নিরাপদ সড়ক অনুচ্ছেদ।নিরাপদ সড়ক চাই প্রতিবেদন।নিরাপদ সড়ক চাই রচনা

নিরাপদ সড়ক
সাদিয়া আফরিন মুক্তা

বর্তমান বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সড়ক দূর্ঘটনা একটি নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।তাই নিরাপদ সড়ক চাই এটা সময়ের দাবি,সারা বিশ্বের মানুষের দাবি।কেননা দূর্ঘটনা কারোর কাম্য নয়।তথাপি সড়ক সবসময় নিরাপদ হয়না।প্রতিনিয়ত সেখানে বেড়ে চলছে মৃত্যুর প্রহসন।দূর্ঘটনা এসে কেড়ে নিচ্ছে নিরিহ শত শত প্রাণ।এটার প্রধান কারণ হচ্ছে নিরাপদ সড়কব্যবস্থার অভাব।আজকাল সংবাদপত্রের প্রতিদিনকার অনিবার্য  বিষয় হচ্ছে সড়ক দূর্ঘটনা। আমরা যখন থেকে আধুনিক সড়কব্যবস্থায় নির্ভরশীল হয়েছি,যান্ত্রিক যানবাহনে ভরশা করছি,তখন থেকেই নিরাপদ  সড়ক চাই এই দাবি অব্যাহত রয়েছে। দিন দিন যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে রাস্তায়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের সংখ্যা। ভোরের রক্তিম আভা পূর্বদিগন্তে প্রস্ফুটিত হতে না হতেই শুরু হয় মানুষের  কর্মব্যস্থতা।আর এই ব্যস্ততা থেকে বিভিন্ন দূর্ঘটনা। কর্মব্যস্ত মানুষগুলো ভোর হতেই বাসা থেকে বেড়িয়ে পরে নিজ নিজ যানবাহন সঙ্গে নিয়ে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে।রাস্তায় এসে জড়ো হয় একসাথে। তখন রাস্তায় শুরু হয় এলোপাতাড়ি ছুটাছুটি, কে আগে যাবে তার গন্তব্যস্থলে।কখনো কেউ কেউ গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়,কেউবা মৃত্যুর দ্বারে চিরদিনের মতো।সড়ক দূর্ঘটনার কারণ হিসেবে কয়েকটি বিষয়কে চিহ্নিত করা যেতে পারে। সেগুলো হলো:অপ্রশস্ত রাস্তা, যানবাহনের প্রচুরতা,ট্রাফিক ব্যবস্থার ত্রুটিপূর্ণতা,ভাঙা রাস্তা, গাড়ির ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিন, চালকের অসাবধানতা ইত্যাদি। এছাড়া ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গ করা,ওভারব্রীজ বা ফুটপাত রেখে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটা, বেপরোয়া গাড়ি চালানো,অদক্ষ চালক বা হেল্পার দিয়ে গাড়ি চালানো,প্রতিযোগিতাপূর্ণ গাড়ি চালনা ইত্যাদি। নিরাপদ সড়কের জন্যে সর্বপ্রথম আন্দোলন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে যা শুরু করেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৯ই জুলাই বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই ছাত্রীর মৃত্যু হলে আন্দোলন আরো বেগবান হয়।২০০৫ থেকে ২০১৮ এর জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ  আর আহত হয়েছে ৬২ হাজার। বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অনুযায়ী, এতে ৫৩%ঘটে গাড়ির অতিরিক্ত গতির কারণে, ৩৭%চাকলের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে এবং ১০%গাড়ির ত্রুটি,পরিবেশ অন্যান্য কারণে। ২০১৮ সালে দেশে চলমান বৈধ গাড়ির সংখ্যা ৩৫,৪২০০০ কিন্তু বৈধ লাইসেন্স দারী চালকের সংখ্যা ২৬,৪০০০০ জন আর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ,৯৯০০০টি।এরা সরকারি নিয়ম বা ট্রাফিক নিয়মকে তোয়াক্কা করে না।এর কারণে মূলত রাস্তা দূর্ঘটনাগুলো ঘটে থাকে।

প্রতিকার:বর্তমান সময়ে সড়ক দূর্ঘটনা একটি আতংকের নাম।এই আতংক এর ভয়াবহ থেকে নিজেদের প্রাণ রক্ষা নিরাপদে রাখতে সরকারসহ সকল জনগণদের এগিয়ে আসতে হবে।এর থেকে সকলকে প্রথমত ট্রাফিক নিয়মকানুন অবশ্যই মেনে চলতে হবে,রাস্তা পারাপারে তাড়াহুড়ো না করা,

রাস্তা পারাপারে ওভারব্রীজ ব্যবহার করা, রাস্তার মাঝখান দিয়ে না হেঁটে ফুটপাত ব্যবহার করা,বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করা,প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভার নিয়োগ করা, গাড়ির ফিটনেট সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রুট পারমিট প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিআরটিএ কে স্বচ্ছতা প্রদর্শন করতে হবে।সড়কগুলো প্রশস্ত করার পাশাপাশি ডিভাইডারের ব্যবস্থা করতে হবে,সর্বোপরি ট্রাফিক আইনকে আধুনিকরণ কঠোরভাবে  কার্যকর করতে হবে,গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাফিক সপ্তাহ উদযাপন করতে হবে,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ডকুমেন্টারী ছবি প্রদর্শণ করতে হবে ইত্যাদি।

পরিশেষে বলা যায়, মানুষের পথচলা যতদিন থাকবে,দূর্ঘটনাও ততদিন থাকবে।আর এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কবলে কে কখন পড়বে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।তাই এই মর্মান্তিক মৃত্যুর অবসানকল্পে সরকারসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে  যথাযথভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই একদিন আমরা দূর্ঘটনামুক্ত নিরাপদ সড়ক পাব স্বাচ্ছন্দে চলাচল করতে পারব ইনশাল্লাহ।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.