় দিলে টেরও পায় না কেউ
তেমন কিছু পারো না কেবল লালসার জিভ দেখতে পারো
বেলায় বেলায় জিভের একশটা মরা মৌমাছি পারো
মুখে মুখে কৃত্রিম হাসি দেখতে পারো
হাসির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই আস্ত কঙ্কালের খুলি দেখে আঁতকে উঠতে পারো 
মানুষের শরীরগুলো তুমি আর দেখতে পাচ্ছো না শরীরগুলো
এখন কাগজ এখন ডলার-ইউরো-পাউণ্ড লিমোজিনে চড়ছে কনকর্ডে উঠছে
মাসে মাসে আরমানি কিনছে গ্রীষ্মকালে সমুদ্র সেরে আসছে
এদের বুক খুলে খুলে দেখে এসেছো হৃদয় নেই
খুলি খুলে দেখেছো মস্তিস্ক নেই
চোখ খুলে দেখেছো দৃষ্টিহীন
হাত রাখতেই হাতের মধ্যে পচা মাংস আর পুঁজ উঠে আসছে
এরা অনেককাল মৃত
অনেককাল এরা কোনও শ্বাস নেয় না।
তুমি যখন এদের ফেলে দৌড়ে উল্টোদিকে পালাচ্ছে!
দেখ ভিড় দেখ কয়েক কোটি জলজ্যান্ত মানুষ এদের অনুসরণ করছে
মানুষগুলো পাথর-পাথর হাতে তোমাকে ভিড়ের মধ্যে টেনে নিতে চাইছে
তুমি সন্ত্রস্ত তুমি সজোরে সরোষে ছাড়িয়ে নিচ্ছো নিজেকে
পাথর-পাথর জিভগুলো চুকচুক শব্দ করছে 
পাথর-পাথর চোখগুলোয় করুণা 
তুমি পালাচ্ছো--  
প্রাণপণ দৌড়ে এবার শহর ছাড়ছো তুমি মানুষ খুঁজছো তুমি
রক্তমাংসের মানুষ
মানুষ খুঁজছো হন্যে হয়ে যে মানুষ গান গায়
যে মানুষ স্বপ্ন দেখে যে মানুষ ভালোবাসে
উন্মাদের মত মানুষ খুঁজছো
খুঁজছো
একটি শহর খুঁজছো যে শহরের হৃদয় বলে কিছু আছে
এখনও কিছু অবশিষ্ট আছে তিল পরিমাণ হলেও আছে
তুমি দৌড়োচ্ছে! যেন শত বছর ধরে শত শতাব্দি ধরে দৌড়োচ্ছে!
ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়োচ্ছে! তোমার চুল উড়ছে চুলে জট বাঁধছে চুলে পাক ধরছে
তোমার ত্বকে ধুলো লাগছে ভাঁজ পড়ছে
চোখের কোলে কালি পড়ছে
পায়ে জুতো নেই পায়ে কাদা পায়ে কাঁটা পায়ে রক্ত

তুমি খুঁজে পেলে শেষে পেলে
হাঁপাতে হাঁপাতে তুমি থামলে শ্বাস নিলে
তুমি কলকাতায় থেমেছো মেয়ে

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত,

তবু এখনো কেমন যেন হৃদয় টাটায়-

প্রতারক পুরুষেরা এখনো আঙুল ছুঁলে পাথর শরীর

বয়ে ঝরনার জল ঝরে।

এখনো কেমন যেন কল কল শব্দ শুনি নির্জন

বৈশাখে, মাঘ-চৈত্রে-

ভুল প্রেমে কেটে গেছে তিরিশ বসন্ত,

তবু বিশ্বাসের রোদে পুড়ে নিজেকে অঙ্গার করি।

প্রতারক পুরুষেরা একবার ডাকলেই ভুলে যাই

পেছনের সজল ভৈরবী,

ভুলে যাই মেঘলা আকাশ, না-

ফুরানো দীর্ঘ রাত।

একবার ডাকলেই

সব ভুলে পা বাড়াই নতুন ভুলের দিকে,

একবার ভালোবাসলেই

সব ভুলে কেঁদে উঠি অমল বালিকা।

ভুল প্রেমে তিরিশ বছর গেল

সহস্র বছর যাবে আরো,

তবু বোধ হবে না নির্বোধ বালিকার।

হিসেব

কতটুকু ভালোবাসা দিলে,

ক তোড়া গোলাপ দিলে,

কতটুকু সময়, কতটা সমুদ্র দিলে,

কটি নির্ঘুম রাত দিলে, কফোঁটা জল দিলে চোখের –

সব যেদিন ভীষণ আবেগে শোনাচ্ছেলে আমাকে,

বোঝাতে চাইছিলে আমাকে খুব ভালোবাসো;


