বাংলার নববর্ষ
মায়া
রায়
মানুষ
তার একঘেয়েমিকে দূর করার জন্য মাঝে মাঝে আনন্দের আয়োজন করে। এই আনন্দ একা
ভোগ করা যায় না। সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যখন এই আনন্দের যোগ
দেয়, তখন ই তা হয়ে
ওঠে উৎসব। উৎসব মানুষের সৃষ্টি ।উৎসব মানুষের সঙ্গে মিলনের ক্ষেত্র তৈরি করে; মানুষের জীবনে কল্যাণের বাণী বহন করে আনে।
উৎসব বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন সামাজিক উৎসব,ধর্মীয় উৎসব, জাতীয় উৎসব,পারিবারিক উৎসব ইত্যাদি। আর কতগুলো উৎসব
আছে সেগুলোকে জাতীয় উৎসবের আওতায় ফেলা যায়। নববর্ষ হলো বাঙালির জীবনে এমন একটি জাতীয় উৎসব।
পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির
ফলে দিনরাত এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটে। ফলে নতুন বছরের আগমন ঘটে। বছরের প্রথম দিনটিকে আমরা নববর্ষ বলে অভিহিত করি। নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন বছরে আমরা নতুন করে পথ চলা শুরু
করি। পুরনো বছরে যা হয়নি তা
হবে এই
বছরে এই আশা নিয়ে
জীবন পথে এগিয়ে চলি।
প্রাচীনকালে আমাদের দেশে অগ্রহায়ণ মাস থেকে বছরের শুরু হত।কিন্তু বর্তমানে বৈশাখ মাসের প্রথমদিকে নববর্ষের উৎসব পালন করি। পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের প্রথম
দিন টিকে শহরাঞ্চলে এবং গ্রাম অঞ্চলে অনেক জায়গায় বড় বড় মেলা বসে। এই সময় গাজন
বা চড়কের মেলা বসে। কোন কোন জায়গায় যাত্রা, থিয়েটার, গান এবং নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও হয়।কোথায়ও কোথায়ও
বাস্তু পুজো হয় এই দিনটিতে। অনেকে
দরিদ্র ভোজন করায়, মিষ্টি বিতরণ করে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে বেশি চোখে পড়ে ব্যবসায়ীদের হালখাতা। দোকানে দোকানে গণেশ পুজো হয়। ক্রেতারা বাকি টাকা মিটিয়ে মিষ্টিমুখ করে বাড়ি ফেরে এই দিনটিতে। সকলের
মধ্যে বিরাজ করে খুশির আমেজ।
বর্তমানে গ্রাম ও শহর অঞ্চলের
উভয় ক্ষেত্রেই উৎসব-অনুষ্ঠানে পদ্ধতিগত পরিবর্তন এসেছে।পূর্বে এই সব উৎসব
ধর্মীয় অনুষ্ঠান রূপেই পালিত হত। বর্তমানে ধর্মীয় উৎসব পরিণত হয়েছে জাতীয় উৎসবে। অন্য সকল জাতীয় উৎসবের ন্যায় নববর্ষের দিনটিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়।কোথায় কোথায় চড়ুইভাতি, ভ্রমণ পর্ব চলে।
আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে তথা জাতীয় জীবনে নববর্ষ উৎসবের প্রয়োজন আছে। নতুনের দিকে দৃষ্টি রেখে জগত সংসার এগিয়ে চলে। মানুষ নববর্ষ উৎসবের মধ্য দিয়ে নবচেতনা লাভ করে, দুঃখ-কষ্ট ভুলে আগামী দিনগুলিকে সফল করার স্বপ্ন দেখে।
বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি। উৎসবের মধ্য দিয়ে সকলকে সে আপন করে নেয়। কিন্তু কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের অন্তরের রূপটি ও ক্রমশ যেন ম্লান হয়ে উঠছে। আন্তরিকতার পরিবর্তে আত্মকেন্দ্রিকতা প্রাধান্য লাভ করছে। বর্তমানে নববর্ষের সুন্দর রূপটি ক্রমে ক্রমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নববর্ষের উৎসব এমন ভাবে করতে হবে যাতে মানুষের অন্তরের স্পর্শ থাকে। দুঃখভারাক্রান্ত রাতকে ভুলে মানুষ অনাবিল আনন্দের স্পর্শ পায়। নববর্ষ হল নতুন করে চলার দিন। চলার পথকে সার্থক করে তুলতে চাই উদার ও কলুষতা মুক্ত মন। এবং এই মনের মানসিকতা এনে দেয় সার্থক নববর্ষ উৎসব।