যৌবন ধরে রাখার উপায়
আজীবন যৌবন ধরে রাখতে চায় সবাই। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও বয়স বাড়ে। চোখে মুখে বয়সের ছাপ পড়ে, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। ত্বক কুচকে যায়, বলিরেখা দেখা দেয়। ত্বকের সমস্যা যে কোনও বয়সেই হতে পারে। অনেকেই ভাবেন নামী-দামি প্রসাধনী ব্যবহার করলেই বয়স বাগে আনা সম্ভব। তবে পাশাপাশি ডায়েটেও যে নজর রাখতে হবে, তা ভুলে যাই আমরা। রেস্তোরাঁর মশলাদার খাবার, ভাজাভুজি কেবল আমাদের শরীরের ভিতরের ক্ষতি করে এমনটা নয়, এর প্রভাব পড়ে ত্বকেও। প্রাকৃতিক উপায়ে সুস্থ থাকতে এবং তারুণ্য ও যৌবন ধরে রাখতে পুষ্টিকর খাবারের কোনো বিকল্প নেই। এমন কিছু খাবার আছে যা নিয়ম করে খেলে আপনার যৌবন থাকবে অটুট। জেনে নিন প্রাকৃতিক উপায়ে যৌবন ধরে রাখবেন যেভাবে।যৌবন ধরে রাখার জন্য কিছু প্রাকৃতিক এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করা যেতে পারে। তবে মনে রাখবেন যে এটি সম্পূর্ণভাবে বয়সের প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে এবং কোনো উপায়ই বয়স থামিয়ে রাখতে পারে না, কিন্তু সঠিক জীবনযাত্রা কিছুটা সাহায্য করতে পারে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:
স্বাস্থ্যকর খাবার:
দুধ
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি এবং যৌবন ধরে রাখতে দুধের ভূমিকা অতুলনীয়। এর রহস্য হলো এই যে, দুধ রতিশক্তি সৃষ্টি করে দেহের শুস্কতা দূর করে এবং দ্রুত হজম হয়ে খাদ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়, বীর্য সৃষ্টি করে, চেহারায় লাল বর্ণ তৈরী করে, দেহের অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ বের করে দেয় এবং মস্তিস্ক শক্তিশালী করে।
রসুন
রসুনে রয়েছে এলিসিন নামের উপাদান যা দৈহিক ইন্দ্রিয়গুলোতে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। দৈহিক সমস্যা থাকলে এখনই নিয়মিত রসুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
সামুদ্রিক মাছ
সামদ্রিক মাছ যৌবন ধরে রাখতে সহায়ক। দীর্ঘ দিন যৌবন ধরে রাখতে চাইলে নিয়মিত খাবার তালিকায় লাল মাংস বাদ দিয়ে সামুদ্রিক মাছ রাখুন। তাতে শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে এবং যৌবন ধরে রাখা যাবে বহুদিন।
মধু
মধু আপনার শরীর ও ত্বক উভয়ের জন্য উপকারী। যৌবন দীর্ঘায়িত করে মধু। নিয়ম করে মধু খেলে, পাকস্থলী পরিষ্কার হয়, দেহের অতিরিক্ত দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। বন্ধ গ্রন্থিগুলি খুলে যায়, পাকস্থলী স্বাভাবিক হয়ে যায়, মস্তিষ্ক অতিরিক্ত শক্তি লাভ করে ফলে শরীর সুস্থ থাকে।
অলিভ অয়েল
খাবার রান্নার সময় অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে এবং সহজে মেদ জমে না। এছাড়াও প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বকে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে ঘুমালে ত্বকে বলিরেখা পরে না সহজে। ফলে দীর্ঘ দিন যৌবন ধরে রাখা যায়।
গাজর ও টমেটো
গাজর ও টমেটো ত্বক ও স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে যৌবন ধরে রাখার ক্ষেত্রে এই দুটি সবজির জুড়ি নেই। এগুলোতে প্রচুর পরিমানে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। এছাড়াও এতে আছে বিটা ক্যারোটিন ও লুটেইন যা শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে সহায়তা করে।
আঙ্গুর
বয়স ধরে রাখতে আঙ্গুরের জুড়ি নেই। আঙ্গুরে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে। ফলে নিয়মিত আঙ্গুর খেলে ত্বক ও দেহ সুন্দর ও সুস্থ থাকে।
ব্রকলি
ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা বয়সজনিত বিভিন্ন অসুখ থেকে দেহকে রক্ষা করে এবং শরীরের বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ধীর করে ফেলে।
টক দই
