নেতাজিকে কতটুকু ভালোবাসি
দেবাশীষ দাস
আমাদের প্রিয় নেতা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। আমরা সবাই তাকে খুব ভালোবসি। আজ ১২৫ তম জন্মদিনে সোস্যাল মিডিয়াতে শ্রদ্ধাঞ্জলির বন্যা বইছে। আবেগে ভাসছেন কত শত মানুষ। কিন্তু সত্যিই কি আমরা নেতাজিকে ভালোবাসি ? কতটুকুই বা ভালোবাসি ?
আমরা অনেকেই প্রিয় ফুটবল বা ক্রিকেট খেলোয়াড়কে অনুসরণ করি। আবার অনেকে সিনেমার প্রিয় নায়ক নায়িকাকে অনুসরণ করি। প্রিয় তারকার চুলের স্টাইল পোশাক চলন বলন প্রভৃতি অনুকরণ করি। সর্বোপরি প্রিয় তারকার মতো হবার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা কেউ নেতাজি হতে চাই না। তাহলে আমরা কি সত্যিই নেতাজিকে ভালোবাসি ? এটা সত্য যে, কেউ চেষ্টা করলেও নেতাজি হতে পারবে না। নেতাজির কোনো তুলনা নেই, নেতাজি অদ্বিতীয়। কিন্তু আমরা তো নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারি।
নেতাজি বাল্যকাল থেকেই ছিলেন দেশপ্রেমিক। তিনি নিজের দেশকে খুব ভালোবাসতেন। দেশ মানে শুধু দেশের মাটি নয়, তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল স্তরের মানুষকে তিনি ভালোবাসতেন। তিনি ব্রিটিশদের ঘৃনা করতেন কারণ ব্রিটিশরা এই দেশের নিরীহ মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার করতো। ব্রিটিশদের সাথে তাঁর কোনও জাতিগত শত্রুতা ছিল না। তিনি ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন, অসহায় নিরীহ মানুষের সহায়তা করতেন। কিন্তু সমাজসেবার অজুহাতে কখনো পড়াশোনায় ফাঁকি দেন নি। তিনি যেমন মেধাবী ছাত্র ছিলেন তেমনই পড়াশোনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি আই সি এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেছিলেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের চাকরিতে যোগ না দিয়ে দেশ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি নিজের জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে দেশের স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
নেতাজি চেয়েছিলেন এমন এক স্বাধীন ভারত যেখানে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না, কেউ অশিক্ষিত থাকবে না। জাতি ধর্ম বর্ণ নারী-পুরুষে কোনও ভেদাভেদ থাকবে না। যেখানে কারোর সাথে অন্যায় অবিচার অত্যাচার হবে না। শুধু ব্রিটিশ মুক্ত ভারত নয়, তিনি চেয়েছিলেন কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস মুক্ত আধুনিক সুস্থ শিক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা। তিনি নারীদের ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ রাখার বিরোধী ছিলেন, তিনি নারী শিক্ষার পক্ষপাতি ছিলেন। আজাদ হিন্দ বাহিনীতে তিনি নারীদের নিয়ে গঠন করেছিলেন 'রানি ঝাঁসি রেজিমেন্ট'।
আমরা যারা প্রতিনিয়ত অন্যায়ের সাথে আপোষ করে চলি, আমরা কিভাবে বলব নেতাজিকে ভালোবাসি। এখনও যারা ধর্মীয় গোঁড়ামি কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে পারিনি, আমার কেমন করে বলব নেতাজিকে ভালোবাসি। এখনও যারা জাতি ধর্মের নামে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করি, কেমন করে বলব আমরা নেতাজিকে ভালোবাসি। যারা এখনও নারীদের গৃহবন্দি করে রাখতে চাই, তারা কি করে বলব নেতাজিকে ভালোবাসি। যারা কেবল নিজের স্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করি, কেমন করে বলব নেতাজিকে ভালোবাসি। ছাত্র জীবনে যারা পড়াশোনায় ফাঁকি দিই, নিজের পিতা মাতার প্রতি যারা শ্রদ্ধাশীল নই, কেমন করে বলব আমরা নেতাজিকে ভালোবাসি।
নেতাজিকে সত্যিই ভালোবাসলে সবাই নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হও। নেতাজিকে সত্যিই ভালোবাসলে নেতাজি হয়ে ওঠ। ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হও, ছাত্র জীবনের প্রধান কর্তব্য পড়াশোনা। অন্যায়ের সাথে আপোষ নয়, সবাই অন্যায়ের প্রতিবাদ কর। মনে থেকে মুছে দাও সবাই সব অন্ধ বিশ্বাস কুসংস্কার গোঁড়ামি। নেতাজিকে ভালোবাসলে এসো সবাই নেতাজির স্বপ্নের দেশ গঠন করি।
ইচ্ছে থাকলেও আমরা কেউ যেমন নেতাজি হতে পারব না, তেমনই প্রিয় তারকার চলন বলন জীবন শৈলী অনুকরণ করেও তো আমরা তাদের মতো হতে পারব না। তবুও আমরা অনুসরণ করি। তাহলে নেতাজিকে অনুকরণ নয় কেন ? নেতাজি যে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন সেই দলকেই বা কয় জনে সমর্থন করি ? তাহলে নেতাজিকে সত্যিই আমরা কতটুকু ভালোবাসি ?
নেতাজিকে সত্যিই ভালোবাসলে আজ নেতাজির জন্মদিনে শুধু তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান আর পুষ্পাঞ্জলি নয়। শুধু সোস্যাল মিডিয়াতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়। আসুন সবাই নেতাজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হই। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য আদৌ উদঘাটন হবে কিনা জানি না। তবে আমরা তো নেতাজির স্বপ্নের দেশ গঠন করতে পারি। আসুন সবাই আজ নেতাজির স্বপ্নের দেশ গঠনের অঙ্গীকার করি। এটাই হবে জন্মদিনে নেতাজির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি।