মহরম মাসের ফজিলত।মহররম মাসের রোজার ফজিলত।মহরম মাসের ইতিহাস।মহররম মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

মহরম মাসের ফজিলত

মহরম মাস ইসলামী চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাস এবং এটি অত্যন্ত পবিত্র ফজিলতপূর্ণ মাস হিসেবে গণ্য। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে মহরম মাস আল্লাহর চারটি হারাম (পবিত্র) মাসের একটি, যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ এবং ইবাদত-বন্দেগীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

মহরম মাসের উল্লেখযোগ্য ফজিলতগুলো হলো:

. আশুরার দিন

মহরম মাসের ১০ তারিখ, যা আশুরা নামে পরিচিত, অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এই দিনটি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন নবীর জীবনে এই দিনে বিশেষ ঘটনা ঘটেছে বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। যেমন:

  • নবী মূসা (.) এবং তার জাতি ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
  • হজরত নূহ (.)-এর নৌকা জুদি পর্বতে অবতরণ করেছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"
আশুরার দিনে রোজা রাখা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।"
(
সহিহ মুসলিম, হাদিস: 1162)

. মাসজুড়ে ইবাদতের তাগিদ

মহরম মাসে বিশেষ ইবাদতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"
রমজানের পর মহরমের রোজাগুলো আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়।"
(
সহিহ মুসলিম, হাদিস: 1163)

. চারটি পবিত্র মাসের একটি

আল-কুরআনে বলা হয়েছে:
"
নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান অনুযায়ী মাসের সংখ্যা বারোটি, তার মধ্যে চারটি হলো পবিত্র।"
(
সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩৬)
মহরম মাস এই চারটি পবিত্র মাসের একটি, যেখানে ন্যায়-অন্যায়ের বিষয়গুলোতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।

. ইতিহাস শিক্ষার মাস

মহরম মাসে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ধৈর্য, ত্যাগ আত্মত্যাগের শিক্ষা পাওয়া যায়। বিশেষত, কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য ত্যাগ ধৈর্যের একটি অনন্য উদাহরণ।


মহরম মাসে করণীয়:

  • আশুরার দিন রোজা রাখা।
  • ইবাদত-বন্দেগী বৃদ্ধি করা।
  • গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং বেশি বেশি তওবা করা।
  • কারবালার ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়ে ন্যায় সত্যের পথে চলা।

মহরম মাসে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য বেশি বেশি নফল ইবাদত করা পাপ থেকে বিরত থাকা আমাদের কর্তব্য।

 মহররম মাসের রোজার ফজিলত

মহররম মাসের রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে, যা হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত। এটি ইসলামের চারটি পবিত্র মাসের একটি, এবং এই মাসে ইবাদত-বন্দেগীর গুরুত্ব বাড়ে। বিশেষত, আশুরার রোজা (মহররমের ১০ তারিখ) একটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ইবাদত হিসেবে প্রমাণিত।

. মহররম মাসের রোজার ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"
রমজানের পর সর্বাধিক ফজিলতপূর্ণ রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।"
(
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৩)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানের পর মহররমের নফল রোজাগুলো আল্লাহর কাছে খুব প্রিয়। তাই এই মাসে বেশি বেশি রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।


. আশুরার রোজার বিশেষ ফজিলত

আশুরার দিন (মহররমের ১০ তারিখ) রোজা রাখা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"
আশুরার দিনের রোজা এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।"
(
সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় হিজরত করার পর দেখেন, ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। কারণ, দিন হজরত মূসা (.) এবং তার জাতি ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি পেয়েছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"
আমরা মূসার সঙ্গে অধিকতর সম্পৃক্ত।"
(
সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০৪)
তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখতেন এবং সাহাবিদের তা রাখতে উৎসাহিত করতেন।


. আশুরার রোজার পাশাপাশি অতিরিক্ত রোজা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখার পাশাপাশি বা ১১ তারিখেও রোজা রাখা উত্তম, যেন ইহুদিদের অনুকরণ না হয়। তিনি বলেন:
"
তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং তার আগে বা পরে একটি রোজা রাখো।"
(
মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২১৫৪)


উপসংহার

মহররম মাসে রোজা রাখা এবং বিশেষত আশুরার রোজা রাখা একজন মুমিনের জন্য মহান সওয়াবের কাজ। এই রোজাগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে অতীতের গুনাহ ক্ষমার আশা করা যায়। পাশাপাশি এটি আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম।

মহরম মাসের ইতিহাস

মহরম মাস ইসলামের চান্দ্রবর্ষের প্রথম মাস এবং এটি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে অনেক ঐতিহাসিক ধর্মীয় ঘটনা ঘটেছে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয় অনুপ্রেরণাদায়ক। মহরম মাসের ইতিহাস এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:


. আল্লাহর পছন্দের মাস

মহরম মাস চারটি "হারাম" বা পবিত্র মাসের একটি, যেখানে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ এবং ইবাদতের প্রতি বিশেষ জোর দেওয়া হয়। কুরআনে বলা হয়েছে:
"
নিশ্চয়ই মাসের সংখ্যা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বারোটি, তার মধ্যে চারটি হলো পবিত্র।"
(
সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৩৬)
মহরম মাস তার মধ্যে অন্যতম।


. আশুরার দিনের ঐতিহাসিক ঘটনা

মহরম মাসের ১০ তারিখ (আশুরা) বিশেষভাবে স্মরণীয়, কারণ এই দিনে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। হাদিস ইসলামী ইতিহাস অনুযায়ী এই দিনে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো ঘটেছে:

  • হজরত নূহ (.): নূহ (.)-এর নৌকা মহাপ্লাবনের পর জুদি পর্বতে ভিড়েছিল।
  • হজরত মূসা (.): মূসা (.) এবং বনি ইসরাইল ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
  • হজরত ইউনুস (.): ইউনুস (.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।
  • হজরত আইয়ুব (.): দীর্ঘ রোগভোগের পর আইয়ুব (.) সুস্থতা লাভ করেছিলেন।

. কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা

মহরম মাস মুসলিম ইতিহাসে একটি বিশেষ দুঃখজনক ঘটনার কারণে বিখ্যাত। ৬১ হিজরির এই মাসে ইমাম হুসাইন (রা.) তাঁর পরিবার কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদের বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন।

কারবালার ঘটনা:

  • ইমাম হুসাইন (রা.) ইসলাম ন্যায়বিচার রক্ষার জন্য ইয়াজিদের অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
  • মহরমের ১০ তারিখে (আশুরার দিন) কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীরা শহীদ হন।
  • কারবালার এই ত্যাগ মুসলিম উম্মাহকে সত্য ন্যায়ের পথে অটল থাকার শিক্ষা দেয়।

. ইবাদতের গুরুত্ব

ইসলামী শরিয়তে মহরম মাসে বিশেষ ইবাদত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষত আশুরার দিন রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এই মাসে বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি, তওবা আত্মশুদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে।


মহরম মাসের শিক্ষা:

  • ধৈর্য, ত্যাগ এবং সত্যের প্রতি অবিচল থাকা।
  • আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা।
  • জুলুম অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা।

মহরম মাসের ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করে।

Post a Comment