টক দই মেদ ও কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। দইয়ে প্রচুর প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম আছে যা শরীরের গঠন ভালো রাখে এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করে। দই ত্বককে রাখে বলিরেখা মুক্ত। তাই যৌবন ধরে রাখতে চাইলে প্রতিদিন দই খান।
পালং শাক
পালং শাকে প্রচুর পরিমানে লুটেইন আছে যা শরীরের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে এবং যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত পালং শাক খেলে ত্বক চোখের বয়সজনিত সমস্যা কমে যায়। এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন আছে বলে পালং শাক শরীরের নানা অসুবিধা দূর করে এবং শরীরে পুষ্টি ও শক্তির যোগান দেয়।
কলা
কলাতে রয়েছে শক্তি বাড়ানোর মূলমন্ত্র। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাসিয়াম ও আয়রন। স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চললে তাতে থাকা উচিত উপকারী খনিজ সমৃদ্ধ খাবার। এমনকি কোথায় গেলে কিংবা অফিসে কাজ করার ফাঁকেও খেতে পারেন কলা। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চের মাঝে খিদে পেলে খেতে পারেন কলা।
ডার্ক চকোলেট
মিষ্টি দাঁতের জন্য ক্ষতিকর হলেও ডার্ক চকোলেট যেমন খেতে ভাল তেমনি এতে রয়েছে বেশ কয়েকটি উপকারী খনিজ পুষ্টিগুণ। দিনের একটি সময়ে মন ভাল রাখতে ও এনার্জি বুস্টার হিসেবে ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। এতে রয়েছে ক্যাফেইন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, সুস্থ থাকতে এগুলোর ভূমিকা অপরিহার্য।
কাঠবাদাম
কাঠবাদাম ভিটামিন ই-র একটি দারুণ উৎস। ভিটামিন ই আপনার ত্বককে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে, আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং ত্বকের টিস্যু মেরামত করতে সাহায্য করে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত কাঠবাদাম খেলে ঋতুবন্ধের পর ত্বকের বলিরেখার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
আখরোট
আখরোটে আছে প্রদাহরোধী ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। তা ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। আখরোট পলিফেনলের ভাল উৎস। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান যে কোনও রকম প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে। ত্বক টানটান রাখতেও সাহায্য করে।
পেস্তা
পেস্তা বাদামে ভরপুর মাত্রায় পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে। ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এই দুই উপাদান বেশ জরুরি। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট ত্বকের জেল্লা বাড়ায়। ত্বকের কোষের ক্ষয় রোধ করে। ব্রণ কমাতেও সাহায্য করে এই বাদাম।
ওটস
পুষ্টিবিদদের মতে, বয়স ৪০ পেরনোর পর ব্রেকফাস্টে ওটস রাখা খুবই ভালো। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। প্রতিদিন ডায়েটের জন্য এই ওটস অত্যন্ত উপকারীও। ওটস শরীরের শক্তি জোগাতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন ৩০ গ্রাম করে ওটস খেলে সকালে বেশ চনমনে থাকবেন আপনি। এতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বাড়ায়। বয়স বাড়লেও ফাইবার শরীরের যৌবন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত পানি পান: ত্বক ও শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি আপনার শরীরের টক্সিন বের করে দেয় এবং ত্বককে সতেজ রাখে।
নিয়মিত ব্যায়াম: ব্যায়াম আপনার শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি আপনার ত্বক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে এবং যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমানো: অত্যধিক মানসিক চাপ বয়স বাড়ানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং অন্যান্য শিথিলকরণ কৌশলগুলি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
