বাঙালির অস্তিত্ব
সাইফ আব্দুর রাজ্জাক
আমরা যে ভাষায়-ই কথা বলি,সেই ভাষায়-ই আল্লাহ বোঝেন |কারণ সব ভাষাই মহান রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি |পৃথিবীতে শুধু একটি ভাষা না,অসংখ ভাষা ও অসংখ ভাষাগত জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায় |আল্লাহ যেমন পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন বর্ণের,বিভিন্ন পরিমাপের,বিভিন্ন ভাব ভংগের,বিভিন্ন তারতম্যের মানুষ সৃষ্টি করেছেন,তেমনি বিভিন্ন ভাষা সৃষ্টি করেছেন |
আল্লাহই প্রথম,মানব জাতির পিতা আদম আ: কে যখন জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠান,তখন আল্লাহ আদম আ: কে কথা বলা বা ভাষা শিখিয়েই পাঠান |তারপর কালাক্রমে মানুষ সৃষ্টি হয় এবং কালাক্রমে মানুষ ছিন্নভিন্ন হয়ে বিভিন্ন জনপদে বিভক্ত হয়ে পরে,কালাক্রমে তখন তারা শিক্ষাদীক্ষার অভাবে আদি ভাষা বা সংস্কৃতিও হারিয়ে ফেলে |তখন শিক্ষাদীক্ষা বিজ্ঞান প্রযুক্তি তো দূরের কথা তাদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাই ছিল না |কে কোন জনপদে বা এলাকায় বাস করতো তাই জানতো না |কিছুই চিনতো না বুঝতো না,এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন-!
ভাষাটা কি-?ভাষা হলো মনের ভাব প্রকাশ,কিন্তু সেই ভাব দুই ভাবে প্রকাশ করা যায় |একটা কথা বলে,একটা বচন ভঙ্গির মাদ্ধমে |এক সময় মানুষ কথা বলতে পারতো না,কারণ ভাষা নাই বলবে কি-?কোনো রকম ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমেই ভাব প্রকাশ করতো |সে কৌশল আল্লাহই দিয়েছিলেন |এক এক সম্প্রদায় এক এক বচন ভঙ্গি ও ভাবধারা লালন ও ধারণ করতো |সেগুলোই ছিল তাদের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি,কালের প্রবাহে সেই সংস্কৃতি পরিশুদ্ধ বা শোধন হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পূর্ণ সংস্কৃতি বা শাব্দিক কথা সৃষ্টি হয়েছে,যা আমরা ভাষা বলি,যা দ্বারা মানুষ হৃদয়ের পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশ করে |
কোনো ভাষাই একদিনে সৃষ্টি হয়নি |বিভিন্ন ভাষা বিভিন্ন ভাষা থেকেও সৃষ্টি হয়েছে |যেমন বাংলা ভাষা তৎসম,অর্ধ তৎসম,তদ্ভব বা বিভিন্ন ভাষা থেকে সৃষ্টি হয়েছে,কিন্তু সে তদ্ভব তৎসমও তো একটি ভাষা,সেটাও সৃষ্টি হতে অনেক কাল লেগেছে |স্ব স্ব সংস্কৃতি বা ভাষা,স্ব স্ব সম্প্রদায়ের প্রাণের সত্তা বা অস্তিত্ব-!তাই এক সম্প্রদায়ের সেই সত্তা বা অস্তিত্বের উপর প্রভাব বিস্তার করা বা হরণ করা,আরেক সম্প্রদায়ের অধিকার নাই |কারণ ভাষা বা সংস্কৃতি স্ব স্ব সম্প্রদায়ের বা মানুষের সত্তা বা অস্তিত্ব,যার মাদ্ধমে প্রাণের হাসি কান্না,আনন্দ বেদনা,মনের পরিপূর্ণ আবেগ ও ভাব ব্যাক্ত হয়,অতএব সেই সংস্কৃতি বা ভাষা অন্য সম্প্রদায় হরণ করতে পারে না বা অধিকার নাই |
কিন্তু বাঙালির সেই সত্তা বা বাংলা ভাষা বা সংস্কৃতি,হরণ করতে উদ্যোত হয়েছিল তৎকালীন এক বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানী জনগোষ্ঠী |যে ভাষা মায়ের,যে ভাষা বাঙালির হাজার বছরের লালিত,যে ভাষার সাথে মায়ের ভালোবাসা জড়িত |তারা সেই বাংলা ভাষাকে বিলুপ্ত করে বাঙালির উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো উর্দু ভাষা-!
ফলে বাঙালির আত্মায় আঘাত হেনেছিল,কিন্তু সেদিন বাঙালি জাতি দমিয়ে থাকতে পারেনি |গর্জে উঠেছিল বাংলার দামাল ছেলেরা |মায়ের পেট থেকে পরে যে ভাষার বুলি শুনে বড় হয়েছে,যে ভাষা মায়ের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে,সেই ভাষা ওই পাকিস্তানী জনগোষ্ঠী ধ্বংস করতে চায়-!এটা হতে পারেনা |
যারফলে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সালাম,রফিক,জব্বার,বরকত আরো অনেকে,ভাষার জন্যে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো ঢাকার রাজপথে |তবু রক্ষা করেছিল আজন্মে লালিত মধুময় জননীর মধুময় ভাষা বাংলা-!সেই বাংলা ভাষা,আন্তর্জাতিক মাতৃভাষায় পরিণত হয়েছে-!গোটা বিশ্ববাসী বাংলা ভাষাকে সন্মান করে-!বিশ্বে একমাত্র বাঙালিই ভাষার জন্য জীবন দান করেছে-!তাদের আত্মত্যাগের কারণে বাঙালি জাতি আজ গর্বিত-!মহান আল্লাহ তাদের প্রশান্তি দান করুক,আমিন-!