অগ্রীম শুভ নববর্ষের শুভেচ্ছো
নববর্ষ উদযাপন বাঙালির প্রাণের উৎসব। ঢাকের তালে প্রাণে লাগে দোলা। শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উৎসবটি উদ্যাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল "শুভ নববর্ষ"। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে "মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য" হিসেবে ঘোষণা করে।
সম্মানিত পাঠক আপনাদের মাঝ তুলে ধরছি বৈশাখের সেরা কবিতাগুলো চলুন দেড়ী না করে পড়ি।
বৈশাখী
মেলা
শংকরী সাহা
যাবে
সবাই বৈশাখী মেলায়,
সেজেছে
সবাই ফুলের গহনায়,
আয়রে
আয় কে যাবি আয়
আয়রে বৈশাখী
মেলায়।
নেই
কোন বাঁধা নেই কোন মানা,
ডাকছে
যে তাই ভালোবাসায়,
চল
যাবি চল বৈশাখী মেলায়,
ওঠে
সবাই নাগর দোলায়।
আনন্দে
ঘোরে সবাই বৈশাখী মেলায়,
কেনে
সবাই মাটির খেলনা তালপাতার বাঁশি
বৈশাখী
মেলা তাই তো ভালোবাসি,
কেনবো
আমরা কাঁচের চুরি
পরবো
চুরি দুই হাত ভরি।
চুরির
রিনিঝিনি শব্দে সবার ঘুম ভাঙবে,
প্রভাতী
হাওয়ায় সবাই মন জুড়াবে,
আমার
মনে খুশির দোলা লাগবে।
চুরির
রিনিঝিনি শব্দে মাকে মনে পড়বে,
মায়ের
হাতের চুরির রিনিঝিনি শব্দে
আমার
ঘুম ভঙতো অনবিল শান্তি পেতাম মনে
মায়ের
হাতের সেই রিনিঝিনি শব্দ,
আজও বাজে
আমার মনের মাঝে।
তাই
তো মাকে খুব মনে পড়ে,
কে
যাবি আয় বৈশাখী
মেলেয়,
দেখি
ফিরে স্মৃতির বৈশাখী মেলায়,
যেখানে
খুঁজে পাবো কিশোরী বেলার গল্প।
বৈশাখী
মেলায় যেতাম ঠাকুমার হাত ধরে,
যেতাম
সবে নতুন জামা পরে আজও মনে পড়ে,
কিনতাম
সবাই মাটির খেলনা,
ঠাকুমার
কাছে করতাম বায়না,
এখন
আমরা বাড়ি যাবো
না,
আরো
কিছুক্ষণ মেলায় থাকিনা।
ঠাকুমা
হেসে বলতো ঠিক আছে,
মেলায়
আরও ঘুরবি ঘোর না,
তোর
যা ইচ্ছা হয় কর না,
পুতুল
নাচ দেখবো আমরা করতাম বায়না,
অনেক
আনন্দ ছিলো বৈশাখী মেলায়,
মন থেকে কখনো কি ভোলা যায়।
বৈশাখী
মেলা
শওকত
কামাল বাবুল
হয়
যখন যুগ পরিবর্তন,
আসে
নতুন রীতি।
দাদার
আমলে শুনতো সকলে,
বসে
পুঁথি গীতি।
খেলতো
লোকজন সে তখন,
হাডুডু
খেলা।
বাবার
আমলে খেলতো সকলে,
ফুটবল
বিকেল বেলা।
যাত্রাপালা
রাত্রি বেলা,
দেখতো
লোকজন।
যাত্রার
রীতি হারিয়েছে গতি,
নেই
আর এখন।
আমাদের
আমল আসে নতুন চল,
ব্যাট
বলের খেলা।
খেলছি
সকালে খেলছি বিকালে,
ক্রিকেট
সারা বেলা।
টিভির
নেশা বড় এক নেশা,
দেখছি
মধ্য রাত।
মায়ে
বকুনি দিতো যখনি,
শুয়েছি
না খেয়ে ভাত।
ফেসবুকের
জামানা বড় পর্দা দেখেনা,
মোবাইলে
চলে কাজ।
একটি
রীতি হারায়নি গতি,
বেঁচে
আছে আজ।
প্রাচীন
কালচার উভয় বাংলার,
বৈশাখী
মেলা।
পহেলা
বৈশাখেতে আজও বসতে,
দেখি
গাছ তলা।
করে
কেনাকাটা দেখি বাপ বেটা,
বৈশাখী
মেলায় গিয়ে।
উঠে
লোক প্রভাত খায় পান্তা ভাত,
ইলিশ
ভাজা দিয়ে।
বৈশাখী মেলার প্রাঙ্গণ