ভালো ঘুম: নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘুম আপনার শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের ক্ষতি থেকে বাঁচায়।
তাপ ও সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে সুরক্ষা: দীর্ঘ সময় সূর্যের তাপে থাকার কারণে ত্বক বয়সী হয়ে যেতে পারে। সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন এবং তাপদাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
তামাক ও মদ্যপান পরিহার: তামাক ও মদ্যপান শরীরের জন্য ক্ষতিকর, যা ত্বকের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এগুলো থেকে দূরে থাকলে আপনার শরীর ও ত্বক ভালো থাকবে।
রিলাক্সেশন ও আনন্দ: জীবনে সুখী ও রিলাক্স থাকতে হলে আপনার নিজস্ব আনন্দের জন্য সময় কাটান। এটি আপনার মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে।
যৌবন ধরে রাখতে কিছু বিশেষ ব্যায়াম আপনার শরীরকে শক্তিশালী, ফিট এবং সতেজ রাখতে সাহায্য করতে পারে। এই ব্যায়ামগুলো ত্বক, পেশি এবং শরীরের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে কার্যকরী। এখানে কিছু ব্যায়াম দেওয়া হলো যা আপনি নিয়মিতভাবে করতে পারেন:
১. পুশ-আপস (Push-ups):
- লাভ: পুশ-আপস আপনার পেশী শক্তিশালী করে এবং শরীরের ওপরের অংশ, বিশেষ করে বাহু, পিঠ এবং বুকের পেশীগুলোকে টোন করতে সাহায্য করে।
- কিভাবে করবেন: মাটিতে পা আর হাত রাখুন, শরীর সোজা রাখুন এবং বাহু ও কনুই বাঁকিয়ে শরীর নিচে নামিয়ে পরে আবার উপরে ঠেলুন।
২. স্কোয়াটস (Squats):
- লাভ: স্কোয়াটস পেট, নিতম্ব, পা এবং মেরুদণ্ডের পেশী শক্তিশালী করে। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরের লিগামেন্ট ও টিস্যু মজবুত করতে সাহায্য করে।
- কিভাবে করবেন: পা একটু ফাঁক রেখে দাঁড়িয়ে থাকুন, পিঠ সোজা রাখুন, হাঁটু ভেঙে নিচে নামুন এবং পায়ের পাতা মাটি থেকে তুলবেন না।
৩. প্ল্যাঙ্ক (Plank):
- লাভ: প্ল্যাঙ্ক পেট, কোমর এবং পিঠের শক্তিশালী পেশী তৈরি করতে সাহায্য করে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
- কিভাবে করবেন: হাত এবং পায়ের আঙ্গুল দিয়ে শরীরকে সমতলে সোজা রাখুন, কোমর নিচে না পড়ে সোজা অবস্থায় রাখুন।
৪. ইয়োগা (Yoga):
- লাভ: নিয়মিত ইয়োগা শরীরকে নমনীয় ও শক্তিশালী রাখে, এবং মানসিক চাপ কমায়।
- কিছু কার্যকরী আসন:
- বিল্ডিং পোজ (Mountain Pose): শরীরের এক্সেলেন্ট স্ট্যাবিলিটি এবং স্ট্রেন্থ তৈরি করে।
- ক্যাট-কাউ পোজ (Cat-Cow Pose): স্পাইন নমনীয় রাখে এবং পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ডাউনওয়ার্ড ডগ (Downward Dog): পেশী টোনিং এবং শরীরের শিথিলতার জন্য কার্যকরী।
৫. হাঁটা বা দৌড়ানো (Walking or Running):
- লাভ: নিয়মিত হাঁটা বা দৌড়ানো হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং শরীরের মেদ কমাতে সাহায্য করে, যা বয়স ধরে রাখতে সহায়ক।
- কিভাবে করবেন: দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটুন বা দৌড়ান। এটি আপনার হার্ট এবং ফুসফুসের জন্য ভালো।
৬. লেগ রেইজেস (Leg Raises):
- লাভ: পেটের পেশী টানটান রাখে এবং কোমরের নিচের অংশের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
- কিভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে পা সোজা রেখে উপরে তুলুন এবং কিছু সময়ের জন্য পা তুলে রাখুন, তারপর নামিয়ে দিন।
৭. বাইসেপ ক্রলস (Bicep Curls):
- লাভ: বাইসেপের পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং বাহুর শক্তি বৃদ্ধি করে।
- কিভাবে করবেন: হালকা ডাম্বেল নিয়ে হাতে ধরুন এবং হাত সোজা রেখে ধীরে ধীরে বাঁকান এবং আবার সোজা করুন।
৮. স্ট্রেচিং (Stretching):
