বড়দিনের ছড়া
বড়দিন বড় নয় ঘন্টার নিরিখে,
বড় নয় সে যে শুধু উৎসব-হিড়িকে।
মানুষের বেশে আজ এসেছেন ঈশ্বর,
বড় তিনি, পায়ে তাই নতজানু বিশ্ব!
এই দিন বড় তাঁর মহিমার পরশে,
যত আছে ক্ষুদ্রতা, হোক আজ বড় সে!
ছোট মন বড় হোক, হোক না সে মুক্ত
হিংসুটেপনা আজ মানুষ ছাড়ুক তো।
দেখবে না দোষ কারো, ধরবে না খুঁত-ও সে,
বহুদিন ছোট আছে, বড় হোক দ্রুত সে!
জ্ঞানের পরিধি যেন বড় হয় নিত্য,
বড় হোক চিন্তা ও ভাবনার বৃত্ত।
হৃদয়ের বড় মাপ আজ বড় কাম্য,
বড় হোক সম্প্রীতি, শান্তি ও সাম্য।
বড় হোক যুক্তির তরবারি-ফলাটি,
অন্যায়ে বড় হোক প্রতিবাদী গলাটি।
শোষণ ও অপরাধে গ্রামে আর শহরে
মিছিল ও জমায়েত বড় হোক বহরে।
বড় হোক প্রতিরোধ শোষণ ও দখলের-
বড়দিন আজ ভাই বড় হোক সকলের!
বড়দিনের কবিতা
যা দেখো সবই লিখে যাও কালি কলম নিয়ে শব্দে পূর্ণ করো খাতার পাতা!
তমাল সাহা
শীত এলে
শীত এলে
ঘন ঘন ছুঁয়ে ফেলি তোমার ঘরবাড়ি।
তুমি বলো, আরো কাছে এসো
দূরত্ব বাড়াও কেন
ভাবই তো কাছের জিনিস
দূর করে দাও সব আড়ি!
শাব্দিক শীত
এই শীতে
কাছে ও পাশে শব্দ দুটি নিয়ে
কাতরতা বেড়ে যায়।
পাশে বললে পাশাপাশি
কাছে বললে মুখোমুখি বোঝায়!
মনে হয় কাছে শব্দটির গুরুত্ব বেশি।
কেউ অতি দূর থাকলেও
মুখটি ভেসে ওঠে, চলে আসে কাছে
বুকে জড়িয়ে উষ্ণতা পাওয়া যায়।
শীত বলে,
পাশে মানে পাশেই থাকো,
ভালোবেসে কাছে এলে না হায়!
বড়দিন
শীত বাড়ে ওরা কাঁপে
টুকরো টাকরা কাঠ করে জড়ো
একজন বলে ভালো হতো আগুনটা যদি হতো আরো বড়ো
পেটের আগুন কাঠের আগুন দুই-ই একাকার!
তুমি আমি শীতবস্ত্রে নিজেদের সাজাই
প্রস্তুতি চলে পার্কস্ট্রিটে যাবার।
বড়দিনের খিদে
বড়দিন তো বড়ো
তুমি তো আনন্দ করো!
দিন বড়ো হলে গরিবের বেশি খিদে পায়
তারা চায় বেলা যেন দ্রুত গড়ায়
তারা তো খিদে আর শীতে জড়োসড়ো!
সান্তাক্লজ
সান্তাক্লজ আসে
জবরদস্ত শীতবস্ত্র জোব্বা তার গায়ে, জম্পেস টুপি মাথায়
কেক লজেন্স ভর্তি তার হাত!
এইসব বড়লোকি খাবারে কি পেট ভরে?
গরিবেরা চায় শুধু ভাত!
