বাংলা কবিতা একটি সমৃদ্ধ এবং গভীর সাংস্কৃতিক ধারার প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রমুখ কবিরা বাংলা সাহিত্যে অনবদ্য অবদান রেখেছেন। সৃষ্টিশীলতার মধ্যে তারা কবিতায় মানবিক অনুভূতি, প্রকৃতি, প্রেম ও সমাজের চিত্র ফুটিয়ে তোলেন। রবীন্দ্রনাথের "গীতাঞ্জলি" কবি হিসেবে তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করায়। এখানে ঈশ্বর, প্রকৃতি ও মানবতার সম্পর্ক beautifully উপস্থাপন করা হয়েছে। নজরুল ইসলামের কবিতা বিশেষত প্রতিবাদ, মুক্তি ও সাম্যের আওয়াজ ধরে। তাঁর "চল চল না হলে" কবিতায় স্বাধীনতার সনদ বিঁধে যায়। সুকান্তের কবিতাগুলিতে লক্ষ করো জীবন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত।
এছাড়াও বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে আধুনিক কবি হিসেবে শুদ্ধি ও অন্যান্য সময়ে সাম্প্রতিক বিষয়গত কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এভাবে, বাংলা কবিতা একটি আবেগময় এবং সামাজিক সংজ্ঞা, যা সংখ্যাধিক্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে একটি জীবনমুখী বার্তা বহন করে। এই কবিতার মহিমার মধ্যে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, চিন্তা ও অনুভূতির একটি স্বাধীন দ্বার উন্মুক্ত করে। বাংলা কবিতা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ, যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হলেও, সবসময় প্রাণবন্ত ও Pro Relevant থাকছে। এটা শুধু সাহিত্য নয়, একটি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।আজকে কিছু সেরা বাংলা কবিতা পড়বো।
অনেক ছিল বলার
কাজি নজরুল ইসলাম
অনেক ছিল বলার, যদি সেদিন ভালোবাসতে।
পথ ছিল গো চলার, যদি দু’দিন আগে আসতে।
আজকে মহাসাগর-স্রোতে
চলেছি দূর পারের পথে
ঝরা পাতা হারায় যথা সেই আঁধারে ভাসতে।
গহন রাতি ডাকে আমায় এলে তুমি আজকে।
কাঁদিয়ে গেলে হায় গো আমার বিদায় বেলার সাঁঝকে।
আসতে যদি হে অতিথি
ছিল যখন শুকা তিথি
ফুটত চাঁপা, সেদিন যদি চৈতালী চাঁদ হাসতে।
অনামিকা
কাজী নজরুল ইসলাম
কোন নামে ডাকব তোমায়
নাম-না-জানা- অনামিকা
জলে স্থলে গগনে-তলে
তোমার মধুর না যে লিখা।
গীষ্মে কনক-চাঁপার ফুলে
তোমার নামের আভাস দুলে
ছড়িয়ে আছে বকুল মূলে
তোমার নাম হে নিকা।
বর্ষা বলে অশ্রুজলের মানিনী সে বিরহিনী।
আকাশ বলে, তরিতে লতা, ধরিত্রী কয় চাতকিনী।
আষাঢ় মেঘে রাখলো ঢাকি
নাম যে তোমার কাজল আঁখি
শ্রাবণ বলে, যুঁই বেলা কি?
কেকা বলে মালবিকা।
শারদ-প্রাতে কমল বনে তোমার নামে মধু পিয়ে
বানীদেবীর বীণার সুরে ভ্রমর বেড়ায় গুনগুনিয়ে!