আমি বুঝে নিলাম-

তুমি আমাকে এখন আর একটুও ভালোবাসোনা।

ভালোবাসা ফুরোলেই মানুষ হিসেব কষতে বসে, তুমিও বসেছো।

ভালোবাসা ততদিনই ভালোবাসা

যতদিন এটি অন্ধ থাকে, বধির থাকে,

যতদিন এটি বেহিসেবি থাকে।

ব্যস্ততা

তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম, যা কিছু নিজের ছিল দিয়েছিলাম,

যা কিছুই অর্জন-উপার্জন !

এখন দেখ না ভিখিরির মতো কেমন বসে থাকি !

কেউ ফিরে তাকায় না।

তোমার কেন সময় হবে তাকাবার ! কত রকম কাজ তোমার !

আজকাল তো ব্যস্ততাও বেড়েছে খুব।

সেদিন দেখলাম সেই ভালবাসাগুলো

কাকে যেন দিতে খুব ব্যস্ত তুমি,

যেগুলো তোমাকে আমি দিয়েছিলাম।

টোপ

যেরকম ছিলে, সেরকমই তুমি আছ

কেবল আমাকে মাঝপথে ডুবিয়েছ

স্বপ্নের জলে উলটো ভাসান এত

আমি ছাড়া আর ভাগ্যে জুটেছে কার!


আগাগোড়া তুমি অবিকল সেই তুমি

বড়শিতে শুধু গেঁথেছ দু’চার খেলা

অলস বিকেল খেলে খেলে পার হলে

রাত্তিরে ভাল নিদ্রাযাপন হয়।


তুমি তো কেবলই নিদ্রার সুখ চেনো

একশো একর জমি নিজস্ব রেখে

এক কাঠা খোঁজো বর্গার তাড়নায়

বর্গার চাষ পৃথক স্বাদের কিনা!


স্বাদ ভিন্নতা পুরুষ মাত্র চায়

তুমি তো পুরুষই, অধিক কিছু নও।

পুরুষেরা ভাল চোখ খেতে জানে চোখ

আমার আবার কাজলের শখ নেই।


বড়শিতে গাঁথা হৃদপিন্ডের আঁশ

ছিঁড়ে খেতে চাও, তুমি তো পুরুষই খাবে।

সাঁতার জানি না, মধ্যনদীতে ডুবি

অন্ধকে টোপ দেবার মানুষ নেই।

দ্বিখন্ডিত

সে তোমার বাবা, আসলে সে তোমার কেউ নয়

সে তোমার ভাই, আসলে সে তোমার কেউ নয়

সে তোমার বোন, আসলে সে তোমার কেউ নয়

সে তোমার মা, আসলে সে তোমার কেউ নয় ।

তুমি একা

যে তোমাকে বন্ধু বলে, সেও তোমার কেউ নয় ।

তুমি একা।

তুমি যখন কাঁদো, তোমার আঙুল

তোমার চোখের জল মুছে দেয়, সেই আঙুলই তোমার আত্মীয়।

তুমি যখন হাঁটো, তোমার পা

তুমি যখন কথা বলো, তোমার জিভ

তুমি যখন হাসো, তোমার আনন্দিত চোখই তোমার বন্ধু।

তুমি ছাড়া তোমার কেউ নেই

কোন প্রানী বা উদ্ভিদ নেই।

তবু এত যে বলো তুমি তোমার,

তুমিও কি আসলে তোমার ?


