ট্রেন দুর্ঘটনা
রঞ্জিত কুমার রায়
গতকাল ঘরে বসে এই ভীষণ গরমে টিভি দেখছিলাম। আর সেখানে তখন একটা নিউজ আসছিল বারবার কলকাতা কোন প্রধান এসেছেন দিল্লি থেকে। এবার আস্তে আস্তে সবকিছুর হিল্লে হয়ে যাবে। না হলে এরকম তো সচরাচর দেখা যায় না। বিতর্কের মাঝেই হঠাৎ যে অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন, আর চারিদিকের যারা বক্তব্য রাখার জন্য আসেন। তাদের চুপ করিয়ে দিয়ে শুধু একটি খবর সামনে নিয়ে এলেন সেটা হচ্ছে একটি বড় ট্রেন দুর্ঘটনার খবর আসছে চুপ করুন প্লিজ। বালেশ্বরের কাছাকাছি নাঘাটায় দুর্ঘটনা হয়েছে বেশিরভাগ কামরা মাল গাড়ীর উপরে উঠে গেছে উল্টে গেছে।
আমার বক্তব্য দুর্ঘটনা হতেই পারে, কিন্তু একই লাইনে দুটো ট্রেন আর পেছন থেকে মালগাড়িকে এরকমভাবে একটি নাম করা ট্রেন গিয়ে ধাক্কা মারে ভাববার বিষয়? সে যাই হোক দুর্ঘটনা দুর্ঘটনা, সেই ঘটনার সাথে সাথে আশেপাশের লোক সহযোগিতা করার নাম করে এগিয়ে আসে।অনেকেই সহযোগিতা ও করেন, আর বাকিরা চুরি করেন কোথায় কি মালপত্র আছে কিভাবে নেওয়া যায় প্রশাসনের লোকজন আসার আগে সব হাতিয়ে নিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
দুঃখ হয় কি জানেন একদল মানুষ এই মহা বিপদে যাত্রীদের জিনিসপত্র চুরি করছেন।যাদের দেহে প্রাণ আছে তারা দেখতে পাচ্ছেন। এইভাবে চুরি হওয়া খুবই হৃদয়বিদারক, যেই মানুষরা বেঁচে গেছেন তারা বলছেন ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। অনেকে ভয়ে প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেখান থেকে পালিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে বসে থাকেন। এই বিপদের দিনেও মানুষ কেমন অমানুষ হতে পারে ভাবা যায় ?
মিডিয়া এবং প্রশাসনের লোকজন আসার আগেই, জিনিসপত্র যত পারা যায় সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করে থাকেন এই সব মানুষগুলো। না বললে ভুল হবে আবার এরাই প্রশাসন যখন আসে হাতে হাত মিলিয়ে কাজও করেন সুযোগ পেলে কিছু কিছু জিনিস পকেটে ও পুরে ফেলেন। এটা মানুষ কখনোই ভালোভাবে মেনে নিতে পারে না। কারণ যারা তখন যেই অবস্থায় বেঁচে রয়েছে, তাদের একটু সহযোগিতা অনেক বড় জিনিস, চুরি যাওয়া বড় কথা নয় জীবনের থেকে জিনিসপত্রের দাম বেশি নয়। তখন বেঁচে থাকা যাত্রীরা শুধু চায় একটু সাহায্যের হাত যে হাত তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে।
আমি যখন বসে লিখছি তখনও খবরে দেখছি উদ্ধার কাজ চলছে। কত বড় অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে মানুষকে প্রচন্ডভাবে নারা দিয়ে গেছে।আমরা সবাই কম বেশি সবসময় ট্রেনে জার্নি করে থাকি। দূর পাল্লা হলে তো কোন কথাই নেই, বেড়াতে অনেক পরিবার বছরে দুবার এদিক-সেদিক বেরিয়ে পড়েন। এইরকম দুর্ঘটনা দেখার পরে তাদেরও দুবার ভাবতে হয়, ট্রেনে করে যাব কি যাব না।
এমন ঘটনা বিরল নয়, মাঝে মাঝেই বছরের দু একবার ঘটে থাকে কম আর বেশি। তার মধ্য থেকেই আমরাও যাতায়াত করি কিছু করার নেই। কারণ আমাদের দেশে ট্রেন একমাত্র এমন একটি পরিবহন,যা দূর থেকে দূরান্তরে অনেক কম সময়ে পৌঁছাতে পারে। আর সারা ভারতের মধ্যেই এই যোগাযোগ রয়েছে এবং অন্য পরিবহনের থেকে অনেক স্বাচ্ছন্দ দিয়ে থাকে। আমি বলবো যদি এমন কিছু ব্যবস্থা করা যায়, যাত্রী সুরক্ষার জন্য সেটা জরুরী ভিত্তিতে করা উচিত। সেটা করতে পারলে আজকে এতগুলো প্রাণ এমনভাবে অকালে চলে যেত না। সকল অকাল প্রয়াত যাত্রীদের আত্মার শান্তি কামনা।আর যারা বেঁচে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।আর যারা এই অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকে বেঁচে বাড়ি ফিরে এসেছেন, হাসপাতালে না গিয়ে তাদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
স্বত্ব সংরক্ষিত।