পরিত্রাতা যীশু
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
প্রভু যীশু ফিরে এসো,
আমাদের ভালবাসো,
প্রভু তোমারই হউক জয়,
প্রভু তোমারই হউক জয়।
ভালবাসার বিনিময়ে,
সবাকার পাপ লয়ে,
ক্রুশেতে বিদ্ধ হয়ে প্রাণ
দিলে ওগো জোতির্ময়,
প্রভু তোমারই হউক জয়,
প্রভু তোমারই হউক জয়।
সবারে বেসেছো ভালো,
তুমি জগতের আলো,
তোমার অপার মহিমা।
মানুষকে ভালবেসে,
মানুষের কাছে এসে,
শিখাইলে করিতে ক্ষমা।
প্রভু যীশু ফিরে এসো,
আমাদের ভালবাসো,
প্রভু তোমারই হউক জয়,
প্রভু তোমারই হউক জয়।
হিংসা দিয়ে নয়,
ভালবাসা দিয়ে তুমি
করেছো জয় সবাকার হৃদয়।
প্রভু তোমারই হউক জয়,
ওগো প্রভু, তোমারই হউক জয়।
তুমি অন্তর্যামী,
মোর জীবনস্বামী,
পরম পিতা তুমি যে মহান।
তব ভালবাসায়,
তব স্নেহছায়ায়,
তব করুণায় পাপী পায় পরিত্রাণ।
হে প্রভু তুমি যে মহান।
মৃতজনে কর জীবন দান।
পাপীরে করহ পরিত্রাণ।
কলকাতার যীশু
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
লালবাতির নিষেধ ছিল না,
তবুও ঝড়ের বেগে ধাবমান কলকাতা শহর
অতর্কিতে থেমে গেল;
ভয়ঙ্করভাবে টাল সামলে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল
ট্যাক্সি ও প্রাইভেট, টেমপো, বাঘমার্কা ডবল-ডেকার।
‘গেল গেল’ আর্তনাদে রাস্তার দুদিক থেকে যারা
ছুটে এসেছিল—
ঝাঁকামুটে, ফিরিওয়ালা, দোকানি ও খরিদ্দার—
এখন তারাও যেন স্থির চিত্রটির মতো শিল্পীর ইজেলে
লগ্ন হয়ে আছে।
স্তব্ধ হয়ে সবাই দেখছে,
টালমাটাল পায়ে
রাস্তার এক-পার থেকে অন্য পারে হেঁটে চলে যায়
সম্পূর্ণ উলঙ্গ এক শিশু।
খানিক আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে চৌরঙ্গিপাড়ায়।
এখন রোদ্দুর ফের অতিদীর্ঘ বল্লমের মতো
মেঘের হৃৎপিণ্ড ফুঁড়ে
নেমে আসছে;
মায়াবী আলোয় ভাসছে কলকাতা শহর।
স্টেটবাসের জানালায় মুখ রেখে
একবার আকাশ দেখি, একবার তোমাকে।
ভিখারি-মায়ের শিশু,
কলকাতার যিশু,
সমস্ত ট্রাফিক তুমি মন্ত্রবলে থামিয়ে দিয়েছ।
জনতার আর্তনাদ, অসহিষ্ণু ড্রাইভারের দাঁতের ঘষটানি,
কিছুতে ভ্রুক্ষেপ নেই;
দু’দিকে উদ্যত মৃত্যু, তুমি তার মাঝখান দিয়ে
টলতে টলতে হেঁটে যাও।
যেন মূর্ত মানবতা, সদ্য হাঁটতে শেখার আনন্দে
সমগ্র বিশ্বকে তুমি পেয়ে চাও
হাতের মুঠোয়। যেন তাই
টাল্মাটাল পায়ে তুমি
পৃথিবীর এক-কিনার থেকে অন্য-কিনারে চলেছ।
ক্রিসমাস বড়দিন
- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ক্রিসমাস বড়দিন ভারি ধূম হয়,
গীর্জা ঘরে ঘণ্টা বাজে প্রভাত সময়।
যীশুর প্রার্থনা হয় প্রথমে প্রভাতে,
প্রার্থনা সঙ্গীত সবে গাহে একসাথে।
ক্রিসমাস বড়দিন ভারি ধূমধাম,
হাসে খেলে নাচে গায় নাহিক বিরাম।
স্যান্টাক্লজ সবাকারে দেন উপহার,
সুমিষ্টান্ন কেক আদি বিবিধ প্রকার।
ক্রিসমাস বৃক্ষ এক শোভিত অঙ্গনে,
ফুলমালা সুসজ্জিত আবাস ভবনে।
শিশু বৃদ্ধ যুবা সবে উত্সবে মাতে,
কেক কাটি সকলেই খায় একসাথে।
রাতে কত জ্বলে আলো বিবিধ প্রকার,
ক্রিসমাস উত্সবে আলোর বাহার