চরিত্র

তুমি মেয়ে,

তুমি খুব ভাল করে মনে রেখো

তুমি যখন ঘরের চৌকাঠ ডিঙোবে

লোকে তোমাকে আড়চোখে দেখবে।

তুমি যখন গলি ধরে হাঁটতে থাকবে

লোকে তোমার পিছু নেবে, শিস দেবে।

তুমি যখন গলি পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠবে

লোকে তোমাকে চরিত্রহীন বলে গাল দেবে।

যদি তুমি অপদার্থ হও

তুমি পিছু ফিরবে

আর তা না হলে

যেভাবে যাচ্ছ, যাবে।


যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন

আমার জন্য অপেক্ষা করো মধুপুর নেত্রকোনা

অপেক্ষা করো জয়দেবপুরের চৌরাস্তা

আমি ফিরব। ফিরব ভিড়ে হট্টগোল, খরায় বন্যায়

অপেক্ষা করো চৌচালা ঘর, উঠোন, লেবুতলা, গোল্লাছুটের মাঠ

আমি ফিরব। পূর্ণিমায় গান গাইতে, দোলনায় দুলতে, ছিপ ফেলতে বাঁশবনের পুকুরে-

অপেক্ষা করো আফজাল হোসেন, খায়রুননেসা, অপেক্ষা করো ঈদুল আরা,

আমি ফিরব। ফিরব ভালবাসতে, হাসতে, জীবনের সুতোয় আবার স্বপ্ন গাঁথতে-

অপেক্ষা করো মতিঝিল, শান্তিনগর, অপেক্ষা করো ফেব্রুয়ারি বইমেলা আমি ফিরব।

মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে কফোটা জল দিয়ে দিচ্ছি চোখের,

যেন গোলপুকুর পাড়ের বাড়ির টিনের চালে বৃষ্টি হয়ে ঝরে।

শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে

শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষায়, বঙ্গোপসাগরে।

ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।

শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড- পাহাড়-আমি ফিরব।

যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।

বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি


মানুষের চরিত্রই এমন

বসলে বলবে না, বসো না

দাঁড়ালে, কি ব্যাপার হাঁটো

আর হাঁটলে, ছি: বসো।

শুয়ে পড়লে ও তাড়া - নাও উঠো,

না শুলে ও স্বষ্তি নেই, একটু তো শুবে !

ওঠ বস করে করে নষ্ঠ হচ্ছে দিন

এখনো মরতে গেলে বলে ওঠে - বাঁচো

না জানি কখন ও বাঁচতে দেখলে বলে উঠবে - ছি: মরো

বড় ভয়ে গোপনে গোপনে বাঁচি।

অভিমান

কাছে যতটুকু পেরেছি আসতে, জেনো

দূরে যেতে আমি তারো চেয়ে বেশী পারি।

ভালোবাসা আমি যতটা নিয়েছি লুফে

তারো চেয়ে পারি গোগ্রাসে নিতে ভালোবাসা হীনতাও।

জন্মের দায়, প্রতিভার পাপ নিয়ে

নিত্য নিয়ত পাথর সরিয়ে হাঁটি।

অতল নিষেধে ডুবতে ডুবতে ভাসি,

আমার কে আছে একা আমি ছাড়া আর ?


সময়


রাত তিনটেয় ঘুম ভেঙে গেলে এখন আর বিরক্ত হই না

রাতে ভালো ঘুম না হলে দিনটা ভাল কাটে না – এমান বলে লোকে ।

দিন যদি ভাল না কাটে তাহলে কি কিছু যায় আসে !

আমার দিনই বা কেন , রাতই বা কেন ?

