‘মন’
প্রাবন্ধিক-মোস্তাক আহমেদ
মানব চিত্ত,হৃদয়,হিয়া,অন্তর বা মন তারে যে অভিধায় আমরা ডাকি না কেন । সেহল মানব মনে লুকে থাকা অদ্ভুত এক স্পর্শকাতর জায়গা। সেযেন নিজ চলার পথে ভালোবাসা, আদর,স্নেহ, প্রশংসা ও সম্মান পেলে আত্মকে জানার চেষ্টা করে । যা তার মনের উপলব্দির জায়গাগুলোকে প্রশান্তির ছায়ায় সুপ্রশস্ত করবার একটা প্রয়াস চালায় ।
ওসব সুধা যেন ব্যক্তির ব্যক্তি জীবনকে বড় পরিসরে ভাববার বা উঁচুতম কোন শিখরে উঠবার তাকে স্বপ্ন দেখায়। তবে মনকেন্দ্রিক ওসবের বিপরীতে যখন ব্যক্তি কোন দুঃখ,কষ্ট,ব্যথা ও বেদনা, অবহেলা, মানসিক পীড়নের শিকার হন তখন তার কাছে ভালোবাসার ওসব দিক যেন হয়ে পড়ে বড় পানসে ।
যার উৎসস্থল হলো দেহকেন্দ্রিক মন এবং যা তার চিন্তন মানসিকতার সঙ্গে ওৎপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে মনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক । একই ব্যক্তি একই মন হবার সত্বেও ব্যক্তি কেন উক্তরূপ পরিস্থিতিতে তার মনোভাব দু’ভাবে প্রকাশ করেন ? তার মনোজাগতিক কোন ব্যাখা আছে কিনা ? আজকে সে মনকে নিয়েই আমার এ প্রবন্ধ লেখা। আগে দেখি মন কী এবং তার রূপ কী তা জানবার চেষ্টা করবো।
মন হলো মানুষের সংবেদনশীল ও অনুভূতিপ্রবণ এক জায়গা। যে মানুষের মাঝে সুপ্তয় বিভিন্ন পরিবেশে ভালো ও মন্দ দিকে সাড়া দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। মনের সেসব দিকের সাড়া নানাভাবে ব্যক্তির বিভিন্ন পর্যায়ে তার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিকশিত হতে থাকে। শিশু মার গর্ভে অবস্থানকালীন মাকে নিজ সত্বার আগমনী বার্তায় সে মায়ের মনকে দোলাতে থাকে।
মা যেন তার নরমকোমল মন দিয়ে বুঝতে পারে তার গর্ভে সন্তান বিকশিত হতে চলেছে।মন তাকে সাড়া দিয়ে জানান দেয় যে-তিনি এখন তার অনাগত সন্তানের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। তিনি তারে নিয়ে মনে স্বপ্ন রচনা করেন ও স্বপ্ন বুনেন । গর্ভে সন্তান বিকশিত হবার স্তরে স্তরে তিনি তার অনুভূতিগুলো মন থেকে বেশ উপলব্দি করতে পারেন। তাহলে মন হলো- এক অদৃশ্য বস্তু । যার দ্বারা মা নামক ব্যক্তিটি গর্ভের সন্তানের সঙ্গে তার বিনিসূতোর মালা বুনেন। ফুলের মালার যেমন রয়েছে পরতে পরতে নন্দিত শোভা।
মাও যেন তার অনাগত সন্তানের জন্য মনে গাঁথেন অনুরূপ মালা। মন সেযেন নিশুতি রাতের দ্বিপ্রহরেও মার মনে সুখের স্বপ্ন বুনেন এবং নানারূপ প্রশ্ন তার মনে এনে মনকে পুলকময়ে ভরে তোলেন ।মা জলতরঙ্গের প্রবাহের মতই যেন স্বপ জালে আটকে যান এবং অনাগত শিশুর ভবিষ্যত নিয়ে বিড়বিড় করে মনকে নানা প্রশ্নবানে জর্জরিত করার প্রবণতায় মেতে উঠেন।
কারণ একটাই মননামক বস্তু‘টি আপনায় তা করার জন্য তাকে ভাবায় এবং তাড়িত করার মানসে তার মনকে পুলকময় আবেগে ভরে তোলেন। মায়ের মন যেন অনাগত সন্তানের মায়াবী মুখখানা দর্শনের মানসেই সন্তানের দর্শন দেখতে চায় । তার সন্তানকে আগলে রাখার,ভবিষ্যতে তাকে সমাজে বরপুত্র গড়বার মানসে মার সুপ্ত মন স্বপ্নপিয়াসী হয়ে তার মনে দোল খায়। ( চলবে)