মোহাম্মাদ নাঈম কাকন
হে বাংলার ঐতিহ্য ধর্ম নির্বিশেষে
বৈশাখী মেলা
ছোট
বড়ো বৃদ্ধ আবাল মনের সানন্দে ঘুড়ে বেড়াই
তোমার
প্রাঙ্গণ নিত্য বছর কতো তীক্ষ্ণ বেলা অবেলা।
উদার চিত্ত
রঞ্জন পুলক নয়ন মুখরিত
মনের হরষে
তোমার চমক
প্রাঙ্গনে চরক, ম্যাজিক,হোন্ডারদোল
জীবন
ঘন্টার নিত্য রুটিন ভুলে যাই তোমার পরশে।
কাল
থেকে মহাকাল বৃক্ষের মতো বাঙ্গালীর শিকর
তোমার বন্ধনে বন্ধুত্বের দীড়তার
গজায় শক্ত হাত
কেনা
কাটার কমপিটিশন চলে ব্যস্ততার চাঞ্চল্যকর।
তুমি
ছোট্ট শোনামনির বায়নার কতো যে মূর্তী খেলা
তুমি
কুমারী অঙ্গনা সুভাসিনী নারীর হরিনী আঁখিপট
তাই
তোমাকে বাদ দিয়ে একটি বছর যায়না ভোলা।
তুমি
বাঙ্গালীর ভ্রাতৃত্বের দিগন্ত জয়ী এক শুভ সুচনা,
তোমায়
নিয়ে যে কতো ফটোগ্রাফি
কবিতা গান নৃত্য
কতো
কবির গল্প,প্রবন্ধ,নাটক উপন্যাস কলম বন্দনা।
তুমি শতো পলক
পদধ্বনির কম্পিত উত্তাল
দুপুর
তোমার
আগমনি নিমন্ত্রণ দোলায় কতো পথিক বাউল
খুঁজে
পায় স্মৃতির
অতলে হারানো দিনের সেই সুর।
দুর
থেকে দুর প্রান্ত সুদুর গাও গঞ্জ গ্রাম থেকে শহর
রিস্কা,সি এন জি,
টয়টা দুর পাল্লা বাস চড়ে যে আসি
হৃদয়
উম্মাদনার উৎসবে হই সমাগম জনতার
নহর।
হিন্দু,
বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম নান্দনিক আলিঙ্গনে
কোন
ভেদাভেদ কোন হিংসা কোন লজ্জাহীনতা নেই
যোগসূত্র
আত্মার সম্পৃক্ত মোরা একই মাতৃগর্ভটানে।
একটু
একটু জন্মায় বিস্বাসি বন্ধু চিরাচরিত ধ্রুবমান
নীলাভ শান্ত আকাশের
মতো ভ্রাতৃত্বের ঘাঢ়ো বন্ধন
হে বাংলার
বৈশাখী মেলা, জানাই তোমায়
সম্মান।
বাংলা
নববর্ষ
কল্পনা দাস
চৈত্র
শেষে বৈশাখ দিয়ে শুরু বাংলা নববর্ষ ।
নববর্ষকে
বরণ করতে সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানায় বৈশাখের প্রথম দিন হয় সজ্জিত ।
মঙ্গল
শোভযাত্রাসহ বর্ণিল সব আয়োজনে পালিত হয়
বাংলা নববর্ষ।
পহেলা
বৈশাখ বাঙালিদের ঐতিহ্য।
এই
দিনে বাঙালিদের বাঙালি ছাড়া অন্য কোনো পরিচয় নেই।
সাম্প্রদায়িকতার
প্রলয় ভেঙে,
জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালির
মিলন
হয় এই দিনে।
শহর,
গ্রাম সর্বত্রই নববর্ষের উৎসব
নানান
জায়গায় বসে বৈশাখী মেলা
শুভ
দিন মেনে ব্যবসায়ীরা করেন হালখাতা।
পুরানো
বছরের যশ যেনো
নতুন
বছরেও থাকে , তাইতো বাঙালির ঘরে ঘরে হয় পান্তা ইলিশ
খাওয়ার উৎসব।
কালের
বিবর্তনে অনেক কিছু বিলীন হলেও
বাংলা
নববর্ষ মনে করিয়ে দেয়
বাঙালির অতীত ঐতিহ্য, সৌহার্দ্য আর প্রীতি।
শুভ
নববর্ষ
মোহাম্মদ
ইছা (জাসেদ)
জানাতে
পারিনি তোমায়
নববর্ষের
শুভেচ্ছা,
দিতে
পারিনি ফুল
যদিও
মনে ছিল প্রবল ইচ্ছা ।
বাসন্তি
শাড়িতে তোমায়,
কেমন
লাগছিলো দেখিনি তা আমি,
চুলে
গাঁধা ফুলের বেনী,দুহাতে মেহেদি কি
দিয়ে
ছিলে তুমি ?
