হার্ট অ্যাটাক, যাকে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial Infarction) বলা হয়, এর প্রধান লক্ষণগুলো সাধারণত দ্রুত এবং তীব্রভাবে অনুভূত হয়। তবে লক্ষণগুলো বয়স, লিঙ্গ এবং ব্যক্তিগত শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। নিচে সাধারণ লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. বুকে ব্যথা বা চাপ
- বুকের মাঝখানে বা বাঁ পাশে শক্ত চাপ বা ভারী অনুভূতি হতে পারে।
- ব্যথা জ্বালাপোড়া, চেপে ধরা বা সংকোচনের মতো অনুভূত হতে পারে।
- ব্যথা কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় বা মাঝে মাঝে কমে আবার বাড়ে।
২. ব্যথা শরীরের অন্যত্র ছড়ানো
- ব্যথা কাঁধ, হাত (বিশেষত বাঁ হাত), পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৩. শ্বাসকষ্ট
- হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা শ্বাসকষ্ট অনুভূত হওয়া।
৪. অতিরিক্ত ঘাম
- অস্বাভাবিক ঘাম হওয়া, যা ঠান্ডা ঘামের মতো হতে পারে।
৫. মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা
- মাথা ঘোরা, হালকা অনুভব করা বা জ্ঞান হারানোর মতো অনুভূতি হতে পারে।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি
বমি বমি ভাব, বুক জ্বালা বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
৭. ক্লান্তি
কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই খুব বেশি ক্লান্তি অনুভব করা, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
৮. অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন
হার্টবিট দ্রুত বা অনিয়মিত হতে পারে।
করণীয়
হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- প্রথমে রোগীকে বসতে বা শুতে দিন।
- ৩০০ মি.গ্রা. অ্যাসপিরিন (যদি অ্যালার্জি না থাকে) চিবিয়ে খেতে দিন।
- নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান।
- হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার
হার্ট অ্যাটাকের প্রতিকার বলতে আমরা মূলত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে বুঝি। হার্ট অ্যাটাক হলে তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি এবং নিয়ম মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করা যায়।
১. প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা (প্রতিরোধ)
জীবনযাত্রার পরিবর্তন:
- সুস্থ খাদ্যাভ্যাস:
- সবুজ শাক-সবজি, ফল, সম্পূর্ণ শস্য, কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন (মাছ, ডাল, মুরগি) খান।
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ এবং চিনি কম খান।
নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
ধূমপান এবং মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান হৃদযন্ত্রের রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করুন:
- উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের প্রধান ঝুঁকি।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করুন:
- রক্তের গ্লুকোজ নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং ডায়াবেটিস ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিন।
কোলেস্টেরল কম রাখুন:
উচ্চ কোলেস্টেরল রক্তনালী ব্লক করে, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
মানসিক চাপ কমানো:
নিয়মিত মেডিটেশন বা ইয়োগার মতো চাপ কমানোর পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
২. হার্ট অ্যাটাক হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা
প্রাথমিক পদক্ষেপ:
- দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
- ৩০০ মি.গ্রা অ্যাসপিরিন (যদি অ্যালার্জি না থাকে) চিবিয়ে খেতে দিন, এটি রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে।
- অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক অক্সিজেন দেওয়া যেতে পারে।
হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা:
- ইসিজি (ECG) এবং রক্ত পরীক্ষা: হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত করতে করা হয়।
- থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি: জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করতে ইনজেকশন ব্যবহার।
- অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি: ব্লক হওয়া ধমনী খুলে দেওয়ার জন্য একটি স্টেন্ট বসানো হয়।
- করোনারি বাইপাস সার্জারি: যদি ধমনীগুলো মারাত্মকভাবে ব্লক থাকে।
৩. দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন
নিয়মিত ডাক্তারের ফলোআপে থাকা।
হৃদযন্ত্র পুনর্বাসন প্রোগ্রাম (Cardiac Rehabilitation): রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমর্থন প্রদান।
প্রয়োজনীয় ওষুধ যেমন ব্লাড থিনার, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধ, এবং রক্তচাপ কমানোর ওষুধ গ্রহণ করা।
৪. ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক এড়ানোর উপায়
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান ত্যাগ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
দ্রুত চিকিৎসা এবং সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতি গ্রহণ করলে হার্ট অ্যাটাক থেকে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব।