প্রবন্ধ-ধর্মে নারীর স্থান।নারীর স্থান নিয়ে রচনা।ধর্মে নারীর স্থান রচনা

ধর্মে নারীর স্থান
মন্মথ হালদার


আদিম অসভ‍্য গোষ্ঠীপরিবারের মধ‍্যে যেহেতু বিবাহ সম্পর্ক সূচিত হয়নি তাই সকল পুরুষ ও সকল স্ত্রীর মধ‍্যে ছিল অবাধ যৌন সম্পর্ক। ফলে কোন সন্তানের পিতা কে জানার কোন উপায় ছিল না।কিন্তু প্রাকৃতিক বা জৈবিক কারণে মা কে তা নিশ্চিতভাবে জানা যেত।অতএব আদিম গোষ্ঠীগত পরিবারে বংশের ধারা ছিল মাতৃতান্ত্রিক।
বর্বরযুগে মানুষ ক্রমে উন্নত হাতিয়ার তৈরী করতে এবং আগুন জ্বালাতে শেখার ফলে গোষ্ঠী জীবনে পরিবর্তন সাধিত হতে থাকে।উৎপাদনের উপকরণে পুরুষের আধিপত‍্য প্রতিষ্ঠিত হবার পর গোষ্ঠীজীবনে অবাধ যৌনতার পরিবর্তে আন্তঃগোষ্ঠী বিবাহ প্রচলিত হয়।পরে ধীরে ধীরে চেতনার বিকাশের ধারায় আন্তগোষ্ঠী বিবাহের পরিবর্তে ভিন্ন গোষ্ঠীতে বিবাহ বাধ‍্যতামূলক হয়।বলা বাহুল‍্য এই সময় হতেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব‍্যবস্থা দৃঢ়বদ্ধ হতে শুরু করে।
মার্কস ও এঙ্গেলস বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে,
"এক বিবাহমূলক সমাজে নারী ও পুরুষের যে সংঘাত বিকাশলাভ করে তাই হলো ইতিহাসের প্রথম শ্রেনী বিরোধ এবং পুরুষ কর্তৃক নারীর উপর  যে উৎপীড়ন তাই ছিল ইতিহাসের প্রথম শ্রেনী উৎপীড়ন।"
নারী সমাজের অর্ধাংশ,তাই আর্থসামাজিক কাঠামোর সমাজ বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনায় অনিবার্যভাবেই নারীর অবস্থানের প্রশ্ন এসে পড়ে।এ কথা অনস্বীকার্য যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব‍্যবস্থা কায়েম হয়েছে প্রধানত পুরুষের বাহুবলে এবং পরবর্তীতে শাস্ত্রবলে।ধর্মসূত্রের যুগ থেকে আরম্ভ করে ধর্মশাস্ত্রের যুগে এসে নারীশক্তি ক্রমশ পুরুষের পদানত ও শৃংখলিত অবস্থানে চলে আসে।ভগবদগীতায় কৃষ্ণবচনে সমাজে নারীর অতি হীন স্থানংক নির্ধারিত হয়ে যায়। গীতার নবম অধ‍্যায়ে ৩২তম শ্লোকে কৃষ্ণ নারী এবং শূদ্রকে পাপযোনী সম্ভূত বলে অভিহিত করেছেন।অথচ অবতার পুরুষ কৃষ্ণের জন্ম তথাকথিত পাপযোনী দেবকীর গর্ভেই।মনুস্মৃতি পর্যালোচনা করলে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে এ সময় আর্য সভ‍্যতায় ব্রাক্ষ্মন‍্যধর্মের আর্থসামাজিক কাঠামোতে নারীদের পদদলিত দাসশ্রেনীসূলভ হীনস্থান নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।
মনু বলেছে---১)নারীর কোন স্বাধীনতা থাকবে না,আজীবন পুরুষের অধীনে থাকবে।২)নারীর পতি যদি গুনহীন,দুশ্চরিত্র,অন্ধ,খঞ্জ,লম্পট এবং অপদার্থ হয় তথাপি তাকে দেবতাজ্ঞানে পুজা করতে হবে।৩)এই কর্তব‍্য পালন করলে নারীর স্বর্গ প্রাপ্তি ঘটে।৪)স্বামীর মৃত‍্যু হলে নারী আজীবন কৃচ্ছ্রসাধন করে বিধবার জীবন যাপন করবে,পরপুরুষের চিন্তা মনে ঠাই দেবে না।