১.শ্রমের মর্যাদা
সূচনা
কর্মই জীবন। সৃষ্টির সমস্ত প্রাণীকেই বেঁচে থাকার জন্য কাজ করতে হয়। পিঁপড়ার মতো ক্ষুদ্র প্রাণী থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির হাতি—সবাইকেই নিজ নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী পরিশ্রম করতে হয়। মানুষের জীবনেও পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরিশ্রম মানুষকে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মানুষের সভ্যতা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অগ্রগতির মূলেও রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। সুতরাং, শ্রমের মর্যাদা চিরন্তন।
শ্রম কী
শ্রমের আভিধানিক অর্থ হলো মেহনত বা শারীরিক ও মানসিক খাটুনি। যেকোনো কাজই শ্রমের মধ্যে পড়ে। তবে পরিশ্রম বলতে আমরা বুঝি আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায়। এই পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করতে পারে এবং সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
শ্রমের শ্রেণিবিভাগ
শ্রম প্রধানত দুই প্রকার—মানসিক শ্রম ও শারীরিক শ্রম।
মানসিক শ্রম: শিক্ষক, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, সাংবাদিক এবং অফিস কর্মচারীদের কাজ মানসিক শ্রমের উদাহরণ।
শারীরিক শ্রম: কৃষক, শ্রমিক, জেলে, তাঁতি এবং নির্মাণশ্রমিকদের কাজ শারীরিক শ্রমের উদাহরণ।
মানসিক এবং শারীরিক শ্রম উভয়েরই সমন্বয়ে মানব-সভ্যতার বিকাশ ঘটে। কোনো একটি ছাড়া সভ্যতা এগোতে পারে না।
শ্রমের প্রয়োজনীয়তা
মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই গড়ে। তার এই ভাগ্য গঠনে পরিশ্রম অপরিহার্য। অলস মানুষ কখনো জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সফলতার জন্য কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। পৃথিবীর সব উন্নত জাতি পরিশ্রমের মাধ্যমেই সাফল্যের চূড়ায় উঠেছে। তাই ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে পরিশ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
শ্রমের মর্যাদা
কোনো কাজই ছোট নয়। পৃথিবীর প্রত্যেক পেশার মানুষই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকের উৎপাদিত ফসল, শ্রমিকের তৈরি ঘরবাড়ি, শিক্ষকের শেখানো জ্ঞান, কিংবা চিকিৎসকের চিকিৎসা—সবই সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রাখে। উন্নত বিশ্বে কাজের মর্যাদা সমানভাবে স্বীকৃত। তবে আমাদের সমাজে শারীরিক শ্রমকে যথেষ্ট সম্মান দেওয়া হয় না। এই মানসিকতা বদলাতে হবে।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি
পরিশ্রম ছাড়া সৌভাগ্য অর্জন সম্ভব নয়। সাফল্যের জন্য ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, যা শুধুমাত্র পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। অলস মানুষ সমাজের বোঝা। অন্যদিকে, পরিশ্রমী মানুষ তার নিজ জীবনের পাশাপাশি সমাজ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে।
উপসংহার
শ্রম সভ্যতার অগ্রগতির চাবিকাঠি। সোনার বাংলা গড়তে হলে আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ ক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও পরিশ্রম করতে হবে। শ্রমকে মর্যাদা দিতে হবে এবং পরিশ্রমীদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। তাই, কর্মে ব্রতী হয়ে আমরা যেন সুখী ও সমৃদ্ধশালী জাতি গঠন করতে পারি।
"কর্মে নিষ্ঠা ও পরিশ্রমেই লুকিয়ে আছে জীবনের প্রকৃত সাফল্য।"
২.শ্রমের মর্যাদা অনুচ্ছেদ
শ্রম মানুষের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তুলতে পারে। পৃথিবীর প্রতিটি উন্নয়ন ও সভ্যতার অগ্রগতির মূলে রয়েছে মানুষের শ্রম। শ্রমের মর্যাদা বোঝা যায় কৃষকের ফসল ফলানো, শ্রমিকের ঘাম ঝরানো, শিক্ষকের জ্ঞান বিতরণ বা চিকিৎসকের রোগ সারানোর কাজের মাধ্যমে। কোনো কাজই ছোট বা তুচ্ছ নয়; প্রতিটি কাজই সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিশ্রম মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে এবং উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে সাহায্য করে। তাই ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের উন্নতির জন্য শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন ও পরিশ্রমীদের প্রতি সম্মান জানানো অত্যাবশ্যক।
৩.শ্রমের মর্যাদা রচনা ২০ পয়েন্ট
ভূমিকা
"বিশ্বপিতার মহাকারবার এই দিন দুনিয়াটা
মানুষ তাঁহার মূলধন, কর্ম তাহার খাটা"
যতীন্দ্রমোহন বাগচী
পৃথিবী একটি বিশাল কর্মক্ষেত্র, যেখানে প্রতি মুহূর্তে মানুষ তার পরিশ্রম দিয়ে সভ্যতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মানুষকে কাজ করতে হয় বেঁচে থাকার জন্য এবং সৃষ্টির সকল উন্নতি, সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রগতি কেবল শ্রমের ফল। শ্রমই সমাজের মূল ভিত্তি, যার উপর দাঁড়িয়ে পৃথিবী নির্মিত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে আধুনিক সমাজের সুচনা করেছে—তাদের অবদান ছদ্মরূপে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে না, কিন্তু তাদের শ্রমের মাধ্যমেই আমরা আজকের সভ্য পৃথিবী পেয়েছি। তারা পথ তৈরি করেছে, সেতু গড়ে তুলেছে, নতুন আবিষ্কার করেছে, জীবনযাত্রাকে সহজ করেছে। শ্রম ছাড়া মানবসভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়।
