এক ভালো মানুষের কথা
চাকুরী করছিলেন
ডালিয়া তিস্তা হেডওয়ার্কস ডিভিশনের অধীনস্হ দোয়ানী সাবডিভিশন-১ এর অধিনে।৷
শমসেরের গ্রামের বাড়ি তার অফিস হতে ৩ মাইল পূর্ব
দিকে আসতে হয়। ১৯৮২-৮৩ খ্রিঃ তারিখের
কথা। সকাল ৭. ৩০ বাড়ি
থেকে বেড়িয়ে পড়ে। পায়ে
হেটে হেটে অফিসে
যেতে হয় প্রতি দিন। তখন
রাস্তাঘাটে এখনকার মতো এতো
যান বাহনের বালাই ছিলোনা। কাঁচা
রাস্তা নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল কেবল। ধুধু
বালি চর সাদা মেঘের
মতো শুধু বালি উড়ে। সারা
শরীর ধুলো বালিতে সাদা হয়ে যায়। আর
সে জন্য সকাল সকাল অফিসে রওনা হয়ে যায়। রাতে
বাড়ি ফিরে। সকাল
আর রাতে বাতাসের তীব্রতা কমে আসে। এভাবে
তার অফিসে যাওয়া আসা। মানুষ
হিসেবে শমসের অত্যান্ত সাদা মনের মানুষ। মানুষকে
তিনি নিজের জীবনের মতো করে ভালোবেসেছিলেন। কারোর অভাব তিনি সহ্য করতে পারেন না। নিজের পকেটে যাহা থাকে তৎক্ষনাৎ বের করে দেন। ফেরত
চান না কখনও। কেউ
যদি কোন দিন ইচ্ছে করে ফেরত দেন তখন নেন। চাইতে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। কেউ
কোন জটিল সমস্যা পড়লে তা তিনি বিচক্ষণতার
সাথে সেটা তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেন। অর্থের প্রতি কোনো রকম লোভ লালসা ছিলো না মোটেই। ৩২
বৎসর একই ডিপার্টমেন্টে চাকুরী করছেন ছেলে মেয়েদের জন্য একশতাংশ জমি রেখে যাননি তিনি। তাঁর কথা
ছিল অবৈধ ভাবে সম্পদ অর্জন করে ছেলেমেয়েদের জন্য রেখে
যাবো। আমার মৃত্যুর পর ভাগ বাটোয়ারা
নিয়ে মামলা মোকদ্দমা অযথা অর্থ অপচয় করে ফকিরি হাল ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এটা মোটেই ভালো লক্ষ্মণ নয়। সম্পদ বেশি থাকলে সমস্যা। সম্পদ
নাই সমস্যা নাই। অন্যের
দুঃখ কষ্টের কথা শমসের আলী মোটেই ভালো লাগতো না তাঁর। গরীব
শ্রমিক দিন মজুর সারাদিন মাথার ঘাম পায়ের ফেলে কাজ করে দুটো পয়সা পাবে বলে বাজারে চাল ডাল নুন তেল,মরিচ পিঁয়াজ কিনবে। কিন্তু
তার উল্টো হয়ে যায়। কাজ
শেষে যখন দিন মজুর হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে গৃহস্থের বাড়িতে গিয়ে বসে বসে অপেক্ষা করে মজুরির জন্য। চোখে মুখে তার আনন্দ উল্লাসের ছাপ ভেসে আসছে, ঠিক তখুনি গৃহস্থ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে দিন মজুরকে ব'লে আজকে
টাকা নাই অমুক দিন দিবো। তখনই যেন আসমান টা মাথার উপর
ভেঙে পরে। বাড়িতে
ছোট ছেলে মেয়ে বুড়ো বাবা মা আর স্ত্রী
ছয় সাত মানুষ উপোষ থাকতে হবে। কি
আর করার নিয়তির খেলা সবে। বাড়িতে চলে আসে দিন মজুর খুলে বলে সব কথা। ঝগড়া বিবাদ করাও যাবে না গৃহস্থের সাথে,
করলে আর কোনো দিন
কাজে নিবে না তাকে। যাই
হোক সবাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে আছে ঘুম আসছে না কারোর চোখে।
এমন সময় শমসের আলী পায়ে হেঁটে হেঁটে তার নিজের বাড়িতে আসছে। বাবুল, খতিবর আর গোলামুদ্দি আর
কফিলদের বাড়ি আগে পড়ে। শমসের
আলী ডেকে বলে কি খাওয়ার আয়োজন
করেছে তাঁরা আজ? বাড়ির ভেতর খতিবরের মা সম্পর্কে দাদা
বলে ডাকে। আওয়াজ না দাদা আজ
খাওয়া দাওয়া নাই। কাজে গিয়েছিলো ছেলে, গৃহস্থ মজুরি দেয় নাই।
সেজন্য
হাটে যেতে পারে নাই। খাওয়া দাওয়াও হয় নাই। শুনে যেন শমসেরর গা কাটা দিয়ে
উঠলো। এতোগুলো
মানুষ না খেয়ে ঘুম
যাবে কি করে। শমসের
থমকে দাঁড়ালো। কি ঘটনা কি
হয়েছে খুলে বলো আমাকে। খতিবর সব কিছু খুলে
বল্লো। তারপর খতিবর কে সাথে নিয়ে
নিজের বাড়িতে আসলেন। রান্না
ঘরে গিয়ে দেখেলন অনেক গুলো ভাত পাতিলে আর তরকারিও ভালো।
মাংসের তরকারি। সবজি
ডাল ভর্তা অনেক খাবার তৈরি করেছে আজ। স্ত্রী সন্তান সবাই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আগে ভাগে। তবুও স্ত্রীকে ডেকে তুললেন। খেয়ছে কি না তাও জানলেন। তারপর স্ত্রীকে খতিবর এর স্বপরিবারের না
খেয়ে থাকার কথা খুলে বল্লেন। স্ত্রী তখন সমস্তগুলো
দিয়ে দিলেন আর শমসের পকেট
থেকে কিছু টাকাও দিলেন আগামীকাল খরচ করে এনে বউ বাচ্চাসহ সবাই
মিলে খাবে। টাকা হলে সুবিধামত আমাকে দিয়ে দিবে। শমসের আলী টাকা আর ফেরত নিয়েছে
কি না খেয়াল করতে
পারে না। গ্রামের
সাধারণ মানুষ তার কথা প্রশংসা করে এখন পর্যন্ত। আর শমসের আলী
কারোর কাছে টাকা পয়সা কর্জ চাইতে অনেক লজ্জা করতো, যদি না
কথা বলে। তা হলে শমসের
ফেরত আসবে কেমনে। যাই হোক শমসের আলী বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ বেঁচে নেই
কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেছে লোকের মুখে মুখে।
রমনীগঞ্জ,
বড়খাতা,
হাতীবান্ধা,
লালমনিরহাট।