দিন দিনের মতো বসে থাকে দূরে , আর রাত রাতের মতো ,

ঘুমিয়ে থাকার গায়ে মুখ গুঁজে গুঁটি গুঁটি শুয়ে থাকে জেগে থাকা ।

এসব দিন রাত , এসব সময় , এসব বিয়ে আমার করার কিছুই নেই ,

জীবন আর মৃত্যু একাকার হয়ে গেলে কিছু আর করার থাকে না কিছু না ।

আমি এখন মৃত্যু থেকে জীবনকে বলে কয়েও সরাতে পারি না ,

জীবন থেকে মৃত্যুকে আলগোছে তুলে নিয়ে রাখতে পারি না কোথাও আপাতত ।


প্রত্যাশা

কারুকে দিয়েছ অকাতরে সব ঢেলে

সেও অন্তত কিছু দেবে ভেবেছিলে।

অথচ ফক্কা, শূন্যতা নিয়ে একা

পড়ে থাকো আর দ্রুত সে পালায় দূরে

ভালবেসে কিছু প্রত্যাশা করা ভুল।


আলোকিত ঘর হারিয়ে ধরেছ অন্ধকারের খুঁটি

যারা যায় তারা হেসে চলে যায়, পেছনে দেখে না ফিরে।

তলা ঝেড়ে দিলে, যদিও জোটেনি কানাকড়ি কিছু হাতে

তুমি অভুক্ত, অথচ তোমার সম্পদ খায় তারা

যাদের বেসেছ নিংড়ে নিজেকে ভাল।


ঠকতেই হবে ভালবেসে যদি গোপনে কিছুর করো

প্রত্যাশা কোনও, এমনকি ভালবাসাও পাবার আশা।

হাত


আবার আমি তোমার হাতে রাখবো বলে হাত

গুছিয়ে নিয়ে জীবনখানি উজান ডিঙি বেয়ে

এসেছি সেই উঠোনটিতে গভীর করে রাত

দেখছ না কি চাঁদের নীচে দাঁড়িয়ে কাঁদি দুঃখবতী মেয়ে !

আঙুলগুলো কাঁপছে দেখ, হাত বাড়াবেকখন ?

কুয়াশা ভিজে শরীরখানা পাথর হয়ে গেলে ?

হাত ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম বর্ষা ছিল তখন,

তখন তুমি ছিঁড়ে খেতে আস্ত কোনও নারী নাগাল পেলে।

শীতের ভারে ন্যুব্জ বাহু স্পর্শ করে দেখি

ভালবাসার মন মরেছে, শরীর জবুথবু,

যেদিকে যাই, সেদিকে এত ভীষণ লাগে মেকি।

এখনও তুমি তেমন আছ। বয়স গেল, বছর গেল, তবু।

নিজের কাঁধে নিজের হাত নিজেই রেখে বলি :

এসেছিলাম পাশের বাড়ি, এবার তবে চলি।


প্রলাপ


একদিন সমুদ্রের কাছে গিয়ে একটা ঘর বাঁধবো

মাঝে মধ্যে ইচ্ছে হয় পাহাড়ের কাছে।


অমন একলা নির্বাসনের আকাশ চুয়ে শূন্যতার কুয়াশা নামলে

অথৈ জলে ভিজে ভিজে গা কাঁপিয়ে জ্বর আনবো।


আমাকে না হোক, তবু দেখতে এসো।

মানুষ তো অসুখ দেখতেও আসে


মুক্তি


যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।

দূরে বসে বসে মোবাইলে, ইমেইলে হঠাৎ হঠাৎ জ্বালিয়ো না,

দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ ছুড়ে ছুড়ে এভাবে বিরক্তও করো না।


ভুলে গেলে এইটুকু অন্তত বুঝবো ভুলে গেছো,

ভুলে গেলে পা কামড়ে রাখা জুতোগুলো খুলে একটু খালি পায়ে হাঁটবো,

ভুলে গেলে অপেক্ষার কাপড়চোপড় খুলে একটু স্নান করবো,

ভুলে গেলে পুরোনো গানগুলো আবার বাজাবো,

ভুলে গেলে সবগুলো জানালা খুলে একটু এলোমেলো শোবো।

রোদ বা জোৎস্না এসে শরীরময় লুকোচুরি খেলে খেলুক, আমি না হয় ঘুমোবো,


ঘুমোবো ঘুমোবো করেও নিশ্চিন্তের একটুখানি ঘুম ঘুমোতে পারিনা কত দীর্ঘদিন!

কেবল অপেক্ষায় গেছে। না ঘুমিয়ে গেছে। জানালায় দাঁড়িয়ে গেছে।


কেউ আমাকে মনে রাখছে, কেউ আমাকে মনে মনে খুব চাইছে, সমস্তটা চাইছে,

কেউ দিনে রাতে যে কোনও সময় দরজায় কড়া নাড়বে,

সামনে তখন দাঁড়াতে হবে নিখুঁত, যেন চুল, যেন মুখ, যেন চোখ, ঠোঁট,

যেন বুক, চিবুক এইমাত্র জন্মেছে, কোথাও ভাঙেনি, আঁচড় লাগেনি, ধুলোবালি ছোঁয়নি।

হাসতে হবে রূপকথার রাজকন্যার মতো,

তার ক্ষিধে পায় যদি, চায়ের তৃষ্ঞা পায় যদি!

সবকিছু হাতের কাছে রাখতে হবে নিখুঁত!

ভালোবাসতে হবে নিখুঁত!

নিমগ্ন হতে হবে নিখুঁত!

