প্রিয় দর্শক ,আজকে আমরা বাংলা ও আরবি সাল সম্পর্কে জানবো এবং ক্যালেন্ডার দেখবো । আপনারা চাইলে সংগ্রহ করতে পারেন।
বাংলা সাল
বাংলা সাল, যা বাংলা পঞ্জিকা নামে পরিচিত, বাংলাদেশের এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা রাজ্যে ব্যবহৃত একটি ঐতিহ্যবাহী পঞ্জিকা। এটি মূলত সৌর বছর গণনা পদ্ধতিতে তৈরি এবং হিন্দু পঞ্জিকার ভিত্তিতে প্রবর্তিত। বাংলা সাল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মোগল সম্রাট আকবরের সময়কার "আকবারি-ইলাহী" ক্যালেন্ডারের আধুনিক রূপ।
বাংলা সালের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলি:
উৎপত্তি: বাংলা সনের সূচনা হয় ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আকবরের সময়। এটি মুলত "আকবারি-ইলাহী" নামে প্রবর্তিত হয় কৃষি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাকে সহজতর করার জন্য। বাংলা সন হিজরি ও সূর্য পঞ্জিকার সমন্বয়ে তৈরি।
সৌর পঞ্জিকা: বাংলা সন সৌর বছর অনুসরণ করে, যা হিন্দু বর্ষপঞ্জির মতো। এতে বছরটি ১২ মাসে বিভক্ত এবং প্রতিটি মাসের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ বা ৩১ দিন।
মাসের নাম ও উৎস: বাংলা মাসগুলির নাম প্রাচীন নক্ষত্রমালা বা রাশিচক্র থেকে নেওয়া হয়েছে:
- বৈশাখ
- জ্যৈষ্ঠ
- আষাঢ়
- শ্রাবণ
- ভাদ্র
- আশ্বিন
- কার্তিক
- অগ্রহায়ণ
- পৌষ
- মাঘ
- ফাল্গুন
- চৈত্র
নতুন বছর: বাংলা সনের প্রথম মাস বৈশাখ, আর বাংলা নববর্ষ (পহেলা বৈশাখ) অত্যন্ত উত্সবমুখর পরিবেশে পালিত হয়। এটি গ্রীষ্মকালীন ফসল কাটা এবং রাজস্ব শোধের সময় হিসাবে ব্যবহৃত হতো।
বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতি:
বাংলাদেশে: পহেলা বৈশাখ জাতীয় উৎসব। এই দিনে মেলা, হালখাতা (ব্যবসায়ীদের পুরাতন হিসাব সমাপ্তি) এবং বিশেষ খাবার (যেমন পান্তা ভাত ও ইলিশ মাছ) প্রচলিত।
ভারতে: পশ্চিমবঙ্গে বাংলা সন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উত্সব বাংলা সনের উপর ভিত্তি করে পালিত হয়।
বাংলা একাডেমি সংস্করণ: ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি বাংলা সাল সংস্কার করে। এর ফলে মাসের দিন নির্ধারণে নির্দিষ্ট হিসাব গৃহীত হয়। এই সংস্কার অনুযায়ী, বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রতিটি মাসে ৩১ দিন এবং কার্তিক থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতিটি মাসে ৩০ দিন থাকে।
বাংলা সাল আজকের দিনে:
বাংলা সাল বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি ব্যবসা-বাণিজ্য, চাষাবাদ এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়।
আরবি সাল বা হিজরি সন হলো চন্দ্র পঞ্জিকার উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি ইসলামিক ক্যালেন্ডার। এটি ইসলামী বিশ্বের ধর্মীয় কার্যক্রম, উত্সব, এবং ঐতিহাসিক ঘটনা নির্ধারণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
আরবি সনের উৎপত্তি:
শুরু: আরবি সনের শুরু হয় ৬২২ খ্রিস্টাব্দে, যখন হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এই ঘটনাকে ইসলামিক ক্যালেন্ডারের ভিত্তি ধরা হয়, এবং এই সনকে হিজরি সন বলা হয়।
চন্দ্র পঞ্জিকা: হিজরি সন সম্পূর্ণরূপে চন্দ্র মাসের উপর নির্ভর করে। এতে একটি বছর ১২টি চন্দ্রমাস নিয়ে গঠিত। প্রতিটি মাস গড়ে ২৯ বা ৩০ দিনের হয়, যার ফলে হিজরি বছরটি গ্রেগরিয়ান বছরের তুলনায় প্রায় ১০-১২ দিন কম।
আরবি মাসের নাম:
হিজরি বছরের ১২টি মাসের নাম:
- মুহাররম (মহান মাস)
- সফর
- রবিউল আউয়াল
- রবিউস সানি
- জমাদিউল আউয়াল
- জমাদিউস সানি
- রজব
- শাবান
- রমজান (রোজার মাস)
- শাওয়াল
- জ্বিলক্বদ
- জ্বিলহজ্জ (হজের মাস)
হিজরি সনের বৈশিষ্ট্য:
ধর্মীয় গুরুত্ব:
আরবি সনের অনেক মাসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ঘটনা জড়িত। যেমন:
রমজান মাস: সিয়াম পালন এবং কুরআন অবতীর্ণের মাস।
জিলহজ্জ: পবিত্র হজ পালনের সময়।
মুহাররম: ইসলামিক নতুন বছরের প্রথম মাস এবং কারবালার ঐতিহাসিক ঘটনা।
ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা চাঁদ দেখার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।
চন্দ্র বছরের দৈর্ঘ্য:
একটি হিজরি বছর প্রায় ৩৫৪ বা ৩৫৫ দিন হয়। এটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের (৩৬৫ বা ৩৬৬ দিন) তুলনায় ১০-১২ দিন কম।
এই কারণে হিজরি তারিখ প্রতি বছর গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের তুলনায় পিছিয়ে যায়।
বিশ্বব্যাপী প্রচলন:
আরবি সন মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মীয় ও আনুষ্ঠানিক কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি সৌদি আরব, ইরান, আফগানিস্তান, এবং কিছু মুসলিম প্রধান দেশে সরকারিভাবে ব্যবহৃত হয়।
আরবি সাল আজকের সমাজে:
- আরবি সন মুসলমানদের ধর্মীয় জীবন এবং ঐতিহ্যের একটি অপরিহার্য অংশ। এটি রোজা, হজ, ঈদ এবং অন্যান্য ধর্মীয় দিন নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।
- যদিও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার বিশ্বব্যাপী প্রচলিত, মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় কার্যক্রমের জন্য হিজরি সন মেনে চলে।