যুদ্ধ নয় শান্তি ও উন্নতি চাই ।যুদ্ধ নিয়ে রচনা। যুদ্ধ নিয়ে অনুচ্ছেদ


যুদ্ধ নয় শান্তি ও উন্নতি চাই 
দেবাশীষ দাস 

     মানব সভ্যতার সাথে যুদ্ধ শব্দটি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে যুদ্ধের বিভীষিকা ক্রমশ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রাচীন কালে মানুষ যুদ্ধ করতো তীর তলোয়ার দিয়ে। তারপর আসে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। তারপর মানুষ ব্যবহার করল পারমাণবিক অস্ত্র। একটি অস্ত্রের আঘাতে লাখ লাখ নিরীহ মানুষকে এক লহমায় হত্যা করা যায়। কিন্তু এত যুদ্ধ কেন, এত হিংসা কেন। বাঘ সিংহের মতো বনের পশুদেরকে মানুষ হিংস্র প্রাণীর তকমা দিয়েছে। কিন্তু আসলে সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী তো মানুষ। কারণ বাঘ সিংহের মতো প্রাণীরা ক্ষুধা নিবারণের জন্য বনের নিরীহ পশুদের হত্যা করে খায়। কিন্তু কখনো স্বজাতির পশুদের মধ্যে কি এতো হিংস্র লড়াই করে ? একমাত্র মানুষই এমন প্রাণী যারা নিজেদের মধ্যে হিংসা হানাহানি যুদ্ধ করে। তবে সব মানুষ হিংস্র হয় না, সবাই যুদ্ধ করতে চায় না। মুষ্টিমেয় কিছু লোভী মানুষ পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ দখল করার লোভে, সব মানুষের উপর রাজত্ব করার লোভে যুদ্ধ করে। কিছু নিরীহ বোকা মানুষ ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে যুদ্ধের পক্ষে কথা বলে। কিন্তু যুদ্ধের দ্বারা মানুষ আজ পর্যন্ত কি অর্জন করতে পেরেছে ? যুদ্ধের ফলে কয়জন মানুষ লাভবান হয়েছেন ? 
     যুদ্ধ কখনোই মানব জাতির জন্য কল্যাণকর নয়। যুদ্ধ কেবল ধ্বংস ডেকে আনে। যুদ্ধের পরিণতি সর্বদাই দুঃখদায়ক। যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। নিরীহ সাধারণ মানুষ যাঁরা যুদ্ধের সাথে কোনো ভাবে জড়িত নয়, তারা অকারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কতশত মায়ের বুক শূন্য হয় যুদ্ধের ফলে। যুদ্ধে যেসকল সৈন্যরা শহীদ হন, তারা সবাই দেশের কৃষক ক্ষেতমজুর শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান। যারা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য, নিজ দেশ মাকে রক্ষার জন্য আত্মবলিদান করেন। যুদ্ধের ফলে শহীদ হন অগণিত নিরীহ সৈনিক। এক দেশের শাসক আরেক দেশ দখল করবে, তাতে সৈন্যদের কি লাভ ? যে মা নিজ সন্তানকে হারান কেবল তিনিই দুঃখটা উপলব্ধি করতে পারেন। লোভী এবং হিংস্র শাসকরা কখনো এই দুঃখ উপলব্ধি করতে পারবে না। কারণ মানুষের সুখ দুঃখে ওদের কিছু আসে যায় না। ওরা কেবল নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়। মানুষ কতটা হিংস্র এবং অমানবিক হতে পারে তার চূড়ান্ত নিদর্শন হিরোশিমা ও নাগাসাকি। মানুষ কতটা হিংস্র হলে এভাবে অসহায় নিরীহ মানুষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করতে পারে। কিন্তু যারা এতো হত্যালীলা এতো ধ্বংসযজ্ঞ করেছে তারাই বা কি পেয়েছে ? কেউ কি অমরত্ব লাভ করতে পেরেছে ? অতীতে যারা হিংস্র নিষ্ঠুর শাসক ছিল তাদের সবার তো মৃত্যু হয়েছে। আজও যারা হিংস্র শাসকরা আছেন, যারা জগতজয় করতে ইচ্ছুক তাদেরও মৃত্যু হবে। কেউ তো চিরকাল বেঁচে থাকবে না। তাহলে এতো হিংসা কেন, যুদ্ধ কেন ? যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে ততদিন হিংসা নয়, সবাইকে ভালোবেসে জীবনটা উপভোগ করলে ক্ষতি কী ? যারা মানুষের উপর অত্যাচার করে, মানুষ তাদেরকে ঘৃণার সাথে স্মরণ করে। মানুষকে ভালোবেসে মানুষের ভালবাসা কুড়িয়ে নিলে ক্ষতি কি ? 
     মানুষ যে পরিমাণ টাকা মানুষের ক্ষতি করার জন্য খরচ করে সেই পরিমাণ টাকা মানুষের উন্নয়নের জন্য খরচ করলে পৃথিবী কতো সুন্দর হতো। বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরির জন্য যে গবেষণা করেন, সেই গবেষণা মানব জাতির কল্যাণের জন্য করলে পৃথিবী আরো সুন্দর হতো। প্রতিরক্ষা খাতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়, অস্ত্রশস্ত্র ক্রয় ও রক্ষণাবক্ষেণে যে পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়, সেই পরিমাণ টাকা দেশের উন্নয়নে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে খরচ করলে কতো ভালো হতো। বিশ্বে কেউ ক্ষুধার্ত গৃহহীন অশিক্ষিত থাকত না, কাউকে বিনাচিকিৎসায় মরতে হতো না। পৃথিবীর সব মানুষ সুখি হতো। পৃথিবীটা তাহলে কত সুন্দর হতো ভাবুন তো। মৃত্যু সবার হয়, অত্যাচারী শাসকদেরও মৃত্যু হয়। লোভী এবং হিংস্র শাসকরা যদি সমগ্র জগৎ জয় করার চেষ্টা না করে কেবল নিজ দেশের উন্নয়নে মনোযোগ দিতেন, শুধু নিজ দেশের জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতন তাহলে পৃথিবী আরো সুন্দর হতো। দেশের নাগরিকদের জীবন সুখের হতো, শাসকদেরকে মানুষ সর্বদা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে স্মরণ করতো। তাহলে এতো হিংসা কেন, এতো যুদ্ধ কেন ? আমরা কি হিংসা ত্যাগ করে ভালোবাসার দ্বারা পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারি না ? আমরা কি ধ্বংসের কথা না ভেবে উন্নয়নের কথা ভাবতে পারি না ? মানবজাতি কি পারে না জগৎ জুড়ে এক সুষ্ঠু সুন্দর শান্তিপূর্ণ মানব সভ্যতা গড়ে তুলতে ? তাহলে আসুন সবাই হিংসা ত্যাগ করি, যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। চারিদিকে আওয়াজ উঠুক আমরা যুদ্ধ নয় শান্তি চাই।

Post a Comment