তোমার নামের মিল মিলিয়ে
ঝিল ওঠে গো ঝিলমিলিয়ে
আশ্বিণ কয়, তার যে বিয়ে
গায়ে হলুদ শেফালিকা।
নদীর তীরে বেনুর সুরে তোমার নামের মায়া ঘনায়,
করুণা আকাশ গ'লে তোমার নাম ঝরে নীহার কণায়
আমন ধানের মঞ্জরীতে
নাম গাঁথা যে ছন্দ গীতে
হৈমন্তী ঝিম্ নিশীতে
তারায় জ্বলে নামের শিখা।
ছায়া পথের কহেলিকায় তোমার নামের রেণু মাখা,
ম্লান মাধুরী ইন্দুলেখায় তোমার নামের তিলক আঁকা।
মোর নামে হয়ে উদাস
ধুমল হোলো বিমল আকাশ
কাঁদে শীতের হিমেল বাতাস
কোথায় সুদূর নীহারিকা।
তোমার নামের শত-নোরী বনভূমির গলায় দোলে
জপ শুনেছি তোমার নামের মুহহুমুর্হু বোলে।
দুলালচাঁপার পাতার কোলে
তোমার নামের মুকুল দোলে
কুষ্ণচুড়া, হেনা বলে
চির চেনা সে রাধিকা।
বিশ্ব রমা সৃষ্টি জুড়ে তোমার নামের আরাধনা
জড়িয়ে তোমার নামাবলী-হৃদয় করে যোগসাধনা।
তোমার নামের আবেগ নিয়া
সিন্ধু উঠে হিল্লোলিয়া
সমীরনে মর্মরিয়া
অনন্ত প্রেম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার,
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার-
কত রূপ ধ’রে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
অতিপুরাতন বিরহমিলন-কথা,
অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
দেখা দেয় অবশেষে
কালের তিমির রজনী ভেদিয়া
তোমারি মুরতি এসে
চিরস্মৃতিময়ী ধ্রবতারকার বেশে।
আমরা দু’জনে ভাসিয়া এসেছি
যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদিকালের হৃদয় উৎস হতে।
আমরা দু’জনে করিয়া খেলা
কোটি প্রেমিকের মাঝে
বিরহবিধূর নয়নসলিলে
মিলনমধুর লাজে।
পুরাতন প্রেম নিত্যনতুন সাজে।
আজি সেই চিরদিবসের প্রেম অবসান লভিয়াছে
রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ, নিখিলপ্রাণের প্রীতি
একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে-
সকল প্রেমের স্মৃতি,
সকল কালের সকল কবির গীতি।
নিষিদ্ধ চুমু
- ফাইয়াজ ইসলাম ফাহিম
নিষিদ্ধ চুমু দিবো তোমার ঠোঁটে
চুমুর চুম্বক লাগাবো,
তোমায় বারংবার রাগাবো
আন্দোলিত করবে তোমার তনু- মন।
একটি নিষিদ্ধ চুমু দিতে চাই হে প্রিয়সী
ভালবাসার রঙ্গ আছে সেই চুমুতে,
একটি নিষিদ্ধ চুমুর পরশে
দিনমান চাইবে মম কোলে ঘুমাতে।
দিব কি তোমার ঠোঁটে নিষিদ্ধ একটি চুমু
নিষিদ্ধ চুমুর স্বাদ নিতে দাও
তোমার নাসিকা কে,
বুঝতে দাও একটি নিষিদ্ধ চুমুর স্বাদ কত
হে প্রিয়সী নিষিদ্ধ একটি চুমুতে তুমি মাতোয়ারা হবে
ভালবাসার নীল ঘুড়ি উড়াবে নীলিমার বুকে,
দিবো কি একটি নিষিদ্ধ চুমু
তুমি কি রাজি নিষিদ্ধ চুমুর পরশ পেতে?
ভালবাসা তোমায় ছুটি
ইচ্ছে গুলো জলে ভাসে,
ইচ্ছে হাওয়ায় উড়ে,
ইচ্ছে গুলো মনের ভেতর করছে লুটোপুটি।
তাই ভালবাসা তোমায়, আজকে দিলাম ছুটি।।
ইচ্ছে হলে গাইতে পার,
মনের সুখে নাইতে পার,
ইচ্ছে হলে হৃদয় ভেঙে করতে পার কুটি।
তবুও ভালবাসা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি।।
আমার বুকের পাঁজর ভেঙে উড়িয়ে দিও হাওয়ায়,
ইচ্ছে হলে রাখতেও পার তোমার মনের দাওয়ায়।
তুমি চাইলে মিশতে পারে নদীর কুল দুটি
তাই ভালবাসা তোমায়, আজকে দিলাম ছুটি।।
তুমি এলে বিনাশীদের নিত্য আসা যাওয়া,
নিজের জীবন পনড়ব করে হংস মিথুন হওয়া।
একা একা মনের সুখে করছি ছুটোছুটি,
তাইতো ভালবাসা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি।।
বেশ্যা
কবি নজরুল ইসলাম--
সাধুর নগরে বেশ্যা মরেছে
পাপের হয়েছে শেষ,
বেশ্যার লাশ হবে না দাফন
এইটা সাধুর দেশ।
জীবিত বেশ্যা ভোগে তো আচ্ছা, মরিলেই যত দোস?
দাফন কাফন হবে না এখন
সবে করে ফোস ফোস।
বেশ্যা তো ছিল খাস মাল, তোদের রাতের রানী,
দিনের বেলায় ভুরু কোচ কাও?
