ইংরেজি সাল কখন থেকে শুরু হয়।খ্রিস্টাব্দ কখন থেকে শুরু হয়।খ্রিস্টপূর্ব কিভাবে গণনা করা হয়।ইংরেজি সাল গননার ইতিহাস

ইংরেজি সাল কখন থেকে শুরু হয়

ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ গণনার শুরু হয়েছিল ১ খ্রিস্টাব্দ (Anno Domini বা AD) থেকে। এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মের ধারণাগত বছরকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল।

এই ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন খ্রিস্টান সন্ন্যাসী ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে। তবে, খ্রিস্টাব্দের গণনা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে সপ্তম শতাব্দী থেকে, এবং তা ধীরে ধীরে ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে, এই ক্যালেন্ডারটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত এবং এটি বিশ্বব্যাপী সরকারি, বাণিজ্যিক, ও সামাজিক কাজে ব্যবহৃত হয়।

খ্রিস্টপূর্ব কিভাবে গণনা করা হয়

খ্রিস্টপূর্ব (BC) বা Before Christ গণনা সিস্টেমটি খ্রিস্টাব্দ (AD) গণনার বিপরীত। এটি সেই সময়কে নির্দেশ করে যা যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে ঘটেছিল। খ্রিস্টপূর্ব গণনা শুরুর পদ্ধতি হলো:

গণনার প্রাথমিক পদ্ধতি: খ্রিস্টপূর্ব সালগুলি 1 BC (খ্রিস্টের জন্মের আগের এক বছর) থেকে শুরু হয় এবং যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগের বছরগুলোকে ক্রমশ পিছিয়ে নিয়ে গণনা করা হয়।

  • উদাহরণ: 2 BC হলো 2 বছর যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে, এবং 3 BC হলো 3 বছর আগে ইত্যাদি।

খ্রিস্টপূর্ব এবং খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্পর্ক: খ্রিস্টপূর্ব সাল এবং খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোনো "শূন্য সাল" নেই। অর্থাৎ, যিশু খ্রিস্টের জন্মের পরপরই 1 AD শুরু হয়, এবং তার আগে 1 BC ছিল।

  • উদাহরণ: 1 BC এর পর 1 AD আসে।

তাই, খ্রিস্টপূর্ব গণনা হল সময়ের আগের দিকের প্রতীক, যা যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে সময়কে চিহ্নিত করে, আর খ্রিস্টাব্দ (AD) তার জন্মের পরের সময় নির্দেশ করে।

প্রতিষ্ঠা: খ্রিস্টপূর্ব-খ্রিস্টাব্দ (BC-AD) ক্যালেন্ডার ব্যবস্থা প্রথমে প্রবর্তন করেছিলেন ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে, যখন তিনি খ্রিস্টের জন্মের বছরকে ভিত্তি করে ক্যালেন্ডারের গণনা শুরু করেন।

ইংরেজি সাল গননার ইতিহাস

ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ (AD) গণনার ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সূচনা হয়েছিল খ্রিস্টান ঐতিহ্য অনুসারে। এই ক্যালেন্ডার সিস্টেমের মূল ভিত্তি হলো যিশু খ্রিস্টের জন্ম, যদিও এটি তৈরি হয়েছিল কিছু পরবর্তী শতকে। এখানে তার ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলো:

১. প্রাথমিক ক্যালেন্ডার ব্যবস্থাগুলি
খ্রিস্টাব্দের গণনার প্রাথমিক সিস্টেমগুলি ছিল রোমান ক্যালেন্ডার এবং জুলিয়ান ক্যালেন্ডার।

  • রোমান ক্যালেন্ডার: রোমানরা প্রাচীনকালে যে ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত, সেটি ছিল একটি চন্দ্র-মাস ভিত্তিক ক্যালেন্ডার। কিন্তু এটি সূর্যের চলনের সাথে সঠিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না, তাই এতে অনেক সমস্যা দেখা দিত।
  • জুলিয়ান ক্যালেন্ডার: জুলিয়াস সিজার ৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। এই ক্যালেন্ডারটি সূর্যের চলনের ভিত্তিতে ছিল এবং বছরের দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬৫.২৫ দিন, যার ফলে প্রতি ৪ বছরে একটি অধিবর্ষ যোগ করা হত। এটি ক্যালেন্ডারের ব্যতিক্রমী কাঠামোকে উন্নত করেছিল, তবে এটির সাথে সূর্যের প্রকৃত চক্রের কিছু বৈষম্য ছিল।
২. খ্রিস্টাব্দের গণনার সূচনা
খ্রিস্টাব্দ বা Anno Domini (AD) এর গণনা শুরুর পদ্ধতি ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে ডায়োনিসিয়াস এক্সিগুয়াস নামে এক খ্রিস্টান সন্ন্যাসী দ্বারা প্রবর্তিত হয়। তিনি যিশু খ্রিস্টের জন্মকে ভিত্তি করে সাল গণনা শুরু করার প্রস্তাব দেন। তার এই পদ্ধতির উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টের জন্ম সালকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের তারিখের গণনা করা।

ডায়োনিসিয়াসের মতে, যিশু খ্রিস্টের জন্ম ১ খ্রিস্টাব্দ (AD 1) সালেই হয়েছিল। কিন্তু ঐতিহাসিক গবেষণায় জানা যায়, যিশুর প্রকৃত জন্ম সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৪ থেকে ৬ সালের মধ্যে।
৩. গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সংস্করণ
পোপ গ্রেগরি XIII ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। এই ক্যালেন্ডারটি জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের কিছু ত্রুটি সংশোধন করার জন্য ছিল, বিশেষত সূর্যের প্রকৃত চক্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে সঠিকভাবে অধিবর্ষের হিসাব করা হয়, এবং এটি আজকের বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মধ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

৪. খ্রিস্টাব্দ এবং খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে বিভাজন
এটি লক্ষ্যণীয় যে, খ্রিস্টাব্দ (AD) এবং খ্রিস্টপূর্ব (BC) সালগুলোর মধ্যে কোনো শূন্য সাল নেই। 1 BC এর পর 1 AD শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্বের সালগুলো যিশু খ্রিস্টের জন্মের আগে এবং খ্রিস্টাব্দের সালগুলো তার জন্মের পরে নির্ধারিত হয়েছে।

৫. বিশ্বব্যাপী গ্রহণ
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারটি ধীরে ধীরে ইউরোপ এবং পরে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়। এটি বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশ এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য একটি মানক ক্যালেন্ডার সিস্টেম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার
ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দের গণনার ইতিহাস একটি দীর্ঘ এবং জটিল প্রক্রিয়া ছিল, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা সংস্করণের মধ্য দিয়ে আজকের বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। এটি মূলত যিশু খ্রিস্টের জন্মের ভিত্তিতে তৈরি হলেও, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানসম্মত পরিবর্তনের মাধ্যমে এর ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

Post a Comment