ক্ষুদ্র হতে হবে নিখুঁত!

দুঃস্বপ্নকে কত কাল সুখ নামে ডেকে ডেকে নিজেকে ভুলিয়েছি!


ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।

যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত কাছে আসবে,

যত বলবে ভালোবাসো, তত আমি বন্দি হতে থাকবো তোমার হৃদয়ে, তোমার জালে,

তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের মুঠোয়, তোমার দশনখে।

ভুলে যাও, মুখের রংচংগুলো ধুয়ে একটু হালকা হই, একটুখানি আমি হই।


তালাকনামা

যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি আর আমার থাকো না

তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।


যে কোনও শরীরে গিয়ে

শকুনের মতো খুঁটে খুঁটে রূপ ও মাংস তুমি আহার করো

গণিকা ও প্রেমিকার শরীরে কোনও পার্থক্য বোঝো না।


কবিতার চে' চাতুর্য বোঝো ভাল,

রাত্রি এলে রক্তের ভেতর টকাশ-টকাশ দৌড়ে যায়

একশো একটা লাগামহীন ঘোড়া,

রোমকূপে পূর্বপুরুষ নেচে উঠে তাধিন-তাধিন।

আমি জোস্নার কথা তোমাকে অনেক বলেছি

তুমি অমাবস্যা ও পূর্ণিমার কোনও পার্থক্য বোঝো না।

ভালবাসার চে' প্রাচুর্য বোঝো বেশি

যে কারও গোড়ালির নীচ থেকে চেটে খাও

এক ফোঁটা মদ, লক্ষ গ্যালন মদে আমুণ্ডু ডুবে

তবু তোমার তৃষ্ণা ঘোচে না।

তোমাকে স্বপ্নের অথা অনেক বলেছি

সমুদ্র ও নর্দমার ভেতরে তুমি কোনও পার্থক্য বোঝো না।

যে কোনও দূরত্বে গেলে তুমি হও যার-তার খেলুড়ে পুরুষ।

যার-তার পুরুষকে আমি আমার বলি না


যদি বাসোই

তুমি যদি ভালোই বাসো আমাকে, ভালোই যদি বাসো,

তবে বলছো না কেন যে ভালো বাসো! কেন সব্বাইকে জানিয়ে দিচ্ছ না যে

ভালোবাসো!

আমার কানের কাছেই যত তোমার দুঃসাহস!

যদি ভালোবাসো, ওই জুঁইফুলটি কেন জানে না যে ভালোবাসো!

ফুলটির দিকে এত যে চেয়ে রইলাম, আমাকে একবারও তো বললো না যে ভালোবাসো!

এ কীরকম ভালোবাসা গো! কেবল আমার সামনেই নাচো!

এরকম তো দুয়োর বন্ধ করে চুপি চুপি তুমি যে কারও সামনেই নাচতে পারো।

আমি আর বিশ্বাস করছি না, যতই বলো।

আগে আমাকে পাখিরা বলুক, গাছেরা গাছের পাতারা ফুলেরা বলুক,

আকাশ বলুক, মেঘ বৃষ্টি বলুক, রোদ বলুক চাঁদের আলো বলুক, নক্ষত্ররা বলুক,

পাড়া পড়শি বলুক, হাট বাজারের লোক বলুক, পুকুরঘাট বলুক, পুকুরের জল বলুক যে

তুমি ভালোবাসো আমাকে!

শুনতে শুনতে যখন আর তিষ্ঠোতে না পারবো তখন তোমাকে ওই চৌরাস্তায় তুলে

একশ

লোককে দেখিয়ে চুমু খাবো, যা হয় হবে।

ভালোবাসা কি গোপন করার জিনিস! দেখিয়ে দেখিয়েই তো

শুনিয়ে শুনিয়েই তো ভালোবাসতে হয়।

ভালোবাসা নিয়ে আমরা জাঁকালো উৎসব করবো, ধেই ধেই নাচবো, নাচাবো,

সুখবর বুঝি আমরা চারদিকে ঢোল বাজিয়ে জানিয়ে দিই না!

জুইঁফুলটি যেদিন বলবে যে তুমি আমাকে ভালোবাসো, সেদিনই কিন্তু তোমাকে

বলবো যে

তোমাকেও বাসি, তার আগে একটুও নয়।

তসলিমা নাসরিনরে কবিতা পড়ুন: পিডিএফ

Post a Comment