কেমন
করে কেটেছে তুমার সারাদিন?
গিয়েছিলে
কি মেলায় বেড়াতে?
নাকি
আনমনে কেঁদে ঝড়িয়েছ জল
তোমারি
মনের অজান্তে ।
আমাকে
দিতে কি কিনে ছিলে
ফুল
বৈশাখী
মেলা থেকে?
নাকি
দিতে পারবেনা ভেবে
ফুল
আবার দিয়েছ রেখে ?
এমনও
তো হতে পারে,ঘড়ে বসেই তুমি
কাটিয়েছ
সারা বেলা।
সাদা
কালো মেঘের লুকোচুরি দেখছিলে
বাতায়ন
রেখে খোলা ।
এসব
কথা ভাবছি যতই
বাড়ছে
মনে কষ্ট।
হঠাৎ
মোবাইলটা বেজে উঠল .''হ্যালো"
তুমি
বললে শুভ নববর্ষ............
নববর্ষ
️ হিমাংশু সামন্ত
ঋতুরাজ
বসন্তের মনখানি খুব ভারি ,
বিদায়ের
সময় হল দিন গুনছে
তারি ।
সূর্যদেব
সকাল থেকেই চোখ রাঙায় ,
বসন্ত
এবার ব্যকুল হয়ে নেবে বিদায় ।
নীলপূজো
, শিবের গাজন হলেই শেষ ,
চৈত্র
এখন চলে যাবে অজানা এক দেশ ।
বৈশাখ
এবার আসবে নতুন রূপে গন্ধে ,
বর্ষ
বরণ করবো সবে নেচে উঠি ছন্দে
।
হালখাতা,
বৈশাখী মেলা উৎসব শুরু হবে,
নতুন
ক্যালেণ্ডার মিষ্টান্ন নিয়ে ফিরবো সবে ।
নতুন জামা কাপড় পরে ঘুরবো সারাদিন ,
সেই খুশিতে মনটা তাই নাচবে তা ধিন ধিন ।
বৈশাখী মেলা
- নীললোহিত গৌতম
জীবনের চাওয়া ও পাওয়াগুলো এসে মিলিত হয় মেলাতে।
আর কোথাও চাইলে আমরা পাবই এমন আশা করলে ভুল হবে।
মেলা মানে বহু মানুষ, হৈ-চৈ, রকমারী পণ্য ও খাবার—
মন যা চায় তাই খুঁজে পাবে।
মনের ইচ্ছাগুলো মেলার রঙে সেজে ওঠে
এতদিন যা খুঁজেছিলে তা কেউ দোকান সাজিয়ে বসে আছে।
বৈশাখী মেলায় আমরা গিয়েছিলাম ঘুরতে।
কিছু কিনবো বলে ঠিক ছিলো না,
তবু কেন জানি
মেলায় রকমারী জিনিস দেখে তোমার ইচ্ছে হল অনেক কিছুই নিজের করে পাওয়ার?
আমারও ইচ্ছে ছিল কোনদিন তুমি আমার কাছে কিছু চাইবে।
তোমার মনের মত জিনিস খুঁজে পেয়ে অনেক কিছুই আবদার করলে,
আমি তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করেছিলাম—
এটাই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া।
আমাদের চাওয়া ও পাওয়াগুলো পূর্ণ হয়েছিল বৈশাখী মেলাতে।