মরিলে দেওনা পানি!
সাধু সুনামের ভেক ধরিয়া দেখালি দারুন খেলা,
মুখোশ তোদের খুলবে অচিরে
আসবে তোদের বেলা।
রাতের আধারে বেশ্যার ঘর স্বর্গ তোদের কাছে,
দিনের আলোতে চিননা তাহারে?
তাকাও নাকো লাজে!
চিনি চিনি ভাই সব সাধু রেই হরেক রকম সাজ,
সুযোগ পেলেই দরবেশী ছেরে দেখাও উদ্দাম নাচ!
নারী আমাদের মায়ের জাতি বেশ্যা বানালো কে?
ভদ্র সমাজে সতীর ছেলেরা খদ্দের সেজেছে?
গরীবের বৌ সস্তা জিনিস সবাই ডাকো ভাবি,
সুযোগ পেলেই প্রস্তাব দাও আদিম পাপের দাবি।
স্বামী যখন মরলো ভাবির দুধের শিশু কোলে,
ভদ্র দেবর সুযোগ খোঁজে সহানুভূতির ছলে,
দিনের মত দিন চলে যায়,
হয় না তাতে দোষ
মরা লাশের সুযোগ পেয়ে মোল্লার রোষ।
মোল্লা সাহেব নায়েবে রাসুল ফতোয়া ঝারিশা কয়,
পতিতা নারীর জানাজা কবর এই এলাকায় নয়।
শুধাই আমি ওরে মোল্লা জানাযায় যত দোষ,
বেশ্যার দান নিয়াছো ঝোলিয়ে তুমি বেটা নির্দোষ?
বেশ্যার তবু আছে পাপ বোধ নিজেকে সে ভাবে দোষী,
তোমরা তো বেটা দিন বেচে খাও হচ্ছেয় খোদার খাসি।
আল্লাহর ঘর মসজিদে ও আছে বেশ্যার দান -কলেমা পড়েছে সে ওতো তবে নামেতে মোসলমান!
বেশ্যা নারী ব্যবসায় নারী পুরুষরা পুরুষরা সব সৎ?
জানি মোল্লা খুলবে না মুখ চাকরি যাওয়ার পথ!
আর কতকাল থাকবি অমন মুখোশ ধারীর দল,
আসবো এবার মশাল নিয়ে ভাঙতে তোদের কল।
সত্যর আলো জলবে যখন চিনবে তোদের সবে,
লেবাশধারী মুখোশধারী মুখোশ উপরে যাবে।
এই ভাবে আর চালাবি কত ছল চাতুরীর খেলা।
আসবে তিনি, এবার তোদের বিদায় নেবার পালা।।।
যাত্রাভঙ্গ
-নির্মলেন্দু গুন
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে
মন বাড়িয়ে ছুঁই,
দুইকে আমি এক করি না
এক কে করি দুই।
হেমের মাঝে শুই না যবে,
প্রেমের মাঝে শুই
তুই কেমন করে যাবি?
পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া
আমাকেই তুই পাবি।
তবুও তুই বলিস যদি যাই,
দেখবি তোর সমুখে পথ নাই।
তখন আমি একটু ছোঁব
হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর
বিদায় দুটি পায়ে,
তুই উঠবি আমার নায়ে,
আমার বৈতরণী নায়ে।
নায়ের মাঝে বসবো বটে,
না-এর মাঝে শোবো,
হাত দিয়েতো ছোঁব না মুখ
দুঃখ দিয়ে ছোঁব।
আট বছর আগের একদিন
-জীবনানন্দ দাশ
শোনা গেল লাসকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে— ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হ’লো তার সাধ;
বধূ শুয়েছিলো পাশে— শিশুটিও ছিলো;
প্রেম ছিলো, আশা ছিলো— জ্যোৎস্নায়– তবু সে দেখিল
কোন্ ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেল তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল— লাসকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
রক্তফেনামাখা মুখে মড়কের ইঁদুরের মতো ঘাড় গুঁজি
আঁধার ঘুঁজির বুকে ঘুমায় এবার;
কোনোদিন জাগিবে না আর।
‘কোনোদিন জাগিবে না আর
জানিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম— অবিরাম ভার
সহিবে না আর—’
এই কথা বলেছিলো তারে
চাঁদ ডুবে চ’লে গেলে— অদ্ভুত আঁধারে
যেন তার জানালার ধারে
উটের গ্রীবার মতো কোনো এক নিস্তব্ধতা এসে।
তবুও তো পেঁচা জাগে;
গলিত স্থবির ব্যাং আরো দুই মুহূর্তের ভিক্ষা মাগে
আরেকটি প্রভাতের ইশারায়— অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে।
টের পাই যূথচারী আঁধারের গাঢ় নিরুদ্দেশে