- লাভ: শরীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করতে এবং পেশী শিথিল করতে স্ট্রেচিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ত্বককে টানটান রাখতে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস বা আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমায়।
- কিভাবে করবেন: নিয়মিতভাবে বিশেষ স্ট্রেচিং ব্যায়াম করতে পারেন, যেমন কাঁধের স্ট্রেচ, হিপ স্ট্রেচ, এবং পায়ের স্ট্রেচ।
৯. বাইসাইকেল ক্রাঞ্চ (Bicycle Crunch):
লাভ: পেটের পেশী শক্তিশালী করে এবং কোমরের অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে।
কিভাবে করবেন: মাটিতে শুয়ে হাঁটু ভেঙে, পা উপরে তুলে, একপাশে শরীরের অংশটুকু বাঁকান এবং বিপরীত হাত-পায়ের সাথে মেলান।
এই ব্যায়ামগুলো আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশে কাজ করবে, শারীরিক শক্তি বাড়াবে এবং সুস্থ ও তরতাজা রাখবে। নিয়মিতভাবে ব্যায়াম করলে বয়সের প্রভাব কম পড়বে এবং আপনি ফিট ও সুস্থ থাকতে পারবেন।
যৌবন নিয়ে কোরআনের আয়াত
কোরআনে যৌবন সম্পর্কিত কিছু আয়াত রয়েছে যা মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও সত্ত্বা সম্পর্কে আলোচনা করে। তবে, যৌবন বা শারীরিক বৃদ্ধি, বয়সের পরিবর্তন বা এর গুরুত্ব কোরআনে সাধারণভাবে নয়, বরং মানুষের জীবনের অংশ হিসেবে আলোচিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো যা যৌবন, বয়স, ও শরীরের পরিবর্তন সম্পর্কিত:
১. আল-নাহল (16:70)
"আর আল্লাহ যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, তারপর মৃত্যুর পর তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করবেন। আর তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন বয়সে পৌঁছাবে যে, তার শারীরিক শক্তি ও জ্ঞান ক্ষয় হয়ে যাবে। তোমরা জানবে না, কেননা আল্লাহ সর্বজ্ঞ।"
এই আয়াতটি মানব জীবনের পরিবর্তন, বয়সের বৃদ্ধির এবং যৌবনের পতনের বিষয়টি বুঝিয়ে দেয়। আল্লাহ বলেছেন, যুবক বা যুবতী হওয়ার পর মানুষ একদিন বয়সের কারণে দুর্বল হয়ে যায়।
২. আল-ফাতির (35:11)
"এবং তোমরা যা কিছু পেয়েছ, তা আল্লাহর এক অশেষ দান। আর তোমরা যতই কিছু ভালো কিছু কামনা করো, তাও আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হবে।"
এই আয়াতে আল্লাহ মানব জীবনের যে কোন পর্বে তার অনুগ্রহ ও দয়ার কথা বলেছেন, তা যৌবন বা বয়সের যে কোন সময় হতে পারে।
৩. আল-আনকাবুত (29:69)
"আর যারা আমাদের রাস্তায় সংগ্রাম করে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমাদের রাস্তায় পথ দেখাবো।"
এই আয়াতটি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মানুষের সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে। যৌবনেও এটি আমাদের জন্য দিকনির্দেশনা, যেখানে আল্লাহর পথে চলা ও সংগ্রাম করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
৪. আল-মুলক (67:15)
"তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে শয়তান ও অভ্যন্তরীণ শক্তি হিসেবে তৈরি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মধ্যে আস্থা এবং সন্তুষ্টি খুঁজে পাও।"
এখানে আল্লাহ পৃথিবীকে মানুষের জন্য প্রাচুর্য ও শক্তির উৎস হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা যৌবনকালেও প্রতিফলিত হতে পারে।
৫. আল-তাহরিম (66:6)
"হে যারা বিশ্বাসী, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে আগুন থেকে রক্ষা কর, যার জ্বালানি মানুষ ও পাথর।"
এই আয়াতে মানব জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, যেখানে যৌবনকালেও ধর্ম ও নৈতিকতার পথে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কোরআন যেহেতু মানুষকে তার জীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে সচেতন করে তোলে, এখানে বয়স, যৌবন, শক্তি ও তার অধিকার সম্পর্কে আল্লাহর আদেশ ও পরামর্শ রয়েছে।