শ্রম কি এবং শ্রমের ধরণ
শ্রম বলতে বুঝায় কর্মের জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তি ব্যয় করা। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে মানুষকে বিভিন্ন কাজ করতে হয়, তবে সকল কাজ এক ধরনের নয়। কোনো কাজ শারীরিক শক্তির প্রয়োজন, আবার কিছু কাজ মানসিক পরিশ্রমের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। এই দুই ধরনের শ্রমই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক শ্রম
মানসিক শ্রম হলো এমন একটি শক্তি, যা ব্যবহার করা হয় কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য, যেমন গবেষণা, আবিষ্কার, দার্শনিক চিন্তা, সাহিত্য রচনা ইত্যাদি। কোনও কাজের সঠিক বাস্তবায়ন ও পরিচালনার জন্য মন ও মেধার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক শ্রম বা কায়িক শ্রম
এটি এমন একটি শ্রম, যেখানে শারীরিক শক্তি ব্যবহার করা হয়। শারীরিক শ্রম একজন ব্যক্তির শরীরের শক্তি ও সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল, যেমন কৃষক, নির্মাণশ্রমিক, কামার, ইত্যাদি যারা নিজেদের কায়িক শ্রমে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান।
শ্রমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
শ্রম হলো পৃথিবীতে সুখ, সমৃদ্ধি এবং উন্নতির মূল উৎস। আল্লাহর পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "লাইসালিল ইনসানি ইল্লা মাসা'আ," অর্থাৎ মানুষের জন্য শ্রম ব্যতীত কিছুই নেই। মহান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, "কৃষকের পুত্র কিংবা রাজার কুমার, সবারই রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার।"
মহামানবদের কাছে শ্রমের মর্যাদা
প্রত্যেক মহামানবই শ্রমের মর্যাদা দিয়েছেন এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সমাজের উন্নতি সাধন করেছেন। আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) নিজ হাতে কাজ করেছেন, খলিফা আলী (রাঃ) নিজেও কঠোর পরিশ্রম করতেন। আরও উদাহরণ হিসেবে আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, "A hard working street cleaner is better than a lazy scholar."
শ্রম ও সভ্যতা
প্রাচীন সভ্যতার শুরুতে মানুষ কায়িক ও মানসিক শ্রমের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন ও পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছিল। সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষের পরিশ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শ্রমের জয়
বিশ্বের সেরা জাতিগুলির মধ্যে যারা আজ উন্নত, তাদের উন্নতির পেছনে রয়েছে শ্রমের মর্যাদা। যেমন চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি দেশে শ্রমিকদের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমই তাদের উন্নতির মূল।
ছাত্রজীবনে শ্রমের গুরুত্ব
ছাত্রজীবন হলো জীবনের সেরা সময়, যেখানে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের ভবিষ্যত নির্মাণ করা যায়। যারা কঠোর পরিশ্রম করে তারা সফল হয়, আর যারা অলস থাকে তারা হতাশাগ্রস্ত হয়।
জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব
জাতীয় জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি দেশ যদি পরিশ্রমী জাতি হিসেবে পরিচিত হয়, তবে সেই দেশ কখনো উন্নতির শীর্ষে পৌঁছাবে।
ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মে শ্রমের মর্যাদা
সব ধর্মে শ্রমের মর্যাদা গুরুত্ব পেয়েছে। ইসলামে নবী মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেও পরিশ্রমী ছিলেন এবং সাহাবিদেরও শ্রমের মর্যাদা দিতে উৎসাহিত করেছেন।
আমাদের দেশে শ্রমের মর্যাদা
দুঃখজনক হলেও বলতে হয় যে, আমাদের দেশে শারীরিক শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না। এই পরিভাষার পরিবর্তন দরকার, যাতে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পায় এবং দেশ উন্নতির পথে এগিয়ে যেতে পারে।
শ্রমশীল ব্যক্তির উদাহরণ
অনেক মহামানব যেমন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, অ্যান্ড্রু কার্নেগি, জর্জ ওয়াশিংটন ইত্যাদি পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের গৌরব অর্জন করেছেন।
শ্রমিক লাঞ্ছনা
আজও অনেক দেশে শ্রমিকরা যথাযথ সম্মান পায় না। তাদের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়ে থাকে, তাদের ন্যায্য মজুরি ও সম্মান দেয়া হয় না। এর ফলে দেশের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়।
কর্মবিমুখ ব্যক্তির অবস্থা
কর্মবিমুখ মানুষ সফল হতে পারে না। তারা সময় নষ্ট করে এবং হতাশায় ভোগে। সফল হতে হলে পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।
উপসংহার
শ্রমই জীবনের অমূল্য রত্ন। যে পরিশ্রম করে, তার জীবন সফল। শ্রমই উন্নতির চাবিকাঠি, তা ব্যক্তিগত জীবনে হোক কিংবা জাতির জীবনে। তাই শ্রমের গুরুত্ব আমাদের জীবনে প্রতিটি স্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তবেই আমরা এক উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বমঞ্চে সম্মানিত হতে পারব।