(অথচ স্ত্রীর মৃত‍্যু হলে তাকে দাহ করে এসে পুরুষ আবার বিয়ের পিড়িতে বসতে পারে)৫)নারী স্বভাবত দুশ্চরিত্রা এজন‍্য মা কিংবা বোনের সঙ্গে ও পুরুষ একাকী বসবে না।৬)পুরুষের সৌন্দর্য বা বয়সে নারীর কিছু আসে যায় না,সবার কাছে সে নিজেকে সমর্পন করে।৭)এ জন‍্য নারীকে কড়া পাহারায় রাখতে হবে।৮)নারী সংসারের দাসী,সন্তান উৎপাদনের যৌনযন্ত্র বিশেষ,পুরুষের ভোগ‍্যদ্রব‍্য।৯)নারী অথবা শূদ্র হত‍্যা কোন গুরুতর পাপ নয়।১০)শূদ্রদের মত নারীর ও বেদপাঠ বা যজ্ঞকর্মে কোন অধিকার থাকবে না।এই ঘৃন‍্য মনুবাদী গ্ৰন্থগুলি পুড়িয়ে অগ্নুতসব করাই বর্তমানে আমাদের কর্তব‍্য।
এবার কোরাণের কয়েকটি উদৃতি দিচ্ছি
১)তোমাদের স্ত্রী অর্থ তোমাদের শষ‍্যক্ষেত্র স্বরূপ বিকাশ সাধন করার জন‍্য।সুতরাং তোমাদের শষ‍্যক্ষেত্রে তোমরা যখন খুশী গমন করিতে পার।২/২৮/২২৩।
২)নারীদের চাইতে পুরুষের অধিকার একধাপ উপরে ।২/২৮/২৩৮।৩)নারীদের মধ‍্যে কেহ যদি ব‍্যভিচারী হয় তবে তাকে আমৃত‍্যু আটক বা অবরুদ্ধ করে রাখবে।(ব‍্যভিচারী কি নারী একাই হয়?পুরুষের কোন ভুমিকা থাকে না।)৪/৩/১৫।
৪)পুরুষ মানুষেরা স্ত্রীলোকের উপর কতৃত্ববান।যেহেতু আল্লাহ কাহার ও উপর কাহাকে কতৃত্বের অধিকারীকরিয়াছেন।৪/৬/৩৪
৫)তোমরা কখনো স্ত্রীদের সঙ্গে সম্পূর্ন ন‍্যায়সঙ্গত সমান আচরণ করিতে পারিবে না।এমন কি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দুর্ব‍্যবহারের জন‍্য স্বামীকে দায়ী করা চলিবে না।৪/১৯/১২৮
রাশিয়ায় বিপ্লবের পূর্বে সাইবেরিয়ায় মুসলিম সমাজের মহিলারা বোরখায় আপাদমস্তক না ঢাকা থাকলে স্বামী বিনা দ্বিধায় স্ত্রীকে খুন করে বিনা শাস্তিতে  জীবন কাটাতে পারত।
গত ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ইরাণে একদল শিক্ষিতা মহিলা মাথার হিজাব খুলে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করায় বর্বর সরকারের পুলিশ তাদের উপর বেপরোয়া লাঠি চালিয়ে গ্ৰেপ্তার করে।বিচারে দুইমাস কারাদন্ড হয়।প্রশ্ন হল মুসলিম পুরুষরা টুপি খুলে বা খালি মাথায় হাটলে আল্লাহ রুষ্ট হন না?
নারীর প্রতি খৃষ্টধর্ম
বাঃ রাসেল বলেছেন,"মঠের(গীর্জার) সাধুদের কাছে মহিলারা চিরকালই প্রলোভনের যন্ত্র হিসাবে পরিগনিত।তারা মহিলাদের প্রধানত অশুদ্ধ লালসার প্রেরণা বলে ভাবে।"
যীশু তার মাকে বলছেন,"নারী আমি তোমার সঙ্গে কি-ই বা করব।"যীশু জানত সে তার মায়ের অবৈধ সন্তান।তাই এ বক্তব‍্যে তার মায়ের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।"নারী পাপী,নারীনরকের দ্বার," সেইন্ট জন। হিব্রু ধর্মে বলা হয়েছে,"নারীকে অবলম্বন করেই মানুষের জীবনে শয়তানের মোহজাল বিস্তার সম্ভব হয়।"
বৌদ্ধ ধর্মে ও নারীকে দুর্গন্ধযুক্ত,পাপশীল,মোক্ষ পথের বাধা বলে বর্ননা করা হয়েছে।
সবরিমালা মন্দিরের দিকে তাকালে ব‍্যথিত চিত্তে এস ওয়াজেদ আলীর উক্তিটি মনে পড়ে ' সেই ট্রাডিশান সমানে চলছে' ।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.