চারিদিকে মশারির ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা;
মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে।
রক্ত ক্লেদ বসা থেকে রৌদ্রে ফের উড়ে যায় মাছি;
সোনালি রোদের ঢেউয়ে উড়ন্ত কীটের খেলা কতো দেখিয়াছি।
ঘনিষ্ঠ আকাশ যেন— যেন কোন্ বিকীর্ণ জীবন
অধিকার ক’রে আছে ইহাদের মন;
দুরন্ত শিশুর হাতে ফড়িঙের ঘন শিহরণ
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
চাঁদ ডুবে গেলে পর প্রধান আঁধারে তুমি অশ্বত্থের কাছে
এক গাছা দড়ি হাতে গিয়েছিলে তবু একা-একা;
যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের— মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা
এই জেনে।
অশ্বত্থের শাখা
করেনি কি প্রতিবাদ? জোনাকির ভিড় এসে সোনালি ফুলের স্নিগ্ধ ঝাঁকে
করেনি কি মাখামাখি?
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা এসে
বলেনি কি: ‘বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে
চমৎকার!
ধরা যাক দু-একটা ইঁদুর এবার!’
জানায়নি পেঁচা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?
জীবনের এই স্বাদ– সুপক্ব যবের ঘ্রাণ হেমন্তের বিকেলের–
তোমার অসহ্য বোধ হ’লো;
মর্গে কি হৃদয় জুড়োলো
মর্গে— গুমোটে
থ্যাঁতা ইঁদুরের মতো রক্তমাখা ঠোঁটে।
শোনো
তবু এ মৃতের গল্প; কোনো
নারীর প্রণয়ে ব্যর্থ হয় নাই;
বিবাহিত জীবনের সাধ
কোথাও রাখেনি কোনো খাদ,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে বধূ
মধু— আর মননের মধু
দিয়েছে জানিতে;
হাড়হাভাতের গ্রানি বেদনার শীতে
এ-জীবন কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
লাসকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।
জানি— তবু জানি
নারীর হৃদয়— প্রেম— শিশু— গৃহ– নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়—
আরো-এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত— ক্লান্ত করে;
লাসকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাসকাটা ঘরে
চিৎ হ’য়ে শুয়ে আছে টেবিলের ’পরে।
তবু রোজ রাতে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
থুরথুরে অন্ধ পেঁচা অশ্বত্থের ডালে ব’সে এসে
চোখ পাল্টায়ে কয়: ’বুড়ি চাঁদ গেছে বুঝি বেনোজলে ভেসে?
চমৎকার!
ধরা যাক্ দু-একটা ইঁদুর এবার—’
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মতো বুড়ো হবো— বুড়ি চাঁদটারে আমি ক’রে দেবো
কালীদহে বেনোজলে পার;
আমরা দু-জনে মিলে শূন্য ক’রে চ’লে যাবো জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার।
মাতাল মোহনা
-রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
কে জানে কখন মিশেছি আমরা
একে অপরের ভালোতে মন্দে
রন্ধ্রে রক্তে মিশে মিলে যাওয়া মোহনার মতো ।
আমাদের সব হাসি ও অশ্রু ভাগাভাগি কো্রে
নিয়েছি যেদিন - সেদিন ছিলো কি অপরূপ রাত
অর্ধেক চাঁদে আধেক আঁধারে ভেসে থাকা নীল ফুল্ল আকাশ !
সেদিন ছিলো কি সুখের মতো্ন বুকে এতোটুকু বেদনার দাহ !
জানি না কখন মিশে গেছে দুটি এলো্মেলো পথ
দুটি উদাসিন মাতাল হৃদয় দুটো সৈনিক
পেছনের পথ ভুলে এসে এক গড়েছে নোতুন স্বাধীন সীমানা ।
আলোতে যেনন মিশে থাকে হাওয়া
তেমনি একটি আঁধারের অনু মিশে গেছে শাদা রোদের তনুতে
দুইটি নদী্র মোহনার মতো- জানিনা কখন , জানি না কখন !
-------------
আরো দেখুন:জন্ম নিবন্ধন সনদ ডাউনলোড